বক্তব্য দেওয়ার সময় ৫ আগস্টের গণভবন ও সংসদ ভবনের চিত্র মাথায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শেখ হাসিনার বিচারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সতর্ক করে দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্র জনতাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, একই সাথে যারা উপদেষ্টা আছেন, আজকে অনেক উপদেষ্টাকে দেখছি খুনিদের পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিতে। আমরা সেই সব উপদেষ্টাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন। সুতরাং কখন কোন বক্তব্য দেবেন, আপনার সামনে যেন ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্রটা মাথায় থাকে।’
হাসনাত বলেন, ‘আপনার সামনে যেন ৫ আগস্টের পার্লামেন্টের চিত্রটা মাথায় থাকে। যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, যারা খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের বক্তব্য দিতে চায়, আমরা ছাত্র জনতা যেভাবে তাদেরকে উপদেষ্টা বানিয়েছি ঠিক একই ভাবে গদি থেকে ছুঁড়ে নামাতেও দ্বিধাবোধ করব না।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। ছাত্র জনতার গণ আন্দোলন প্রতিহত করতে গিয়ে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগে হতাহতের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে আসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছে, ‘আপনি দেশে আসেন। এটা আপনার দেশ। হু স্টপস ইউ?’
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে সাখাওয়াত বলেন, ‘যিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) এই দেশ স্বাধীন করেছেন, উনি স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওনার দল এভাবে ভেঙে যাবে.. আমি তাদের (আওয়ামী লীগ) আশা দিচ্ছি, কথা দিচ্ছি—দল গুছিয়ে নেন। আপনাদের কেউ ব্যান করেনি।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পরপরই ছাত্র জনতা গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া এল।
বিক্ষোভ সমাবেশে তিনটি দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত। তিনি বলেন, ‘যারা খুনিদের পুনর্বাসন করতে ব্যাকস্টেজে ম্যাকানিজম করছেন, আপনাদের বিষদাঁত আমরা ভেঙে দেবো। আমরা সচেতন করে দিতে চাই উপদেষ্টাদের, সচেতন হয়ে যান নাহলে আপনাদের ছাত্র জনতা প্রতিহত করবে। সুতরাং খুনিদের পুনর্বাসনের কোনো ধরনের চিন্তাও আপনারা করবেন না।’
গণমাধ্যমকে সতর্ক করে দিয়ে হাসনাত বলেন, ‘২ নম্বর আহ্বান মিডিয়ার প্রতি। গণমাধ্যমের সাথে আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, আছে, থাকবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু কিছু গণমাধ্যম খুনিদের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে, আমরা হুশিয়ার করতে চাই, জনতার কাতারে নেমে আসুন। নতুবা দেখা যাবে, অনেক গণমাধ্যম শেষ দিকে এসে তাদের বুমের মধ্যে লোগো লাগিয়ে জনতার কাতারে আসতে পারেনি। আপনাদের ভবিষ্যৎ যেন সেরকম না হয়।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানান সমন্বয়ক হাসনাত। তিনি বলেন, ‘সবশেষ বলতে চাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খুনি হাসিনাকে প্রধান আসামি করে এবং অন্যান্য যারা আছেন সহযোগী তাদেরকে আসামি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি মামলা দায়ের করতে হবে। রক্তের দাগ এখনও শুকায় নেই, বাতাস থেকে এখনও রক্তের গন্ধ যায়নি। আপনাদের স্পর্ধা হয় কি করে? আপনারা জনতাকে অস্বীকার করে খুনিদের পুনর্বাসন করবেন?’
আরএস