পাহাড়ে শান্তির অন্বেষায় প্রয়োজন কঠোর সিদ্ধান্ত

কর্নেল মো. ইলিয়াস হোসেন, পিএসসি, পিইঞ্জ (অব.) প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলায়, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামুন (৩০) নামে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।  এর প্রতিবাদে দীঘিনালা কলেজের ছেলেরা মিছিল করতে গেলে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায় এবং বাজারের দোকান পাটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে স্থানীয় প্রশাসন এবং  সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা সংঘর্ষ নিরসনে চেষ্টা করেও নিবৃত করতে না পারায় এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইউপিডিএফ(মূল) এর কয়েকজন সদস্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের ভিতর থেকে গোলা গুলি শুরু করে এবং সংঘর্ষের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় যা ব্যাপক আকারে ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হয়ে খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি জেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এতে খাগড়াছড়িতে তিন জন এবং রাঙ্গামাটিতে ১ জনের প্রাণহানি ঘটে। দেশের এই ক্রান্তি কালে এই ধরনের সংঘর্ষ কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। কারণ দেশে প্রচলিত আইন আছে, নিরাপত্তা বাহিনী আছে, অপরাধীদের বিচারের জন্য আদালত আছে, কিন্তু তার পরেও এক অদৃশ্য ইশারায় মাঝে মাঝেই পাহাড়ি বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ ধরনের সংঘর্ষ বাধিয়ে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানকে নস্যাৎ করতে কোন এক বিশেষ গোষ্ঠী সর্বদাই তৎপর।  

সুপ্রিয় পাঠক, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি দুই জেলাতেই আমার চাকুরি করার সুযোগ হয়েছে। ২০০৮ সালে খাগড়াছরির দীঘিনালা উপজেলার কাসালং ক্যাম্পে থাকা কালীন সময়ে কোন একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ইন্দনে, দীঘিনালার বাগাইহাট এলাকায় পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে একই ধরনের সংঘর্ষ বাধে। পরবর্তীতে তা প্যাসিফিকেশনের মাধ্যমে নিবৃত করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে কাপ্তাই এলাকায় জোন উপ অধিনায়ক এবং জোন কমান্ডার হিসেবে আমি প্রায় তিন বছর চাকুরি করেছি। যদিও এই সময়ে তেমন কোন সমস্যা সংঘটিত হয় নাই। তবে পার্বত্য জেলার মৌলিক সমস্যা নিয়ে  আমার ভাবনা ওই সময়ে বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আসলে পাহাড়ের এই সংঘাত/সংঘর্ষের সাথে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব জড়িত।

স্বাধীনতার পর থেকেই কিছু বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাহিরের মদদে আমাদের তিন পার্বত্য জেলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করে আসছিল, যার প্রেক্ষিতে আমাদের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ভৌগোলিক অক্ষন্ডতা রক্ষার্থে তিন পার্বত্য জেলার গভীরে ক্যাম্প করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল এবং বর্তমানেও আছে। এক সময়ে তিন পার্বত্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্গম ছিল।

তিন পার্বত্য জেলায় সমতলের জনগণের কোন সম্পৃক্ততাও তেমন ছিল না, ফলে ঐ অভয়ারণ্যে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিল। দুর্গম পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প ছাড়া সমতলের কোন লোক বসবাস করতো না। এমনি এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে, তৎকালীন সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে পার্বত্য জেলার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত সেনা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার কিছু ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয় এবং প্রত্যেক পরিবারকে চাষাবাদের জন্য ৫  একর করে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাঙালিদের এই পুনর্বাসন এবং ভূমি বরাদ্দের কারণে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বাঙ্গালীদেরকে উচ্ছেদের জন্য ব্যাপক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে থাকে যা একসময়ে ইন্সার্জেন্সীতে রূপ নেয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর ব্যানারে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের তখনকার নেত্তৃত্বে ছিল মি. যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সংক্ষেপে সন্তু লারমা।

অতঃপর, ১৯৯৭ সালে, ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)এর সাথে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হয়, এতে পার্বত্য জেলার শতভাগ বাঙালি এবং পাহাড়ি যে খুশি হয়েছিল তা বলা যাবে না। তবে তখনকার বাস্তবতার প্রেক্ষিতে চুক্তি অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল। কিন্তু চুক্তি পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে অনেক আলোচনা ও আন্দোলন হয়েছে। পাহাড়িদের মধ্যেও চুক্তি নিয়ে অনেক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বরে শান্তিচুক্তির বিপক্ষ দল হিসাবে ইউনাইটেড পিপুল’স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)’এর আত্মপ্রকাশ ঘটে।

