এক প্রকল্পেই বিদেশ নির্ভরতা শূন্যের কোটায়

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৪, ০২:২১ পিএম

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ১২৭টি হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় আনার মাধ্যমে দেশে কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি প্রবর্তনের সূচনা হয়। ২০০২-০৩ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি ১ম ফেজ অনুমোদিত হয়।

১ম ফেজ এর কর্মকাণ্ড সম্পাদনের পর পরবর্তীতে ২০০৯ সালে প্রকল্পের ২য় ফেস অনুমোদিত হয়। ৩য় পর্যায়ে এসে বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অন্যতম সফল প্রকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্প।

এ প্রকল্প দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দেশে এখন গরুসহ পশু উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানিও করা হচ্ছে।

এক দশক আগেও কোরবানিতে ভরসার অন্যতম জায়গা ছিল ভারত। কোটি পশু জবাইয়ে ভারত-মিয়ানমার থেকে আনা হতো গরু। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়৷

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যকর পদক্ষেপে গরু আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তই হয়েছে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। বাংলাদেশ গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গরুর মাংস রপ্তানিও শুরু করেছে৷ দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হিমায়িত গরুর মাংস দেশের বাইরে রপ্তানি করছে। সারাবছরই গরুসহ গবাদিপশুর চাহিদা থাকলেও গবাদি পশু বিক্রির সবচেয়ে লাভজনক বাজার বিবেচনা করা হয় ঈদুল আজহার মৌসুমকে।

২০২১ সালে ঈদুল আজহায় ৯০ লক্ষাধিক পশু কোরবানি হয়। ২০২২ সালে তা ৯৯ লক্ষ্যে এবং ২০২৩ সালে তা ১ কোটি ৪১ হাজারকেও ছাড়িয়ে যায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য জায়গায় ছিল গরু কোরবানির সংখ্যা। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক গরু কোরবানি হয়।

গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে কোনো গরু আমদানি করা না হলেও ঈদুল আজহাসহ সারাবছরের প্রয়োজন মিটিয়ে এসেছে দেশীয় গরু। প্রতিবছরই প্রয়োজনের অধিক সরবরাহ ছিল, নিয়মিত হচ্ছে রপ্তানিও। গরু ছাগলের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে, দেশ এখন গরু-ছাগলে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ আর এই জায়গায় বড় ভূমিকা রেখেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পশুর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় গরু ভারত ও আমেরিকার থেকে আমদানিকৃত শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান সিমেন ব্যবহার করে দেশি গরুর কৌলিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এসব কাজে নিয়োজিত থেকে দেশের জনসাধারণ আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সহযোগিতা পাচ্ছে।

নারীরা প্রকল্পের অধীনে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে নারীর ক্ষমতায়ন।

প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে আধুনিক কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও সিমেন উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে। খামারিদের কষ্ট লাঘবে ডিজিটালাইজেশন আনা হয়েছে প্রকল্পে। ফোন করলেই পাওয়া যায় কৃত্রিম প্রজনন সেবা। কৃত্রিম প্রজননের ফলে গরুর উৎপাদন সহজতর ও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশের জনগণের দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করেও অর্জন করা যাচ্ছে বৈদেশিক মূল্য।

সিমেন উৎপন্নের জন্য রাজশাহী, সাভার, চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরে ৪টি ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। ডোরস্টেপস সেবার জন্য দক্ষ প্রজনন কর্মী তৈরি করতে ৬ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে হাজার হাজার প্রজনন কর্মী তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. জসিম উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, চার হাজার ইউনিয়নে কৃত্রিম প্রজনন কর্মী তৈরি করা হয়েছে। সিমেন তৈরির জন্য দেশে চারটি ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। এসব ল্যাব থেকে বছরে ৪৭ লক্ষ সিমেন উৎপন্ন করা হচ্ছে। সারা দেশের গরুকে প্রজনন করাতে সরকারি সংস্থা প্রয়োজনীয় ৬০% সিমেন উৎপন্ন করছে। সিমেন ও প্রজনন সামগ্রী কর্মীর হাতে ধারাবাহিকভাবে পৌঁছে দিতে ২১ জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে ২১টি গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে ১০ বছরে মাংস দুধের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছে দেশ।

তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরে আমদানি ছাড়াই প্রত্যেকটি কোরবানির হাটে ছিল আমাদের দেশীয় গরুর প্রাচুর্য। যা আমাদের প্রকল্পের অন্যতম বড় সফলতা বলে মনে করি। পুষ্টিসমৃদ্ধ উন্নত জাতি গঠন, খামার স্থাপনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মূদ্রার্জনের মাধ্যমে উন্নতদেশ বিনির্মাণে এই প্রকল্প তার সবটুকু দিয়ে কাজ করেছে।

ইএইচ