বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে পাশের দেশ ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেশ শাসনের অধিকার আওয়ামী লীগ হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে তাদেরকে এই দেশের সরকার পরিচালনা ও শাসন করবার কোনো অধিকার নেই।’
শনিবার (২০আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, নিত্যপণ্যের মূল্যে বৃদ্ধি ও ভোলায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে সংগঠনটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোনেম। আমরা এর ব্যখ্যা চেয়েছি। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে কিভাবে অন্য দেশের সাহায্য চাওয়া হল।
কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের কোন ব্যখ্যা দেননি। তিনি তার বক্তব্য থেকে সরে আসেননি ৷ তিনি একটা বক্তব্য দিয়েছেন এবং সে কথাটাই এনশিওর করেছেন।
তিনি বলেন, আমি পরিস্কার করে বলতে চাই যারা অন্যের আনুকুল্য নিয়ে টিকে আছে এদেশ শাসন করার কোন অধিকার সেই আওয়ামী লীগ সরকারের নাই। তারা শুধু লুটপাট করতে জানে।
এই সরকার স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করেনা। তাদের সাথে সাধারণ জনগণের সম্পর্ক নাই। তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, সারের জন্য কৃষকরা রাস্তা অবরোধ করছে। সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে।
আজ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে গরিবের পেটে আঘাত করা শুরু করেছে তারা। মধ্যবিত্ত শ্রেণি কাউকে কষ্টের কোন কথা বলতে পারছেনা লজ্জায়। দু`বেলা দু`মঠো ঠিকমত খেতে পারছে না সাধারণ মানুষ। ৪২ ভাগ মানুষ বসবাস করছে দারিদ্র্যসীমার নিচে।
তিনি বলেন, করোনার সময় সরকারকে আমরা প্রস্তাব করেছিলাম নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে নগদ টাকা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা তা না করে বড়লোকদের, গার্মেন্টস শিল্পে প্রণোদনা দিয়েছেন। দরিদ্র, ভয়ান শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনা দেননি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এদেশে আজ কারা ভাল আছে জানেন? লুটেরা ভাল আছে। এই লুটেরা এলিট শ্রেণির। আর এই এলিটরা হল আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা ভাল আছে। আরও ভাল আছেন কিছু সুবিধাভোগী আমলারা।
তারা প্রজেক্ট তৈরি করছেন কিভাবে কানাডায় বেগম পাড়ায় বাড়ি করবে। আর ভাল আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবী শিক্ষক। তারা যখন টকশোতে কথা বলে তখন মনে হয় মোমেন সাহেবকে বলছেন বেহেশতে আছি। তারা প্রমাণ করতে চান আসলে তারা বেহেশতে আছেন।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মেগা প্রজেক্ট করে মানুষের বাহ্বা নিতে চায়। তারা বলে দেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে।
তারা আত্মতৃপ্তির জন্য বলে বাংলাদেশ এখন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। দেশ এখন উন্নত দেশ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের এই উন্নত দেশের সাধারণ মানুষ এখন না খেয়ে থাকছে।
আওয়ামী লীগ বর্গীর মত দেশ শাসন করতে চায় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তারা দেশের সবকিছু লুটপাট করেছে। একটি স্বাধীন, সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে এই নিশিরাতের সরকার। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও এদের কবল থেকে বাদ পড়েনি।
২০১২ সালে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে আমরা বলে আসছি দেশে গুম হচ্ছে, বিরোধীের গুম করা হচ্ছে। আমাদের দলের ৬ হাজারোর বেশি নেতা কর্মীকে গুম করা হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনের প্রধান বাংলাদেশে এসে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে জেনেছেন। এর আগেও কয়েকবার আসতে চেয়েছেন কিন্তু এই সরকার তাকে অনুমতি দেয়নি। এখন সামনে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এজন্য আসতে অনুমতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের রিপোর্টে বাংলাদেশে বিনা বিচারে হত্যার কথা বলা হয়েছে। গুমের কথা বলা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার বলেছেন। প্রয়োজনে তারা সহযোগিতা করবে। আর তখনই আওয়ামী লীগের জ্বালা শুরু হয়ে গেছে।
এ সরকার শুধু বিরোধীদের ফ্যাসিস্ট কায়দায় দমন করবে। আয়নাঘর নামে তাদের একটি টর্চার সেল আছে। সেখানে কাউকে হত্যা করা হয়েছে, কাউকে বছরের পর বছর বন্দি করে রাখা হয়। এর আগে বিবিসির একটি জরিপেও উঠে এসেছে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের কথা।
তাদের দলের নেতারা বলেছে আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান নাকি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদানকে অস্বীকার করে তারা। ফখরুল বলেন, যারা জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সবকিছুর জন্য আওয়ামী লীগকে জবাব দিতে হবে। তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যেভাবে আমরা পাক-হানাদার বাহিনীকে হটিয়েছিলাম তেমনি আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মানববন্ধনে, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন এর সভাপতি অধ্যাপক ড. এবিএম ওয়াবয়দুল ইসলাম, মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোর্শেদ হাসান খান, বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আমারসংবাদ/টিএইচ