প্রাথমিকভাবে উক্ত সংগঠনের কার্যক্রম অত্যন্ত সীমিত থাকলেও ২০০৭ সালের পরে তারা ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ সশস্ত্র দল গঠন এবং এর শক্তি বৃদ্ধির কাজে লিপ্ত হয়। সূত্রে জানা যায়, সমগ্র পার্বত্য জেলার ২০টি উপজেলায় তাদের সক্রিয় কার্যক্রম বিস্তৃত। উল্লেখ্য যে, ঐ শান্তি চুক্তিতে বেশ কিছু ক্লজ রয়েছে যা আমাদের সংবিধানের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। যেমন ভূমি আইন। পাহাড়ে সমতলের বাঙালিরা কোন জমি কিনতে পারে না।

এতে বলা হয়েছে পার্বত্য এলাকার ভূমির মালিক পাহাড়ীরা। পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা বা ভূমি আইন সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। যার ফলে পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভূমির মালিকানা, কেনা-বেচা ও দখল নিয়ে ব্যাপক জটিলতা রয়েছে। অনেক সময় বাঙালিদের সঙ্গে উপজাতিদের বা নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেও ভূমি নিয়ে হানাহানি ও সংঘাতের ঘটনা অহরহই ঘটছে । এসব জটিলতা নিরসনে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন’ করার কথা থাকলেও এখনও তা সম্পন্ন হয়নি বলে জানা গেছে। এই চুক্তির আলোকে পাহাড়ীরা সকল খাস জমি অন্যান্য পাহাড়ীদেরকে চাষাবাদের জন্য বরাদ্দ দিলেও বাঙ্গালীদেরকে বঞ্চিত করেছে। এমনকি যে জমি তারা পূর্বে বরাদ্দ পেয়েছিল, তাও চাষাবাদে বাধা প্রদান করছে।

এতে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হচ্ছে। পাহাড়িদের বক্তব্য, তিন পার্বত্য জেলা তাদের নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। কারণ আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর একটি রেজুলেশন পাশ করে, যার নম্বর ৬১/২৯৫। উক্ত রেজুলেশনে মোট ৪৬টি অনুচ্ছেদ আছে যা দ্বারা আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্পর্শকাতর  কয়েকটি অনুচ্ছেদের বিষদ বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো

অনুচ্ছেদ-১। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীর একক বা  সমষ্টিগতভাবে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই মৌলিক স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২। অধিবাসী জন-গোষ্ঠী একক বা  সমষ্টিগতভাবে মুক্ত এবং সম-অধিকারের নাগরিক। অধিবাসী পরিচয়ে তাদের অধিকারের বিষয়ে কোনো ধরনের বৈষম্য বিবেচিত হবে না।

অনুচ্ছেদ-৩। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণের  পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৪। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ/স্থানীয় বিষয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন বা নিজ-সরকার (Self-Government) পরিচালনার অধিকার আছে।

অনুচ্ছেদ-৫। অধিবাসী জন-গোষ্ঠী তাদের আইনি ব্যবস্থাসহ স্বতন্ত্র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজস্ব অবকাঠামো তৈরি এবং উন্নয়নের অধিকার সংরক্ষণ করে। তবে তারা চাইলে দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার ভোগ করতে পারবে।  

অনুচ্ছেদ-৬। প্রত্যেক আদিবাসী সংশ্লিষ্ট দেশের একজন নাগরিক।

অনুচ্ছেদ-৭। অধিবাসী প্রত্যেক জন-গোষ্ঠীর একক বা সমষ্টিগতভাবে শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা বিধানসহ স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার আছে। তারা স্বাধীন, শান্তিপ্রিয় এবং নিরাপদ। বিশেষ গ্রুপের জনগোষ্ঠী হওয়ায় কোনোভাবেই যেন তারা কোনো প্রকার গণহত্যা বা উচ্ছেদের মতো ঘটনার স্বীকার না হয় এবং কোনো প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তাদের সন্তানদেরকে তাদের থেকে আলাদা করা না হয়।  

