কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করে আনার পর রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা থেকে পালানো সাবেক ওসি শাহ আলম এখনো ধরা পড়েনি। যদিও তাকে পুনরায় গ্রেফতারে সারাদেশে রেড এলার্ট জারি করেছিল পুলিশ।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, সাবেক ওসিকে পুলিশ ছেড়ে দেয়নি। দেয়ার প্রশ্নই আসে না। তাকে যদি পুলিশ ছাড়বেই তবে কুষ্টিয়াতেই ছেড়ে দিতো। ঢাকায় আনার পর না। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাজনিত কারণে সংশ্লিষ্ট দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তবে তিনি বলেন, ওই পালানো ওসিকে এখনো ধরা সম্ভব হয়নি। যথাসম্ভব তিনি ইন্ডিয়া বা পাশের দেশে পালিয়ে গেছেন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শাহ আলমকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৯ জানুয়ারি দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছিল। গত ৯ জানুয়ারি সকালেই উত্তরা পূর্ব থানার ওসির কক্ষ থেকে পালান শাহ আলম।
অভিযোগ উঠে, হত্যা মামলার আসামি শাহ আলমকে গ্রেফতার করে হাজতখানায় না রেখে ওসির কক্ষে রাখা হয়। পুলিশ সদস্যের অবহেলায় তিনি পালাতে সক্ষম হন। এরপর পলাতক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সব কয়টি ইউনিট কাজ শুরু করে। তবে সর্বশেষ ২১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুর পর্যন্ত ধরা যায়নি।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে ক্র্যাব নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে পালানো ওসির খোঁজ মিলেছে কি-না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাবেক ওসিকে আমরা কুষ্টিয়া থেকে ধরে এনেছিলাম। পালানোর পর প্রশ্ন উঠেছে যে, পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমরা ছেড়ে দেওয়ার জন্য তো ধরিনি। যদি ছেড়েই দেবো তাহলে কুষ্টিয়া থেকে ধরে আনার দরকার ছিল না। সেখানেই তো ছেড়ে দিতে পারতো পুলিশ।
বাস্তব কথা হচ্ছে যে, একটু সহানুভূতি দেখাতে গিয়েছিল পুলিশ সদস্যরা। হাজতখানায় না ঢুকিয়ে একজন পুলিশ অফিসারের রুমে রাখা হয়। হাজতে থাকলে হয়তো পালাতে পারতো না। একজন সাব ইন্সপেক্টরকে দায়িত্বে রাখা হয়েছিল। সেখানে সে হয়তো কেয়ারলেস হয়েছিল, এর ফাঁকে সেই সাবেক ওসি পালিয়ে গেছেন।
কমিশনার আরও বলেন, আমরা তাকে খুব ধরার চেষ্টা করছি। তবে আমার ধারণা সে হয়তো এদেশে আর নেই, ইন্ডিয়া বা অন্য কোথাও পালিয়ে গেছে।
এর আগে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ২ সেপ্টেম্বর শাহ আলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় গত ৮ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছিল। এমন সময় তিনি কৌশলে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে দায়িত্বরত একজন সহকারী উপ-পরিদর্শককে (এএসআই) সাসপেন্ড করা হয়। একই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বরত ওসি মহিবুল্লাহকে প্রত্যাহার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল, নব নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি উমর ফারুক আল হাদী, সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ্, যুগ্ম সম্পাদক নিয়াজ আহমেদ লাবু, অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ মাহমুদ খান, দপ্তর সম্পাদক ওয়াসিম সিদ্দিকী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিহাল হাসনাইন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মানিক, প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক জসীম উদ্দীন, আইন ও কল্যাণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ মিজান, নির্বাহী সদস্য জিয়া খান, ইমরান রহমান, মোহাম্মদ জাকারিয়া উপস্থিত ছিলেন।
ডিএমপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি এডমিন ও দক্ষিণ) নাসিরুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদরদপ্তর ও প্রশাসন) শাহ মো. আব্দুর রউফ; মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ও সহকারী পুলিশ কমিশনার(এসি) মো. জাহাঙ্গীর কবির।
আরএস