ব্লু-ইকোনমি সম্ভাবনার নতুন বাংলাদেশ

মো: আবু বকর সিদ্দীক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২, ০৯:০৭ পিএম

ব্লু-ইকোনমি বলতে বোঝায় সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি। অর্থাৎ, সমুদ্র থেকে আহরণকৃত যে কোন সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তাই ব্লু-ইকোনমির বা সুনীল অর্থনীতির পর্যায়ে পড়বে। ব্লু-ইকোনমির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা, সামাজিক পুঁজির সৃষ্টি করা, আয় বাড়ানো এবং সর্বোপরি পরিবেশ সঞ্চয়-বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা।

স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মাত্র তিন বছরের মধ্যে ১৯৭৪ সালে Territorial water and Maritime zone Act পাস করে। এছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আলোচনাও শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যা ও পটপরিবর্তনের পর এই উদ্যোগ থেমে যায়। এরপর ২০১৫ সালের ৫ মার্চ জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন-২০১৫ পাশ হয়। ফলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির মাধ্যমে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম চালু হয়, যা দেশের সম্পদ ব্যবহার ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক অর্জন। 

বঙ্গোপসাগর হতে প্রতি বছর প্রায় ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাছ ধরা হলেও আমরা মাত্র ০.৭ মিলিয়ন মাছ সংগ্রহ করতে পেরেছি। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে মাছ আহরণ বাড়বে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২০০ মিটারের অধিক গভীরতায় অতি পরিভ্রমণশীল মৎস্য প্রজাতি এবং গভীর সমুদ্রে টুনা ও টুনা জাতীয় মৎস্যের প্রাচুর্য রয়েছে। মেরিন জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যমান মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো যায়। প্রতি বছর ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। সামুদ্রিক বিভিন্ন জীব থেকে কসমেটিক, পুষ্টি, খাদ্য ও ঔষধ পাওয়া যায়।

সামুদ্রিক ওয়েভ এবং জোয়ার ভাটাকে ব্যবহার করেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। উপকূলীয় পর্যটন থেকে বিশ্বের জিডিপি ৫ শতাংশ আসে এবং বিশ্বের ৬ থেকে ৭ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান এই খাত থেকে হয়। সুতরাং উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে ব্লু-ইকোনোমিতে আরো জোরদার গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। ব্লু-ইকোনোমিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পর্যাপ্ত নীতিমালার ও সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাব, দক্ষ জনশক্তির অভাব, প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব, সম্পদের পরিমাণ ও মূল্যভিত্তিক তথ্যের সঠিক অভাব, মেরিন রিসোর্সভিত্তিক গবেষণায় জোরদার, ব্লু-ইকোনমি সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান। বঙ্গোপসাগরে বিস্তৃত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। বঙ্গোপসাগরের অপার সম্ভাবনা ও সম্পদ চিহ্নিতকরণ, পরিমাণ নির্ধারণ ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথাযথভাবে ব্যবহারসহ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি।

শিক্ষার্থী: ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

কেএস