অনুচ্ছেদ-৮। কোনো অধিবাসী জন-গোষ্ঠীকে জোরপূর্বক মূল ধারায় আত্মীকরণ করা বা তাদের আচার/সংস্কৃতি ধ্বংস হয় এমন কাজ করা যাবে না। সরকার কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে আদিবাসীদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করবেঃ

ক। এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করা যাতে তাদের নিজস্ব উপজাতীয় পরিচয় ধ্বংস হতে পারে।

খ। এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করা যাতে তাদের নিজস্ব ভূমি, এলাকা এবং সম্পদ বিনষ্ট হয়।
গ। কোনো গোষ্ঠীকে জোরপূর্বক স্থানান্তর না করা যাতে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয় বলে মনে হতে পারে।

ঘ। এমন মতবাদ প্রচার না করা যাতে তারা জাতিগত বৈষম্যের স্বীকার হয়।  

অনুচ্ছেদ-৯। কোনো অধিবাসী দল বা ব্যক্তির যে কোনো অধিবাসী সমাজ বা জাতির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকার আছে যদি সে উক্ত সমাজ বা জাতির রীতিনীতি এবং আচার-অনুষ্ঠানকে  অনূসরন করে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নাই।  

অনুচ্ছেদ-১০। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীকে জোরপূর্বক তাদের ভূমি বা এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। তাদের সম্মতিক্রমে এবং যথোপোযূক্ত ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষেই কেবল তাদেরকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা যাবে, তবে তারা চাইলে পূর্বের স্থানে পুনরায় ফিরে আসতে পারবে।

অনুচ্ছেদ-১১। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীর নিজস্ব প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠান এবং সংস্কৃতিকে পালন এবং পুনর্জীবনের অধিকার আছে। তাছাড়া তারা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা, শিল্পকলা, আচার-অনুষ্ঠান, প্রযুক্তি, সাহিত্য-কলা ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়নের পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করে। সরকার কার্যকর এমন পদ্ধতি অনুসরণ করবে যাতে অননু্মােদিত ভাবে উপজাতীয় সংস্কৃতি, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সম্পদের ক্ষতিসাধনের সকল চেষ্টা ব্যাহত হয়। আরও অনেক ক্লজ রয়েছে তা এখানে উল্লেখ করা হল না।    

আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এধরনের নির্দেশনা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং এতে কারও কোন দ্বি-মত নাই। তবে বাংলাদেশে যেহেতু কোন অধিবাসী নাই সেক্ষেত্রে উক্ত রেজুলেশনের কোন অনুচ্ছেদই বাংলাদেশ তথা পার্বত্য জেলার জন্য প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশের সার্বভৌম ভূখণ্ডের একাংশে বসবাসকারী ঐ পাহাড়ি জন-গোষ্ঠীরা কেবল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মাত্র, এ বিষয়ে ২০১২ সালের দিকে সংসদে একটি আইনও পাশ হয়েছে যেখানে তাদেরকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই পার্বত্য জেলা গুলোতে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে কোনোভাবেই অধিবাসী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার কোন সুযোগ নাই। তাছাড়া, পার্বত্য জেলাগুলোতে বসবাসরত পাহাড়িদের আদি নিবাস কখনোই বাংলাদেশে ছিল না বরং তারা মঙ্গোলয়েড বংশোদ্ভুত এবং বার্মার আরাকান, ভারতের বিহার/মিজোরাম, থাইল্যান্ড এবং চায়না হতে আমাদের দেশে এসে বসতি স্থাপন  করেছে। অন্য দিকে বাঙালিদের ইতিহাস হাজার বছরের। বাংলাদেশের আদি-নিবাসী বাঙালিরাই। ‘আদিবাসী’ মানে হল ‘ভূমি সন্তান’ (SON OF THE SOIL ev NATIVE)। ইংরেজিতে যাকে বলে ABORIGINE OR ABORIGINAL PEOPLE ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কর্তৃক সম্পাদিত  এবং বাংলা একাডেমি হতে প্রকাশিত ইংলিশ-বাংলা অভিধানে ABORIGINAL, বলতে ঐ মানুষ এবং প্রাণী গুলোকে বুঝিয়েছেন যারা আদিকাল থেকে একই স্থানে বসবাস করছেন এবং পরিচিতি পেয়েছেন।

