সংসদে অর্থ বিল উঠছে আজ, বাজেট পাস রোববার

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৪, ০৯:৫২ এএম

 জাতীয় সংসদে বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই অর্থ বিল উত্থাপন হচ্ছে আজ। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেট পাস হবে আগামীকাল রোববার, যা সোমবার নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন কার্যকর হবে।

এর আগে ৬ জুন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

ওই সময় উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোয় উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটছে না বলে সূত্রে জানা গেছে। এবারের বাজেটে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি। এ নিয়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে নানা মহলে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হলেও এ প্রস্তাবে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না।

বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বসানোর কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আপত্তি থাকলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। সংশোধনী বাজেটে আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা লাভের ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে আভাস পাওয়া গেছে। এর ফলে পতনের মধ্যে থাকা বাজার আরো খারাপের দিকে যাবে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ এ কর বাতিলের দাবিতে বিবৃতিও দিয়েছে। যদিও এনবিআর এ কর প্রত্যাহার করবে না বলে জানা গেছে।

সংসদে বিরোধী দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক হিসেবেই দেখছেন। তাদের ভাষ্যমতে, অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় এতে কোনো নতুনত্ব আনা হয়নি।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটি একটা গতানুগতিক বাজেট। এতে নতুনত্বের কিছুই নেই। সেই কালো টাকা সাদা, সেই আয়-ব্যয়-রাজস্ব, নতুন কিছুই নেই। দুর্নীতি প্রতিরোধ বা জবাবদিহিতার কোনো অপশন নেই।’

তবে নতুন অর্থ বিলে আয়কর ও কাস্টমস সংক্রান্ত সামান্য কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোর কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ এসব অঞ্চল ও পার্কের কর অবকাশ সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্কও আগের মতো শূন্য শতাংশ রাখা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ বা উন্নয়নের জন্য ডেভেলপারদের আমদানি করা যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিতেও ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত সপ্তাহে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর সুবিধা প্রত্যাহারসহ ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এসব সুবিধা বহাল রাখার নির্দেশনা আসে। 

এছাড়া সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন নাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজেট উত্থাপনকালে সব নাগরিককে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে সংসদ সদস্যদের চাপে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবটি টেকার সম্ভাবনা কম বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি থেকে সরে আসার একটা প্রয়াস দেখা গেছে। ঘাটতি বাজেটও ৫ শতাংশের ঘরে ধরে রাখা হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও পূরণ হবে না। এটা ৭ শতাংশ হলেও আমি খুশি।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সংসদের বাজেট আলোচনায় আমরা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অপচয়ের জৌলুস নিয়ে কথা বলেছি। গ্রামে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের দুর্ভোগের কথা বলেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় বাধ্যতামূলকভাবে ডাক্তারদের দুই বছর নিয়োগের বিধান করতে বলেছি। যতটা পেরেছি যেসব বিষয় বলা দরকার, সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি। সর্বোপরি একটি ধারাবাহিক বাজেট পাস হতে যাচ্ছে।’

বিআরইউ