প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সকল সদস্যভুক্ত দেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটি বিশ্বব্যাপী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন ও বিপুল সংখ্যক অভিবাসীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে ঘিরেই এ দিবসের উৎপত্তি। ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদ অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় ৪৫/১৫৮নং প্রস্তাব আকারে আন্তর্জাতিক চুক্তি গ্রহণ করে।
আসলে শক্তিশালী রেমিট্যান্সের জন্য দরকার দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি। আর বিদেশে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেই অভিবাসন হওয়া দরকার কিন্তু বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের বিশেষ চাহিদা থাকায় অনেক শ্রমিক অভিবাসন করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা অতি সামান্য যোগ্যতা বা দক্ষতা অর্জন করে অথবা একেবারেই অদক্ষ হয়ে অভিবাসন করছে।
এরফলে তারা কাঙ্ক্ষিত কাজে যুক্ত হতে পারছে না। দক্ষতার অভাবে এবং অজ্ঞতার কারণে তারা নানা অপব্যবহার ও বহুবিদ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একটু সচেতন হলেই এই অপব্যবহার ও নির্যাতন রোধ করা সম্ভব। অধিক দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যেমন সাহায্য করে, ঠিক তেমনিভাবে যেকোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়তেও তাদের সাহস যোগায়। মূলত অভিবাসীদের মাধ্যমেই অর্জিত হয় রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক সম্পদ অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হলো রেমিট্যান্স।
আর রেমিট্যান্স হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি এবং উন্নয়নের ভিত্তি, স্বপ্নের সোনালি সোপান ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে পাওয়া উন্নয়ন সহায়তার চেয়ে এর ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক বেশি এবং বেসরকারি ঋণ সংস্থান ও পোর্টফোলিও ইকুইটি প্রবাহের চেয়েও অনেক বেশি স্থিতিশীল। অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের অবদান মোট জিডিপির ১২ শতাংশ এবং বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।
প্রবাসী এসব শ্রমিক যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে, তা দেশের মোট রফপ্তানি আয়ের অর্ধেক। প্রবাসীদের কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একটি সম্মানজনক অবস্থানে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় সরকার বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদরা অধিক রেমিট্যান্স আহরণের জন্য দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কারণ রেমিট্যান্সের টাকায় তৈরি হয়েছে ছোট ছোট উদ্যোক্তা এবং শক্তিশালী অবস্থায় দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি।
বিদেশে জনশক্তি গমনের আগে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত তা হলো— যে কাজ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে সেই কাজের প্রকৃতি ও ধরন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা এবং একই সঙ্গে সেই কাজের প্রতি আগ্রহ থাকা। গন্তব্য দেশে পৌঁছানোর পর দক্ষতার সঙ্গে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযতভাবে পালন করা। নিজের দক্ষতাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শাণিত এবং বৃদ্ধি করা। চাকরিদাতার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা এবং যথাযথ কাঙ্ক্ষিত আচরণ প্রদর্শন করা। গন্তব্য দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং মেনে চলা। গন্তব্য দেশে অপরাধমূলক, অবৈধ ও অসামাজিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া এবং কষ্টার্জিত টাকা দেশে পাঠিয়ে যথাযথভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করা। বিদেশে দক্ষতা ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করে দেশের সম্মান ও সুনাম বৃদ্ধি করা। শিল্প বিপ্লবের যুগে দক্ষতাকে কাজের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে যত দ্রুত প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা যাবে যুগের সাথে তাল মেলানোটা ততই সহজ হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলামে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ব্যবহারিক জ্ঞানচর্চা অপেক্ষা তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রভাব বেশি কাজ করে।
অথচ বাইরের দেশগুলোতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দক্ষতার ওপর নির্ভর করে নিয়োগ দান করা হয়। কারিগরি দক্ষতা তথা প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তার মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর আওতাধীন ৭১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে দেশের অভিবাসনপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে। সরকার এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর শাখাসমূহকে উপজেলা পর্যায়ে নিতে চায়। কিন্তু এসব কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষকদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
এক্ষেত্রে সরকারকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবও দূর করা উচিত। শুধু প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতিই নয় বরং অনেক জনশক্তি অভিবাসনের পূর্বে গন্তব্য দেশের ভাষা, আইন-কানুন, আবহাওয়া সম্পর্কে সামান্যই ধারণা রাখে। বিদেশে একসময় কাজ করেছেন এমন ১০০ জনেরও বেশি অভিবাসীদের ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের একদিকে রয়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক সচেতনতার অভাব, যোগাযোগের অদক্ষতা, নির্মাণ শ্রমিকদের নিজেদের দুর্বল শারীরিক কাঠামো, খাদ্যাভাসসহ স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, আধুনিক যন্ত্রপাতি চালোনায় সিদ্ধহস্ত না হওয়া, পেশাদারি মনোভাবের অভাব। মজার বিষয় হলো এসব অভাব বা দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও এসব প্রবাসীরা দিনের পর দিন দেশের রিজার্ভ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ১৯৭৬ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের শ্রম অভিবাসনের লক্ষ্যে গমন শুরু হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে এদেশ থেকে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ১৭৪টির বেশি দেশে শ্রম দিচ্ছেন এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।