‘Webster Nwe World Dictionar‘ তেও একই বিষয়ে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ‘The first people known to have lived in a certain place or region which was not under abodzs control/possession are to be termed as aborigines or adivashis. আমরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিজি, সামোয়ার দিকে তাকালে আসল আদিবাসী সম্পর্কে ধারণা আরো স্পষ্ট হবে। সেখানে বসবাসকারী স্বতন্ত্র জন-গোষ্ঠি যারা ভূমি সন্তান (Native) নামে পরিচিত, তারা কোনো অঞ্চল থেকে যেয়ে উক্ত এলাকায় বসতি স্থাপন করে নাই। তাদের সংস্কৃতি এবং আচারের উৎসও তাদের নিজস্ব।

অপরদিকে পার্বত্য এলাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতীয় গোষ্ঠীরা কেবল জীবিকার প্রয়োজনেই বিভিন্ন সময়ে এ এলাকায় আগমন করেছে। এসব উপজাতিদের সংস্কৃতি/আচারের উৎস এ অঞ্চলের নয়। প্রত্যেক গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি/আচারের উৎস তারা যে সব অঞ্চল থেকে এসেছে, সেখান থেকে আসা। তাই বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা গুলোতে বসবাসরত উপজাতীয় জন-গোষ্ঠিকে কেবল পাহাড়ি উপজাতি বলা যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই তাদেরকে আদিবাসী বলা বা আদিবাসী হিসাবে গণ্য করা যাবে না। আমাদের  দেশে যে সকল উপজাতি আছে তাদের পার্বত্য জেলাগুলোতে আগমন হয় মূলত ১৬০০ হতে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে। বর্তমানে পার্বত্য জেলাগুলোতে যে ১৩টি উপজাতির বসবাস করছে, তাদের প্রত্যেকের আদি-নিবাস এবং পার্বত্য জেলায় আগমনের তথ্য নিম্নরূপ    
ক। মগ বা মার্মা জন-গোষ্ঠী ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে বার্মার আরাকান হতে বিতাড়িত হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের কক্সবাজার, পটুয়াখালী এবং পার্বত্য তিন জেলাতে আগমন করে।

খ। মুরং জন-গোষ্ঠী ১৮০০ সালের শেষের দিকে বার্মার আরাকান রাজ্যের খুমিস নামক একটি উপজাতি কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে বান্দরবান জেলায় আগমন করে।

গ। বার্মার আরাকানে বসবাসরত খুমিস জন-গোষ্ঠী আনুমানিক ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে মুরং ও বোমাংদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল বান্দরবানের রুমা এবং থান্চি এলাকায় আগমন করে।

ঘ। বোমাং বা বম জনগোষ্ঠী ১৮৩৮ হতে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে বার্মা হতে এসে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলার দক্ষিণে বান্দরবান জেলায় বসতি স্থাপন করে।

ঙ। খিয়াং জন-গোষ্ঠী ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে আরাকানের উমাতাং হিল হতে বার্মিস  কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলায় প্রবেশ করে।

চ। রাখাইন জন-গোষ্ঠী ২০০ বৎসর আগে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে পটুয়াখালী, বরগুনা এবং কক্স-বাজার এলাকায় আগমন করে।  

ছ। ত্রিপুরা জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। তারা মূলত জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে প্রথমে কুমিল্লা, সিলেট এবং চট্রগ্রামে বসতি স্থাপন করে।

জ। লুসাই জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস হলো ভারতের মিজোরাম প্রদেশে। তারা মূলত মিজোরামের লুসাই পাহাড় হতে আনুমানিক ১৫০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে আগমন করে।  

ঝ। পাঙ্খু জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস ভারতের মিজোরামে। তারা লুসাই পাহাড়ের ‘পাঙ্খয়া’ নামক একটি গ্রাম বসবাস করত। পরবর্তীতে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে তারা বাংলাদেশের পার্বত্য জেলায় আগমন করে।

ঞ। কুকি জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস ভারতের মনিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম এবং মিজোরামে।  

ট। চাক জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস সুদূর চীনের উনান প্রদেশে। তারা প্রথমে আরাকানে প্রবেশ  এবং পরে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলায় আগমন করে। যদিও এখনও আরাকানে তাদের বসতি আছে।

ঠ। তংচংঞ্যা চাকমা জন-গোষ্ঠীর একটা অংশ। তারা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান,   কক্সবাজার এলাকা ছাড়াও ভারতের মিজোরাম এবং মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাস করে।

