বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমরা এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আগামী দিনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করব।
তিনি বলেন, সারাদেশে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী আর কারাবন্দি রয়েছেন তাদেরকে মুক্ত করতে হবে। এই সরকারকে বিদায় করে আমরা তাদেরকে মুক্ত করতে চাই।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
১০ দফা দাবি আদায় ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তব্য শেষে মোশাররফ হোসেন আগামী ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে দুর্নীতিবাজ, গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণ বিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সরকারের সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার সহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশের ঘোষণা দেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার মেগা প্রজেক্ট করে মেগা দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে গত দশ বছরে প্রায় দশ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে। আমরা মনে করি আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েস করে এই টাকা আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা বিদেশে পাচার করেছে।
তিনি বলেন, আজকে ব্যাংকে ভোক্তা পর্যায়ে সুদের হার বৃদ্ধি করে তারা(সরকার) আইএমএফকে খুশী করতে চায়। কিন্তু আইএমএফ বলেছে তারা খুশী নয়, তারা আরও সংস্কার দেখতে চায়। তার অর্থ হচ্ছে আজকে আইএমএফ-ও বুঝতে পেরেছে যে এই বাংলাদেশের টাকা বিদেশে চলে গেছে। যার জন্য আজকে ডলারের সংকট, ব্যাংকগুলোতে তারল্যের সংকট। সরকার কোনো রকমে আর ধামাচাপা দিতে পারছে না।
মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না, বিদ্যুতের কমিশনকে তোয়াক্কা না করে দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে, বিএনপির সরকারের সময় বিদ্যুৎতের ইউনিট ছিলো ২ টাকা ৬০ পয়সা, আর এখন ১১ টাকা দিতে হয় এক ইউনিটে।
তিনি বলেন, সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ নামে জনগণের পকেট কাটছে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্রে আজ সরকারের লোকের পাচার করা টাকায় বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। আজ রিজার্ভ সংকট, ব্যাংকে তারল্য সংকট। আজকে বাংলাদেশে ধনী গরিবের ব্যবধান পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, যা গত ১২ বছরে সরকারের কারণে হয়েছে। আজকে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি গরীব হয়ে গিয়েছে।
সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একদিকে জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন। অন্যদিকে সরকার বিরোধী কে লাগামহীনভাবে দমনের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। এই সরকার অত্যাচারী, ফ্যাসিস্ট। সময় আর বেশিদিন নাই। রক্ষা পাবে না। ৭২ এর সংবিধানের কথা বলেন, কি কারনে বাকশাল করেছিলেন? বলতে কি পারবেন। প্রশাসন আর সরকার যৌথ ভাবে লুটপাট করছে । আমাদের সাফ কথা , মহান মুক্তিযদ্ধ গিয়েছিলাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ডাকে। অনেক শহীদ হয়েছেন যুদ্ধে। আমরা বেঁচে আছি এই দেশ দেখার জন্য। বোনাস পেয়েছিলাম ৬০ বছর, হয়তো আর কয়েকদিন বাঁচব। না হয় বাঁচলাম না । মুক্তিযুদ্ধের মত আমার যুদ্ধ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার জন্য জ্জীবন দিলাম।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছে, আর বাঁচার উপায় নাই। এ সরকার টাকা পাচার করে মালয়শিয়াসহ অন্য দেশে বাড়ি করেছে। আর বাংলাদেশের মানুষ কষ্ট করবে তা হতে পারে না। এটা হতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, এই সরকার সব অগণতান্ত্রিক কাজ করেছে। বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারী দল। বিএনপি আবার ধ্বংস স্তূপ গণতন্ত্র কে উদ্ধার করবে ইনশআল্লাহ।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের পকেট প্রতিমুহুর্তে কাটা হচ্ছে। এটা করছে ভোট চোর সরকার। তারা ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকা তে নিয়ে গেছে। প্রতি নিয়ত তারা জনগণের পকেট চুরি করে যাচ্ছে। এ টাকা তারা বিদেশে পাচার করছে। এই লুটপাট আগামী দিনে চলতে দেয়া হবে না। এখন সব লুণ্ঠনের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। কোনভাবেই তারা রেহাই পাবে না। বাংলাদেশের মানুষ আজ আন্দোলনের মালিকানা হাতে তুলে নিয়েছে ।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চলনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেন প্রিন্স, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
এবি