‘সুশৃঙ্খল সুরক্ষিত মহাসড়ক’— এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হাইওয়ে পুলিশ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মহাসড়কে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, চোরাচালান ও মাদক দমনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটের প্রতিটি সদস্য। এছাড়াও দুর্ঘটনা রোধে সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ মোটরযান, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধেও সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে ব্যাপক কার্যক্রম। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ভিডিও সম্বলিত আধুনিক স্পিডগান ব্যবহারে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের ফলে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে সড়ক দুর্ঘটনাও। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন, মহাসড়কভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রমে গতিশীলতা ও শৃঙ্খলা আনতেই ২০০৫ সালের ১১ জুন বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, মহাসড়কে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং সর্বোচ্চ পুলিশি সেবা প্রদানে সদা তৎপর হাইওয়ে পুলিশ। এই ইউনিটের সদস্যরা দায়িত্ব পালনের সময় আধুনিক বডি-ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহারের পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ আপডেটসহ ‘হ্যালো এইচপি অ্যাপ’ চালুর মাধ্যমে সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের সহায়তা প্রদান করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেমের অংশ হিসেবে ‘হাইওয়ে পুলিশ কমান্ড অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার’ স্থাপনের মাধ্যমেও সেবা দানের প্রক্রিয়াকে করছে গতিশীল। ইতোপূর্বে ঈদে ঘরমুখী মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে মহাসড়কে যানজট নিরসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হাইওয়ে পুলিশ। চাঁদাবাজমুক্ত হাইওয়ে গড়ে তুলতেও বদ্ধপরিকর হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা আমার সংবাদকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নধারণ করে আজ সমৃদ্ধির সোপানে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। সেই যাত্রায় বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়ক ব্যবস্থাকে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের মহাসড়কের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সেবা ও উন্নয়নে সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ।
সার্বিক সফল কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই গৌরবময় সেবার ১৮ বছর পেরিয়ে ১৯ বছরে পদার্পণ করেছে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটটি। আজ মঙ্গলবার উদযাপিত হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই হাজার ৯৯১ কিলোমিটার মহাসড়কে শুধু ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, চোরাচালান ও মাদক দমনই নয়, মানুষের চলাচল ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, নিরাপদ সড়ক-মহাসড়ক নিশ্চিতকরণ, দুর্ঘটনা রোধের পাশাপাশি চালক-হেলপার ও সড়ক ব্যবহারকারীদের সচেতন করাসহ পেশাদারিত্বের সঙ্গে আইন প্রয়োগে কাজ করে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। এছাড়া মহাসড়কে যাত্রীদের বিরতির স্থানগুলোতে পার্কিং লটের দেখভাল এবং পেট্রোল পাম্পগুলোর নিরাপত্তায়ও কাজ করছে তারা।
রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতে হাইওয়ে পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে জানিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পালিত সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, হাইওয়ে পুলিশকে আধুনিকায়নে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০টি হাইওয়ে আউটপোস্ট নির্মাণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে চট্টগ্রাম সিটিগেট পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার এলাকায় অত্যাধুনিক ডাটা সেন্টার ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সহকারে সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেমও স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে মহাসড়কে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি হ্রাস পাবে ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বৈদেশিক পণ্য রপ্তানি পরিবহনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে দেশের রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে হাইওয়ে পুলিশ— এমন প্রত্যাশাও করেন তিনি।
এছাড়াও চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর, নির্মাণাধীন মহেশখালী মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন, সরকারি ও বেসরকারি ১০০টি ইকোনমিক জোন, নৌ-বন্দরসমূহের সংযোগ সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রসহ মহাসড়কের সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতেও হাইওয়ে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।