ড। চাকমা হল তিব্বতীয়-বার্মিস বংশোদ্ভুত জন-গোষ্ঠি। এই উপজাতিও গোষ্ঠীর অতীত নিয়ে নানাধরনের কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে। পৌরাণিক গল্পে উল্লেখ আছে চাকমাদের আদি নিবাস ছিল ‘চম্পোকনগর’বা ‘চম্পাপুরি’ নামে এক প্রাচীন সম্রাজ্যে। ভারতের ভিতরে এবং বাইরে এরকম পাঁচটি এলাকা আছে, যার নাম ‘চম্পোকনগর’। যার একটি উত্তর বার্মার ‘সান’এ, তিনটি ভারতের বিহার রাজ্যের ‘মাগাধা’, আসামের কালাবাগা’, এবং কোচীন’এ, অন্য একটি হল মালয়েশিয়ার মালাক্কা’তে। এক পৌরাণিক কাহিনি মতে, চাকমা জন-গোষ্ঠিরা ‘বিজয়গিরি’ নামক এক কাল্পনিক যুবরাজ এর নেতৃত্বে ভারতের বিহার  রাজ্যের মাগাধা সাম্রাজ্য হতে প্রথমে বার্মার আরাকান রাজ্যে আগমন করে। পরবর্তীতে বার্মার রাজকীয় শক্তি আরাকানে বসবাসরত চাকমা জন-গোষ্ঠীকে আক্রমণ করলে তদানীন্তন বাংলার সুবেদার মানবিক বিবেচনায় তাদেরকে কর্নফুলী নদীর পূর্ব পাশে প্রথমবারের মত বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন। এরপর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় এবং ভারতের মিজোরামে চাকমাদের বিস্তার ঘটে।

পাহাড়ের গভীরে বসবাসকারী সাধারণ উপজাতিদের চাওয়া-পাওয়া কি, তা আমাদের সকলের জানা দরকার। আমি পার্বত্য এলাকায় অনেক  দিন থেকেছি। আর পার্বত্য এলাকার পাহাড়-পর্বতের সাথে, ওখানকার জন-গোষ্ঠির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে পাহাড়ি জন-গোষ্ঠির চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে আমি যেটুকু জানতে পেরেছি শুধু সেটুকুই আমি আজ আপনাদের জন্য উল্লেখ করছি। এ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। এর পরে আছে মার্মারা। এই উপজাতিদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বাস করে গভীর জঙ্গলে, যাদের জীবন/জীবিকার পুরটাই কৃষি নির্ভর। এদের কাছে জেএসএস, ইউপিডিএফ বা শান্তিচুক্তির কোন মূল্য নাই। তারা নেহায়েতই খেটে খাওয়া মানুষ। বাকী ২০ শতাংশ যারা শহরে বসবাস করে, তারাই সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে অতি-শিক্ষিত কতিপয় স্বার্থান্নেষী মহল পাহাড়ের গভীরে বসবাসকারী ঐ অনগ্রসর গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে সর্বদা ব্যস্ত। তারা উক্ত অনগ্রসর গোষ্ঠীর দৈন্যতার কথা বলে দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভসহ বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে, যার সাথে খেটে খাওয়া ঐ সাধারণ পাহাড়িদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। এই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে অধিবাসী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে দেশের ভিতরের এবং বাহিরের ঐ বিশেষ চক্র বিভিন্ন ভাবে অপ-প্রয়াশ চালিয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত  দুঃখজনক এবং দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশী জরুরি, দেশের ঐ বিশেষ চক্রের অপচেষ্টা দ্রুত বন্ধ করা। একই সাথে সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ‘অধিবাসী’ শব্দের সঠিক মানে বুঝে তার ব্যবহার/উচ্চারণ করা উচিত। এজন্য আমাদের সকলকে বিশেষ করে সরকার এবং শিক্ষিত জন গোষ্ঠীকেই বেশী সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে।

