শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানস্থ কাজী বশির মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলন সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য সাধারণ জনগণ ও সংগঠনের সবস্তরের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান।
শান্তিপূর্ণভাবে লোকসমাগম উপস্থিতি করতে সব ধরণের প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ করা হয়েছে। হেফাজতের অবস্থান জানান দিতে ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন হবে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
হেফাজতের নির্ভরযোগা সূত্র আমার সংবাদকে জানিয়েছে, শনিবার হেফাজতের সম্মেলন থেকে সরকারকে ছয়টি দাবি বাস্তবায়নে আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। সম্মেলন থেকে দাবি বাস্তবায়নের সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। সেটি বাস্তবায়ন না করলে অতীতের মতো হেফাজতে ইসলাম আবারও মাঠে নামবে। দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে-
১ হেফাজত কর্তৃক ঘোষিত ১৩ দফা দাবি আদায়
২..কারাবন্দী হেফাজত নেতা-কর্মীদের মুক্তি
৩.হেফাজতের নামে ২০১৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার ।
৪.জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষা সঙ্কোচনের প্রতিবাদ।
৫.পাবলিক পরীক্ষায় ধর্ম বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ।
এবং জাতীয় শিক্ষা কমিশনে হক্কানি আলেম প্রতিনিধি রাখা।
হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন সফল করতে সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, আলেম-ওলামার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে সম্মেলন করার অনুমতি পেয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা হলরূম বুকিং ও দাওয়াতি কার্যক্রম সহ সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইনশাআল্লাহ শনিবার যথাসময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। ২০১১ সালে তারা বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন নীতির (২০০৯) কয়েকটি ধারাকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে এর তীব্র বিরোধিতা করে। ২০১৩ সালে ইসলাম ও রাসুলকে কটূক্তিকারী ব্লগারদের ফাঁসি চেয়ে ব্যাপক আন্দোলন-সমাবেশ এবং ১৩ দফা দাবিও উত্থাপন করে সংগঠনটি।
আজ সমাবেশ থেকে ১৩ দফা বাস্তবায়নে লিখিতভাবে তুলে ধরা হবে।
১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
২. আল্লাহ্, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
৩. কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
১২. সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
এআই