এদের বেশির ভাগই কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে। বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে রেকর্ড সংখ্যক ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মীর মধ্যে ৪ লাখ ৩৪ হাজার দক্ষ শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হয়েছিল। ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন অভিবাসীর মধ্যে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার। অন্যদিকে ২০১৯ সালে ৭ লাখ ১৫৯ জন অভিবাসীর মধ্যে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার। স্বল্প দক্ষতাকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ৪ লাখ স্বল্প দক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে ২০১৮ সালে ২ লাখ ৮৩ হাজার এবং ২০১৯ সালে ১ লাখ ৯৭ হাজার স্বল্প দক্ষ শ্রমিক বিদেশে কাজের উদ্দেশে গমন করেন।
অন্যদিকে ২০১৭ সালে আধা-দক্ষ শ্রমিক প্রেরণ ১ লাখ ৫৫ হাজার থেকে ২০১৮ সালে কমে ১ লাখ ১৭ হাজার হয় এবং ২০১৯ সালে কিছুটা বেড়ে ১ লাখ ৪২ হাজার হয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে সাড়ে ৭ লাখ নতুন কর্মীকে যুক্ত করার লক্ষ্য থাকলেও করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন কর্মীই প্রেরণ করা সম্ভব হয়। ফলে শ্রমশক্তির বিরাট একটি অংশ বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ হারায়। এর ওপর করোনা ভাইরাসের কারণে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মতান্তরে ৫ লাখেরও বেশি কর্মী যা বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি। তবে ২০২১ সালে দেশ থেকে মোট ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী বিভিন্ন দেশে গমন করেছে এবং মোট জনশক্তির ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জনই গেছেন সৌদি আরবে। গত বছর যেসব কর্মী বিদেশে গেছে, তাদের ৭৪ শতাংশই অদক্ষ, ৩ দশমিক ৬ শতাংশ আধা দক্ষ এবং দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ছিল ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএম ২০২০ সালেন ১৬ জুন, ‘বাংলাদেশে অভিবাসন, ফ্যামিলি রেমিট্যান্স, সম্পদ এবং দক্ষতার শ্রেণিবিভাগ’বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৯ সালে ১০০০ রেমিট্যান্স-নির্ভর পরিবারের ওপর পরিচালিত জরিপ ও মূল অংশীদারদের সাথে গুণগত আলোচনার ফলে উঠে আসা ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
জরিপে দেখা গেছে, উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের তুলনায় অধিক অর্থ দেশে পাঠায়। দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মাসিক হারে প্রায় ২৫৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিবাসীদের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে রেমিট্যান্স কিভাবে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয় করা হবে। দক্ষ অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের সঞ্চয়ী হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার অর্থ বিনিয়োগ করতে অনুরোধ করে। আর অদক্ষ অভিবাসীরা অপরদিকে তাদেরও রেমিট্যান্স মূলত লোন পরিশোধে খরচ করে। উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসী কর্মীরা ভালো বেতনের চাকরিতে নিয়োগ পান এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অধিকতর রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এ দেশের অভিবাসী কর্মীরা অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের তুলনায় কম অর্থ পাঠায় বা অর্থনৈতিকভাবে কম লাভবান হন। কারণ অদক্ষ এবং স্বল্প দক্ষ কর্মীরা যে পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করে তা দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অনেক কম।
সামপ্রতিক সময়ে জুলাই মাস ছাড়া কার্যত বাকি সময়জুড়েই রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল নেতিবাচক। সংশ্লিষ্টদের ধারণা কোভিড-পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ আসার প্রবণতা বেড়েছে। তবে এটা সত্য কোভিড পরিস্থিতি উন্নতির পরপরই দেশে আমদানি ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। এমনকি রপ্তানি ব্যয় ও রেমিট্যান্স দিয়ে সে ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দাম দ্রুত বাড়তে থাকায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কম অর্থ পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় ৬৯ লাখ ডলার বেশি। জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি, তখন এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সরকারের রেমিট্যান্স অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ বিলিয়ন ডলার কিন্তু অর্জিত হয়েছে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ কম, এ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরই মধ্যে সরকার ৫ লাখ টাকার ওপর পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাওয়ার শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যাংক কমিশন মওকুফ করেছে। এতদিন ৫ লাখ টাকার বেশি আয় পাঠাতে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট দিতে হতো বলে অনেকেই বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠাতে পারতেন না। কিন্তু শর্ত শিথিলের কারণে এখন থেকে কোন নথিপত্র ছাড়াই অর্থ পাঠালে প্রণোদনা পাবেন তারা। মূলত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বড় উৎস হলো রেমিট্যান্স। গত নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে বর্তমান আমদানির ধারা অনুযায়ী ৫ মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব।
অথচ গত বছর আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ থেকে দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ কর্মী যাওয়ার ফলে শুধু প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শ্রম অনুযায়ী রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এই অদক্ষ কর্মীরা বেশির ভাগই গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে আসা। তাদের নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। তারা বিদেশে হাড় ভাঙা খাটুনি খেটেও যে টাকায় বিদেশ গেছেন সেই টাকাই তুলতে পারেন না।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের কর্মীদের মান অনেক নিচে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে লাখ লাখ কর্মী বিদেশ গেলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে না। গুণগতমান ঠিক করতে না পারলে দেশের শ্রমবাজারগুলো হারাতে হতে পারে। বিশ্বে শ্রমের বাজারে অদক্ষ বা আধা দক্ষ শ্রমিকদের কদর ক্রমান্বয়ে কমছে। অন্যদিকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
তাই দেশ গঠনে যেমন, তেমনি বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা ছাড়া বিকল্প নেই। জনশক্তি আমদানিকারী দেশগুলোর চাহিদা ও পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের জনশক্তিকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি এবং তারাই ঘুরিয়ে দিতে পারে রেমিট্যান্স ও রিজার্ভের চাকা। এ জন্য উন্নয়ন সহায়ক দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক : ব্যাংকার ও কলাম লেখক, সতিশ সরকার রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
এআই