ইসিতে আ.লীগের ১৫ প্রস্তাব

৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট চায় আ.লীগ

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২, ০৬:০৩ পিএম

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে সংলাপ শেষ হলো নির্বাচন কমিশনের।

রোববার (৩১ জুলাই) বিকাল তিনটায় ক্ষমতাসীন দলটির সঙ্গে সংলাপ শুরু হয় ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসহ ১৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একসঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে দলটি।

লিখিত বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে কমিশনের সাথে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই আলোচনার সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নির্ধারিত না হওয়ায় আমরা মনে করি বাস্তবতার নিরিখে দেশের সার্বিক নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আমরা আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে পারি।

[227554]

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই বিষয়গুলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ:

১. নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন।

২. নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা ।

৩. নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং এর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ। এটি সর্বজন স্বীকৃত, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে একদিকে যেমন সাংবিধানিক পদে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে এক বিপুলসংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সকল দলীয় ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এই বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ করেছিল। এদের অনেকেই এখন জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। এই সকল দলীয় কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সকল ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।

[228157]

৪. ছবিযুক্ত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা। বিএনপি কর্তৃক এক কোটি তেইশ লক্ষ ভুয়া ভোটার সৃষ্টির অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ বৃদ্ধি করা। এদেশে ভোট ডাকাতি, ভোট জালিয়াতি এবং প্রহসনের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ভিকটিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সমগ্র পৃথিবীতে ঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশেই নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, ভোট জালিয়াতির অপসংস্কৃতি রয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের মতো আমরাও মনে করি, প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোনো বিকল্প নেই। ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের শুরুর দিকে কিছুকিছু ভোটারের অপছন্দ থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় প্রমাণিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্ৰ দখল, ভোট কারচুপি এসব বন্ধ করে একটি টেকসই স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন ইভিএম ব্যবস্থায় সম্ভব।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে সকল কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইভিএমের কার্যকর ব্যবহার ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল এবং নির্বাচনে নানা জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ করবে। আমরা মনে করি, দেশে ইভিএম পদ্ধতিটি জনগণের কাছে অধিকতর জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

বর্তমান সরকারের অব্যাহত সহায়তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এখন এক লাখ ৫০ হাজারের অধিক ইভিএম মেশিন রয়েছে, যা দিয়ে মোট ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট নেওয়া সম্ভব। আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

[228312]

৬. নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পরিবর্তে কেবল প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।

৭. আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ।

৮. দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা।

কেবল নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী (আরপিও ১৯৭২, অনুচ্ছেদ ৯১সি) নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে বিদ্যমান আইন ও বিধি বিধানের আলোকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি প্রদান করতে হবে। আরপিও-এর অনুচ্ছেদ ৯১ (সি) লঙ্ঘন করে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে দেশি কিংবা বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমতি দেওয়া যায় না। এছাড়া, আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে (Declaration of Principles for International Election Observation and Code of Conduct for International Election Observers, Commemorated October 27, 2005, at the United Nations, New York)। এর আওতায় কোন দেশের কূটনীতিক কিংবা দূতাবাসের কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট দেশে (host state) স্বার্থের সংঘাত (conflict of interest) রয়েছে এমন ব্যক্তিবর্গকে আইনের বাধ্যবাধকতা হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক করা যায় না। এই আইনের আওতায় কেবল নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্য। বিগত সংসদ নির্বাচন এবং ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই আইনের কিছু ব্যত্যয় ঘটেছিল, যা আমরা নির্বাচন কমিশনের নজরে এনেছিলাম। এই বিষয়ে আইন, বিধি-বিধান এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত স্থানীয় ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ৮১টি সংস্থার ২৫ হাজার ৯২০ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষকে অনুমতি দেওয়া হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনোভাবেই কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি; বরং এটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।

[227386]

৯. নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সকল পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা।

১০. নির্বাচনের পূর্বে ও পরে সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১১. নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা।

১২. নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবল আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা।

১৩. এডহক বা অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, একটি টেকসই স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। আবার গণতন্ত্র একটি দীর্ঘ চর্চার বিষয়। কেবল সাংবিধানিক, আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রস্তুত করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে এর চর্চা জরুরি। বাংলাদেশে একটি টেকসই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যে সাংবিধানিক, আইনি, প্রশাসনিক, রেগুলেটরি পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক প্রয়োজন, ইতোমধ্যে তার সবটুকুই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক বিধান সংযোজন থেকে শুরু করে এই মহাকর্মযজ্ঞ একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই সম্পন্ন করেছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি; বরং এটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।

কাদের বলেন, আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে, একটি টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থা ব্যতিরেকে এডহক বা অন্তরবর্তীকালীন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র টেকসই হয় না। কোনো এডহক ব্যবস্থায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় না। এদেশে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সাংবিধানিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা পশ্চিমা বিশ্বের ‍‍`Anglo Saxon‍‍` মডেলের। পশ্চিমা গণতন্ত্র শত শত বছরের চর্চার মধ্য দিয়ে টেকসই হয়েছে। বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে প্রায় ২৯ বছর অসাংবিধানিক সরকার এবং তাদের লিগ্যাসি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল এদেশের শাসনভার। গণতন্ত্র আর সাংবিধানিক শাসন এখানে বার বার হোঁচট খেয়েছে। ফলে এদেশের মানুষ আর প্রতিষ্ঠানগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ পায়নি। বর্তমান ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে টেকসই ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। গণতন্ত্রকে টেকসই করার স্বার্থে এই ব্যবস্থাকে অধিকতর কার্যকরভাবে চর্চা করার প্রয়োজন রয়েছে।

১৪. তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা একটি ‍‍`past and closed chapter"। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং ইতোমধ্যে দেশে দুইটি জাতীয় নির্বাচন বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এর বিধান অনুযায়ী এই বিষয়ে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এই বিষয়ে সাংঘর্ষিক কোনো মন্তব্য করা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।

[228266]

১৫. গত তিন মেয়াদে সব বাধা অতিক্রম করে গণতান্ত্রিকব্যবস্থায় ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে আর সে কারণেই বাংলাদেশ ব্যাপকভিত্তিক আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি, এবং আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। এত অল্প সময়ে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র এই ধরনের উন্নয়নের নজির স্থাপন করতে পারেনি। সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিএনপি সরকারের সময় তিন বিলিয়নের কিছু ওপরে ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেটা ছিল পাঁচ বিলিয়নের ওপরে। সেখান থেকে আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ৯১.৬ বিলিয়ন ডলার, তা বেড়ে হয়েছে ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। একইভাবে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ৬৮৬ মার্কিন ডলার। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮২৪ মার্কিন ডলারে। ২০২২ ২৩ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে তিন হাজার সাত মার্কিন ডলারে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের সময় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যেখানে ২০০৯ সালে এই সুবিধা প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭%।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৯.৬ শতাংশ হয়েছিল। এরপর তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়েছিল। সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়েছে। দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল। সেখান থেকে আমরা ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।

মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‍‍`নির্বাচন কমিশন‍‍`কে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে।

প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুন্নু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।

 

 

ইএফ