হ্যাঁ তিনিই নেতা, তিনিই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

মো. রাব্বি হাসান প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম

শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে আক্ষরিক অর্থেই প্রথম স্টেটসম্যান। দূরদর্শী একজন রাষ্ট্রপ্রধান। যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭১ পরবর্তী শাসকদের ব্যাপারে এই দায়মুক্তি কাজ করে যে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশে একজন রাষ্ট্রনায়কের কী করার আছে কিংবা ছিল- জিয়াউর রহমান সেটা করে দেখিয়েছেন যে আসলেই একজন রাষ্ট্রনায়ক কী করতে পারেন। বাকসর্বস্বতা আর বাকশাল এর মত ফ্যাসিস্ট সমাধান নয় বরং দেশের নাগরিকদের রাষ্ট্রের বেনিফিশিয়ারি হিসেবে সমান সুযোগ, ভোটের ব্যবস্থা, সকল শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কাজ করে গেছেন।  

৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর শাসক শ্রেণীর ক্রমাগত ব্যর্থতা বাংলাদেশকে কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ রাখেনি, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, সাড়ে তিনবছরের বিভক্তির রাজনীতির যে চূড়ান্ত অরাজকতা, শাসক হিসেবে জিয়াউর রহমানকে আরও বিপদসংকুল একটা দেশের দায়িত্ব পান। মানে ৭২ এর বাংলাদেশের থেকে ৭৫ এর বাংলাদেশ ফেইল স্টেটের একদম খাদের কিনারে অবস্থান করছিল।

একটা রাজনৈতিক অস্থির সময়ে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার কমফোর্ট জোনের একজন সামরিক শাসক হিসেবে তাঁর পরবর্তী যে ‘ম্যাকায়ভেলিয়ান’ সামরিক শাসক যিনি কি না নয় বছর ক্ষমতা আঁকড়ে বসেছিলেন তার মতই করতে পারতেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া মানুষ। তাই সমাজে গণতান্ত্রিক যে মূল্যবোধ, সমাজের বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে ক্ষমতা পোক্ত করার সহজ নেশায় সেই মূল্যবোধকে, সে বিরাজনীতিকরণের পথ তিনি নেননি- তিনি ভোট ব্যাংকের রাজনীতিতে যাননি।  

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমানের ‘কীইবা করার আছে’- এমন দায়মুক্তির সহজ পথ ছিল। তিনি চাইলেই বিদ্যমান গুণ্ডাতন্ত্রের একজন  সমন্বয়ক হিসেবেই সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রকে, বিচার ব্যবস্থাকে একটা মেধাহীন, মেরুদণ্ডহীন ব্যবস্থা হিসেবে জারি রাখতে পারতেন। তাঁর সামরিক বাহিনীর যে প্রশিক্ষণ তাতে তাঁর জন্য কারণহীন আনুগত্যের একটা অভ্যাস থাকাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু একজন মহান গণিতজ্ঞ যেমন নিজের জন্য সমস্যা তৈরি করেন, একজন স্টেটসম্যানও তেমনটাই, নিজের চ্যালেঞ্জটাকে ছোট রাখেন না। জিয়াউর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন একটা রাষ্ট্রের যেটা বিশ্ব দরবারে কোন দয়ার তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত হবে না বরং পরিচিত হবে একটি আত্মমর্যাদামূলক রাষ্ট্র হিসেবে।  

তিনি বহুদলীয় রাজনীতিকে উন্মুক্ত করে দেন। জিয়াউর রহমান বেসামরিক এবং সুশীল সমাজের রাষ্ট্রগঠনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। ইতিহাস সাক্ষী, যেই জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে, একটা বিশৃঙ্খল, হতাশ, গুজবতাড়িত সশস্ত্র বাহিনীকে ‘আয়রন ফিস্ট’ গ্রিপে তাঁর ক্যারিশমা এবং সামরিক প্রজ্ঞায় পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীতে রূপান্তর করেছিলেন সেই একই জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যেন রাজনীতির ক্যাওয়াসকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাননি।

