স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে আমেরিকার যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, সেটা এগিয়ে নিতে এবং অন্য কোনো সেক্টরে তারা সহযোগিতা করতে পারে কিনা, সেগুলো জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তারা মানব পাচার বন্ধে কাজ করতে ইচ্ছুক।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তার জন্য যদি কিছু প্রয়োজন হয় সেখানে সহযোগিতা করতে পারে। তারা আমাদের আগেই দুই-তিনটি জায়গায় সহযোগিতার জন্য লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা ইতোমধ্যে খুব শিগগিরই সমঝোতা স্মারক সই করবো, সেটা তাকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন এগুলো শেষ পর্যায়ে আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে আগ্রহী জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বর্ডার এলাকায় কোস্ট গার্ডকে আগে তারা সহযোগিতা করেছে, সেটা করার জন্য এবং আমাদের বিজিবির কিছু ইনঅ্যাকসেসেবল জায়গা আছে, সেখানে কীভাবে শক্তিশালী করতে পারি, সে বিষয়ে প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলেছি।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি— রোহিঙ্গা বিষয়ে তোমাদের সহযোগিতা আমরা লক্ষ্য করেছি। এই সমস্যা সমাধানে তারা তাদের কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করি। এ বিষয়ে তাদের যে সহযোগিতা এখন আছে, সেটা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
র্যাবের বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছে— যেভাবে র্যাবের কাজ করা উচিৎ ছিল, সেভাবে কাজ করেনি বলেই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা বলেছি— র্যাব বেআইনি কোনো কাজ করলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এখন র্যাব ও পুলিশের সদস্যরাও কারাগারে আছেন, যারা গাফিলতি করেছেন। আমি একটা ইনসিডেন্টের কথা বলেছি— নারায়ণগঞ্জে যে সেভেন মার্ডার হয়েছিল, সেই অফিসারদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন, সেই প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের যে সদস্য অন্যায় করছেন তাদেরও শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আরও বলেছি— বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের ল’ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি সেলফ ডিফেন্সে গুলি করে থাকে। সেটা যথাযথ হয়েছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয় ঘটনার পরপরই। তিনি যদি মনে করেন, এটা যথাযথ হয়নি তাহলে সেই সদস্যকে ট্রায়াল ফেইস করতে হয়। তিনি (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) বলেছেন, এটা তো তোমরা পাবলিকলি অ্যানাউন্স করো না। আমরা বলেছি, যেগুলো করার সেগুলো আমরা করছি। তিনি বলেছেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। ইলেকশন পর্যন্ত এটা ঠিক থাকবে কিনা জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি তিনি নির্বাচন পর্যন্ত একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অব্যাহত রাখবেন। লট অব ডেমোনেস্ট্রেশন হচ্ছে, লট অব মিটিং হচ্ছে… আমাদের এখানে কোনো ইয়ে নাই।
পিটার হাস নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি চিঠি লিখেছেন, যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলা সরাসরি আইনের লঙ্ঘন— এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে পিটার হাস সরাসরি কোনো কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, তোমাদের দেশে নির্বাচন চলে আসছে, তখন কি কোনো বিশৃঙ্খলা হবে কিনা জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের সরকার এ ব্যাপারে খুবই যত্নবান। শেষ তিন মাস দেশ নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যাবে। এর আগের যে পিরিয়ড, এ পিরিয়ডে কোনো রকম ইয়ে হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল ভালো কাজ করছে, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র আরও সহযোগিতা করতে চায় বলেও জানান তিনি।
এবি