একই সাথে পাহাড়ে বসবাসকারী উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বাধীন এবং  স্বতন্ত্র জাতি-সত্ত্বা যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয় সেদিকে আমাদের সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা সমতলের অন্য সাধারণ মানুষের মতই স্বাধীন এবং সার্বভৌম এই দেশের নাগরিক। তাই দেশের অন্যান্য স্থানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে মিল রেখে ঐ অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নেও আমাদেরকে সমান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। তবে গত ২০ বছরে পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তাতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবন মানে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। প্রচুর সংখ্যক সাধারণ পাহাড়িরা উন্নত লেখাপড়া শিখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এখন কাজ করছে এবং আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। কিন্তু তারপরেও কিছু ভিন্ন মতের পাহাড়িরা দেশের এবং বাহিরের স্বার্থান্নাষী গোষ্ঠীর মদদে পার্বত্য জেলা গুলিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। তাই এই বিষয়ে শান্তি প্রিয় পাহাড়ি জনগণেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

পাঠক, উল্লিখিত আলোচনায় এটা মনে হতে পারে, ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই পাহাড়ি এবং বাঙালিদের মধ্যে বৈরিতা তৈরি হচ্ছে। তবে তৎকালীন সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্পের ফলে পাহাড়ে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলেও পাহাড়ি- বাঙালি জনগোষ্ঠীর বর্তমান আনুপাতিক উপস্থিতি পার্বত্য এলাকাকে যে স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা নির্বিধায় বলা যায়। এছাড়াও সরকার পাহাড়ীদেরকে বিশেষ কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করায়  তাদের মেইন-স্ট্রিমে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগোম হচ্ছে। তবে, ইদানীং কিছু স্বার্থান্নাষী মহলের মদদে বান্দরবানের কুকিচীনসহ পিসিজেএসএস এবং ইউপিডিএফ সদস্যদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এলাকা কিছুটা অশান্ত হয়ে উঠছে। ফলে সমতলে লুকিয়ে থাকা সুযোগ সন্ধানী গ্রুপ সরকারকে বিপদে ফেলতে সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, নিরাপত্তা বাহিনীসহ সরকারের নীতি নির্ধারক মহলকে সতর্ক হতে হবে। এমনও হতে পারে, সব ভুলে সকল সন্ত্রাসী গ্রুপ আবার একত্রিত হয়ে ‘শান্তি বাহিনী’র মত স্বাধীন ‘ঝুমল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পুনরায় পার্বত্য জেলাগুলোকে অশান্ত করে তুলতে পারে। তাই এই সংকটময় পরিস্থিতি হতে উত্তরণের জন্য সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কুকীচীন সহ জেএসএস এবং ইউপিডিএফ এর শীর্ষ নেতৃত্বকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে নিষিদ্ধ করতে হবে ঐ সকল স্থানীয় রাজনৈতিক দলকে যারা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে লালন করছে।

৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে, যেখানে ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবে ম্যাস কিলিংয়ের কারণে বিলুপ্ত প্রায় পুলিশ বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা করাসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করার এই ঘৃণ্য প্রয়াস নিশ্চয়ই কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর পিছনে অবশ্যই পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারে দোসরদের মদদ দিচ্ছে। কারণ দেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন, প্রতিবেশী দেশে পলায়ন এবং প্রতিবেশী দেশের একটি রাজ্যে অস্থিতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে এটা মোটামুটি  নিশ্চিত যে, আমাদের তিন পার্বত্য জেলাগুলোকেও যদি অশান্ত করা যায়, তাতে বাংলাদেশের উপরে একটা চাপ সৃষ্টি করা যাবে। এতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে পূর্বের সকল অসম চুক্তি বাস্তবায়নে কিছুটা নমনীয় হবে, যা তাদের জন্য খুবই দরকারি। এমন চিন্তাকে উড়িয়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং সেটাই হয়তো করার চেষ্টা চলছে। তাই এই মুহূর্তে বর্তমান সরকারকে খুবই কৌশলী এবং সতর্ক হতে হবে। অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধানে পার্বত্য জেলার সকল স্টেক-হোল্ডারেদেরকে নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে এবং আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করে ফেলতে হবে। যদি এতেও সমাধান না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলংকার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করে ঐ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে সমূলে ধ্বংস করতে হবে । প্রয়োজন হলে চুক্তির স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আর এভাবেই নিশ্চিত করতে হবে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, যা আপনার, আমার, আমাদের সকলের দায়িত্ব। অন্যথায় দেশকে শান্তি চুক্তির পূর্ববর্তী যে কোনো ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে যা আমাদের কারও কাম্য নয়। তাই  আসুন আমরা সবাই একযোগে কাজ করি, নিশ্চিত করি সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা, আর রক্ষা করি আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের অখণ্ডতা।

লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

ইএইচ