বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালককে শিল্প গ্রুপ বেক্সিমকোর রিসিভার (প্রশাসক) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। রিসিভার বেক্সিমকোকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিলে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (১৭ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কার্যক্রমের অগ্রগতি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে সচিব এ কথা জানান।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। আগে তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও ছিলেন। গত ১০ নভেম্বর আসিফ মাহমুদকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে গাজীপুর মহানগরের সারাবো এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব বলেন, প্রতি মাসে বেক্সিমকোর বেতন-ভাতা বাবদ ৮২ কোটি টাকা দিতে হয়। আমরা দ্রুত বেক্সিমকোতে প্রশাসক নিয়োগ করবো। আজকের প্রধান উপদেষ্টা স্যার তার দপ্তরে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে মিটিং করেছেন। সেখান থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি এটার পর বাণিজ্য ও অর্থ উপদেষ্টা স্যারসহ বসে এই মুহূর্তে যে অসন্তোষ আছে, সেটা কিভাবে সমাধান করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করবো।
তিনি বলেন, গতকালকে গভর্নরের সঙ্গে দেখা হয়েছে। উনারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, এই জিনিসটা সমাধান হয়ে যাবে যখন একজন প্রশাসক পুরোপুরি এটা নিবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালককে প্রশাসক করা হয়েছে। এটা টেকঅফ করলে সমস্যাটা সমাধান হবে।
বেক্সিমকোর দায়-দেনা অনেক বেশি জানিয়ে সচিব বলেন, এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানকে সরকার সহায়তা দিয়ে এর সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। সমস্যার সমাধান তাদের নিজেদেরই করতে হবে। তাদের ফ্যাক্টরিটা টেকওভার (অধীনে নিয়ে) করে কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করছি।
‘সেখানে যে সাময়িক অসন্তোষ সেটা নিয়ে সেনাবাহিনী কাজ করছে, শিল্প পুলিশ কাজ করছে। সবাইকে নিয়ে আমরা এটা অ্যাডজাস্ট করবো।’
সচিব বলেন, বেক্সিমকোর ফার্মাসিটিক্যালসটা এখনো লাভজনক। তাদের টেক্সটাইলটা রুগ্ণ হয়ে গেছে। বেক্সিমকোর পেছনে যিনি আছেন তাকে অন্তরীণ করা হয়েছে।
সচিব সফিকুজ্জামান বলেন, তাদের (বেক্সিমকো) কারণে অনেকগুলো ব্যাংক খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। জনতা ব্যাংক তাদের একটি বড় জায়গা। সেখান থেকে তাদের টাকা দেওয়ার কথা। গত দুমাসে ৮২ কোটি টাকা করে ১৬৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ মাসে ৬২ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ব্যাংকের সঙ্গে তাদের যে অ্যারেঞ্জমেন্ট, সেখানে ঘাটতি রয়েছে।
‘রপ্তানির পরে তাদের ওখানে (জনতা ব্যাংক) যে টাকাটা ঢুকছে। তাদের (বেক্সিমকো) অনেক ব্যাকলক আছে, সেখান থেকে তাদের টাকা দিবে নাকি সেই ব্যাকলক অ্যাডজাস্ট করবে। এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমাদের চার-পাঁচজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা এটা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।’
শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, মালিক এবং শ্রমিক মিলে ১২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই মালিক আছেন যাদেরকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। আমরা কঠোর অবস্থানে আছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি আরও জানান, শ্রমিকরা অনেক যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছেন, আবার অনেক দাবি অযৌক্তিক। শ্রম খাত অস্থিতিশীল করতে তৃতীয় পক্ষ কাজ করছে।
আগামী মার্চের মধ্যে নতুন শ্রম আইন করা হবে এবং নতুন শ্রম আইন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন শ্রম সচিব।
আরএস