রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ফলে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্নিনিকগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রাম পর্যায়ে টিকা দান, পরিবার পরিকল্পনা, জন্মনিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও সেবা দেওয়ার কথা কিন্তু কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (CHCP) দায়িত্বে অবহেলা এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার তদারকি এবং অনিয়মিত অফিস করার কারণে গ্রামের বৃহৎ জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, দূরত্ব বুঝে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ছয় হাজার মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা। ওই সকল ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার কথা থাকলেও মানুষ পাচ্ছে না মানসম্মত চিকিৎসাসেবা এমনকি প্রতিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) থাকার কথা। তবে বেশির ভাগ ক্লিনিকেই সিএইচসিপিরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই দিন আসেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা এছাড়া, উপজেলার ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের বেশির ভাগই বেহাল। সেবা নিতে আসা রোগীদের ২৭ থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করার কথা থাকলেও ৩ থেকে ৪ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয় অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে।
সেবা নিতে আসা স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা সপ্তাহে ৩/৪ দিনের বেশি ক্লিনিকে আসেন না যদিও আসেন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে এলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তারা ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যায়। অনিয়ম ও অযত্ন-অবহেলায় চলছে ওই সকল ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম। বর্তমানে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যেন নিজেরাই রুগ্নবস্থায় পড়ে আছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. সাদিকাতুল তাহিরিণ লিজা ৫ আগষ্ট, ২০২৩ যোগদান করার পর থেকে নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনা শুরু হয় কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো নিয়মিত তদারকির অভাবে ক্লিনিকগুলো নিজেই রোগী, ডাঃ সাদিকাতুল তাহেরিণ লিজা (কোর্ড-১৩৩০৬৯) আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) রংপুর জেলা কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ায়, সেই ক্ষমতার দাপটে তিনি যা খুশি তাই করেছেন। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় (মার্চ ২০২৩ থেকে জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত) ৫ মাসে ১১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তিনি ছুটি নিয়েছেন ৫৮দিন, উপস্থিত ছিলেন ৪৭দিন,তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ জন সিনিয়র ডাক্তার এবং স্থানীয় এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করে। সেই অভিযোগের লোক দেখান তদন্ত কমিটি করা হলেও সেই তদন্তের রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।
এরপর চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জন রংপুর ডা. মো. মোস্তফা জামান চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর সরবচেয়ে জুনিয়র ডাক্তার আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মেহেদি হাসানকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়।বর্তমানে তিনি রংপুর সিভিল সার্জন অফিসে ন্যস্ত করা থাকলেও সরকারি গাড়িটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জমা না দিয়ে বীরদর্পে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার ও হাসপাতালে প্রত্যেকটা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত প: প: কর্মকর্তা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদী হাসান জানান, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আবাসিক মেডিকেল অফিসারের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছি এছাড়া আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করিতেছি কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো ভিজিট করার জন্য কিন্তু যানবাহনের সমস্যা কারণে সব ক্লিনিকগুলো ভিজিট করা আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর হচ্ছে।
বিআরইউ