ছোট পোশাক কী স্বাধীনতা?

রেদওয়ানুল হক প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২২, ০৮:১১ পিএম

অনেকে বলছেন, ছোট পোশাক পশ্চিমা সংস্কৃতি। আবার  কেউ বলছেন, হিজাব-বোরখা আরব সংস্কৃতি। বাধা দিলে দুটোকেই বাধা দেয়া দরকার। বিরোধী যুক্তি হলো- যেকোনো ক্ষেত্রে ভালোটা গ্রহণ করতে দোষ নেই। কিন্তু খারাপটা গ্রহণ করে যদি বলি এটা আমার স্বাধীনতা তাহলেই বিপত্তি।

এমন প্রেক্ষাপটে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি৷ পাঠকেরা আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবেন আমি কোন পক্ষে যাব?

১. আমার গ্রামে একটা চোর ছিল। তার উৎপাতে সবাই বিরক্ত। একদিন আমার বাসায় চুরি করল। আমি তার ভাইয়ের কাছে বিচার দিলাম। কঠিন চাপে রাখলাম। একরকম বাধ্য হয়ে সে ভাই চোরের কঠোর বিচার করলেন। এখন সে ভাল। গত এক দশকে চুরি করেনি। গ্রামের সবাই তাকে ভালবাসে। আগে তার নামের পাশে চোর ছিল। সবাই ওমুক চোর বলে ডাকত। এখন কেউ ভুল করেও চোর বললে এলাকার মানুষ ক্ষেপে যায়। তার হয়ে প্রতিবাদ করে ।

২. এলাকার এক ছোট ভাই চৌমাথায় বসে সিগারেট টানছিল। আমি ধমক দিতেই বলল- আপ্নের বাপের টাকায় সিগারেট কিনি? নিজের কাজ করেন, জ্ঞান দিবেন না। মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে একটা কষে থাপ্পর দেই। পাশে থাকা একজন নেতা আমাকে সেই লেভেলে বকা দেয়। মাফ চাইতে বলে। আমি অস্বীকার করি। পরে ইউনিয়ন পরিষদে বিচার যায়। আমাকে অবশ্য চেয়ারম্যান সাহেব কিছু বলেনি তবে পরামর্শ দিয়েছেন- এখন যুগ খারাপ তাই চেপে যাওয়া ভাল।

এখন চৌমাথায় সিগারেটের সাথে গাঁজা-ইয়াবা ওপেন চলে। সেখানে নেতা সাহেবের ভাই ও ছেলে নেতৃত্ব দেয়। আমারা চেপে যাই।

এবার ঈদের নামাজ শেষে নেতা সাহেব বললেন, নেশা ও জুয়ায় এলাকা ছেয়ে গেছে। চেয়ারম্যান মেম্বারদের নজর নাই। ছেলে-পেলে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ময়মুরুব্বির কোন দাম নাই! তুমি সাংবাদিকতা করো। সমাজের প্রতি তোমার দায়িত্ব আছে। চেয়ারম্যানকে বলো, না শুনলে চাপ দাও। আমরা আছি তোমার সাথে। আমি চুপচাপ শুনে চেপে গেলাম।

৩. ইউটিউবে ভিডিও দেখে এলাকার এক ভাই মসজিদে আসা বাচ্চাদের চকলেট দিচ্ছে নিয়মিত। সবাই তার প্রশংসা করছে ।

৪. এলাকার আরেক বোন মেয়েদের টিকটকার বানাচ্ছে। সবাই ক্ষুব্ধ কিন্তু স্বাধীনতায় আঘাত লাগবে তাই চেপে যাচ্ছে। বোনটির বাবা একদিন মারধর করেছে তাই এলাকার সব টিকটকার মিলে মামলার হুমকি দিয়েছে। এখন বাবা ভাইয়েরাও চেপে যাচ্ছে।

তাই অনেকে বলে- সংস্কৃতিতে ভাল কিছু যোগ হোক খারাপ নয়।

গত কয়েকদিনে আমার পরিচিত অন্তত তিনজন ছোট পোশাকের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে। কিন্তু দুইজন স্ত্রীর ও একজন স্বামীর চাপে ডিলিট করে দিয়েছে। স্ত্রীরা চায় না ছোট পোশাকের কারো দিকে স্বামী নজর দিক৷ স্বামীরা চায় না ছোট পোশাকে স্ত্রীকে কেউ দেখুক। ভাই বোনকে ছোট পোশাকে দেখতে চায় না। বোন ভাইয়ের ছোট পোশাকের বান্ধবীকে সহ্য করতে পারে না। বাবা মেয়েকে ছোট পোশাক কিনে দিতে চায় না। ছোট পোশাকের বান্ধবীর দিকে আড় চোখে তাকিয়েছে বলে, মেয়ের নাকি বাবাকে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়! তাহলে আমাদের সমাজে ছোট পোশাকের এরা কারা!

বাস্তবতা হলো সবাই চেপে যাচ্ছে। কিন্তু নিরবে পুড়ছে। আবার কেউ অন্যের পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে আওয়াজ তুলছে। কিন্তু নিজের বোন/বউকে হিজাব কিনে দিচ্ছে।

লেখক : সাংবাদিক

এসএম