ছাত্র-জনতা রাজনীতিবিদসহ সর্বস্তরের মানুষকে আমি অনুরোধ করবো পুলিশ ছাড়া কোনো সমাজ চিন্তা না করতে। পুলিশ ছাড়া কোনো দেশ হয় না। পুলিশের যে অতীতের ভুলভ্রান্তি দোষ-ত্রুটি রয়েছে তা দূর করে আমরা জনগণের সেবায় নিয়োজিত হবো আবারো। তাই আপনাদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, পুলিশকে সহযোগিতা করুন। পুলিশ সদস্যদের কাজ-কর্মে ফিরে আসার জন্য পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা করুন।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাত ৮টায় রাজারবাগে পুলিশের ঊর্ধতন ও অধস্তন কর্মকর্তাদের নিয়ে যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, বর্তমানে পুলিশের ‘ফোকাল পার্সন’ অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) এ কে এম শহিদুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর নজিরবিহীন সংকটে পড়া পুলিশের ফোকাল পার্সন হিসেবে কাজ শুরু করেছেন পুলিশের এই অতিরিক্ত আইজিপি (টেলিকম) এ কে এম শহিদুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের পর পুলিশ প্রথম আক্রান্তের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এ সময় অনেক থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা ফোন করে হাইকমান্ডের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু হাইকমান্ডার কেউ রেসপন্স করছিলেন না। পুলিশের যে শক্তি সাধারণ সদস্য যারা তাদের পাশে হাই কমান্ড থাকেনি। বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এর প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। এখানে যদি পুলিশের চেইন অফ কমান্ডের বা কমান্ড লেভেলে যারা আছেন তাদের কাজকর্মে কোনো গাফিলতি পরিলক্ষিত হয় অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি বলেন, পুলিশ অবশ্যই বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী। পুলিশ ছাড়া আসলে এই সমাজ ব্যবস্থা চিন্তা করা যায় না। যে ক্রাইসিসে আমরা পড়েছি সেটি থেকে উত্তোরণের চেষ্টা আমরা করছি। আমরা খুব দ্রুত পুলিশের চেইন ও কমান্ড এস্টাবলিস্ট করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ডিএমপির বিভিন্ন থানা এলাকায় সাধারণ পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হয়েছেন। যাদের মরদেহ বিভিন্ন থানায় পড়ে রয়েছে, আমরা তাদের উদ্ধারে চেষ্টা করছি। নিহত অনেককেই আমরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নিয়ে এসেছি। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মরদেহ দাফনের জন্য নিজ নিজ ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। আমরা একটা ক্রান্তিকাল পার করছি। আমি আমার সহকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করবো, বাংলাদেশের যে প্রান্তেই আপনারা থাকেন ধীরে ধীরে আপনারা নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করুন। ইউনিট কমান্ডারদের অনুরোধ করবো ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনারা যার যার কর্মস্থলে নিয়োজিত হওয়ার অব্যাহত রাখবেন।
কর্মবিরতির একটা গুজব সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে উল্লেখ করে এই অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু জনগণের জন্যই কাজ করে। পুলিশ ছাড়া আমারা কোনো সমাজ চিন্তা করতে পারি না। সুতরাং আমাদের পুলিশ সদস্যদের আবারো অনুরোধ করবো আপনারা এ সমস্ত গুজবে কান না দিয়ে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে আপনারা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করবেন।
এখন পর্যন্ত কতজন পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো তথ্য সংগ্রহ করছি। বিষয়টি চলমান তাই হালনাগাদ করা হয়নি। তবে আজ আমরা যাত্রাবাড়ী থানা থেকে আটটি মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। আমাদের টিম বিভিন্ন থানায় থানায় কাজ করছে। থানা থেকে মরদেহ বা হতাহতদের উদ্ধারের কাজ চলমান রয়েছে।
ডিএমপিতে কতজন নিখোঁজ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিএমপিতে আমরা এখন সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারছি না। এটা নিয়ে ব্যস্ত আছি।
গতকাল পর্যন্ত আমরা যেসব ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দেখেছি আইজিপিসহ তারা এই মুহূর্তে কোথায়? জানতে চাইলে পুলিশের এই ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করা এ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো অবহিত নই।
আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি অনেকে কর্ম বিরতির কথা বলে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তারা বলছেন, সিনিয়র স্যারদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করবেন না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ক্রাইসিসে আমরা পড়েছি সেটি থেকে উত্তোরণের চেষ্টা আমরা করছি। আমরা খুব দ্রুত পুলিশের চেইন ও কমান্ড অ্যাস্টাবলিস্ট করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
পুলিশে যারা উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন তাদের জন্য বার্তা হলো, সংশ্লিষ্ট এলাকার সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা করছি। ছাত্র জনতার প্রতি অনুরোধ, আপনাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য থাকলে পুলিশকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ।
আরএস