রাজনৈতিক বিরোধিতাকে তিনি মোকাবেলা করেছেন রাজনৈতিকভাবে। রাজনীতিসচেতন সমাজ ছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কেবল কল্পনাই- এটা জিয়াউর রহমান অনুভব করতে পেরেছিলেন- তাঁর পূর্বের রাষ্ট্রপ্রধান যে গুণ্ডাতন্ত্রকে এন্ডোর্স করেছিলেন, তাঁর পরবর্তীতে যিনি মধ্যবিত্তকে এটা অনুভব করতে বাধ্য করেছিলেন যে রাজনীতি ‍‍`ভদ্রমানুষদের‍‍` কাজ নয়- এর মাঝে জিয়াউর রহমান ছিলেন ব্যতিক্রম- একটা অংশগ্রহণমূলক দেশ ও সমাজ গঠনে জিয়াউর রহমান নির্ভর করেছিলেন এর জনগণের ভেতরকার শক্তিকে। জনশক্তি রপ্তানি, সরকারি ব্যয় এমন অংশগ্রহণমূলক করা যাতে রাষ্ট্রের জনগণ ফ্রি রাইডিং এর সুবিধা না নিয়ে বরং তাঁর পরিশ্রমের বিনিময়ে জীবন নির্বাহ করতে পারে।

বাংলাদেশের জনমানুষের এমন কর্মসূচির ইমপ্যাক্ট দুই রকমের এক, রাষ্ট্র তার নাগরিকদের শ্রদ্ধার চোখে দেখছেন দুই রাষ্ট্রের জনগণ কারো করুণা ছাড়াই সৎ পথে ইনকাম করতে পারেন। আত্মনির্ভরশীল তারুণ্য সেইসময় এই প্রকল্পগুলোতে উচ্ছ্বাসের সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন, ফলে বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে দেশগঠনের উদ্দীপনা সংক্রমিত হয়েছিল। বেড়েছিল মানুষের উৎপাদনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতা।

তিনি প্রত্যেকটি ফোরামে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছিলেন সমমর্যাদার রাষ্ট্র হিসেবে। তাঁর ব্যক্তিগত সততা এবং দেশপ্রেম দেশের নাগরিকদের আশাবাদী করে তুলেছিল। জিয়াউর রহমানের এই বোঝাপড়াটা ছিল তাঁর সময়ের রাজনীতিবিদদের চেয়ে অনেক দূরদর্শী, কেননা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর যে বাংলাদেশের অঙ্গীকার ছিল সেটাকে মধ্যবিত্ত তার চোখের সামনেই ভেঙ্গে পড়তে দেখে, সেসময় জিয়াউর রহমান, যিনি তার পূর্ববর্তী রাজনীতিতে আসা ফিউডাল সমাজের অংশের বাইরের একজন মানুষ।

জিয়াউর রহমান মধ্যবিত্তের এই প্রতারিতবোধ করার কারণ অনুভব করতে পেরেছিলেন তাঁর বেড়ে উঠার পরিপার্শ্বের কারণে, আবার জিয়াউর রহমান এটাও অনুভব করেছিলেন মধ্যবিত্তের এই প্রতারিতবোধ করা, এই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া জাতি  গঠনের জন্য কী মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমান প্রথাগত রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি রাজনীতিতে মধ্যবিত্তের অংশগ্রহণের রাস্তা সুগম করেন মূলত জনগণের মানসে পরিবর্তনের মাধ্যমে। একটা কর্মযজ্ঞ, উৎসবমুখর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মধ্যবিত্তের রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল।

১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আজ তাঁর জন্মদিন। বাংলাদেশের এই শহিদ প্রেসিডেন্টের কর্মময় জীবন দেখলে ভেতর থেকে যে মুগ্ধতা উচ্চারিত হয় ভাষায় তা এমনই ‘হ্যাঁ তিনিই নেতা, তিনিই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।’      

লেখক: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ।

ইএইচ