ঢাকায় রাজশক্তির মহড়া

আবদুর রহিম প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম
  •  পাঁচ মিনিটের দূরত্বে রাজধানীতে শক্তির খেলায় মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি  
  • বিদেশিদের নজরে আসতে দুদলেরই টার্গেট লাখ লাখ লোকের উপস্থিতির  
  • পল্টন, মতিঝিল ও প্রেস ক্লাবে বিএনপি, বায়তুল মোকাররমে ক্ষমতাসীন দল 
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্ঘাত সহিংসতা মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে  

ঢাকায় বইছে বিদেশি হাওয়া। এর মধ্যে শুরু রাজনৈতিক উত্তাপ। রাজপথে শক্তির খেলায় মুখোমুখি বড় দুই দল। আজ ১২ জুলাই রাজধানীতে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ। নয়াপল্টনে সমাবেশ থেকে সরকার পতনে এক দফা ঘোষণা করবে বিএনপি। একই সঙ্গে মতিঝিল প্রেস ক্লাব ও ফকিরাপুলে সমমনা ৩৬ দল। আর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, বিএনপি আবারও অগ্নিসন্ত্রাসের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে। তারা যদি বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয় তাহলে ঢাকায় গণতরঙ্গ বয়ে যাবে। স্বল্প দূরত্বের সমাবেশ নিয়ে চিন্তিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকায় কূটনৈতিক মিশনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের জনপ্রিয়তা উপস্থাপনের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। 

আজ বায়তুল মোকাররমে কমপক্ষে দেড় লাখ লোক উপস্থিত থাকবে বলে দলটির পক্ষ বলা হয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপিও বলছে— তাদের এক দফার কর্মসূচিতে লক্ষাধিক লোক উপস্থিত থাকবে। দু’দলেরই টার্গেট লোক সমাগমের মধ্যে দিয়ে  বিদেশিদের নজরে আসা। এ পরিস্থিতে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা করে বিশেষ মহলকে বার্তা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্তাক্ত সহিংসতা, নাশকতা, নৈরাজ্য মোকাবিলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে পুলিশ, র্যাব, এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোনো মূল্যে জানমাল রক্ষার জন্য প্রশাসনকে  নির্দেশ দিয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল।

জানা গেছে, আজ বুধবার নয়াপল্টনে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। পেয়েছে মৌখিক অনুমতি। একই দিন ঢাকায় শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজপথে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে দলটি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে গত রোববার। কিন্তু সোমবার সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের কথা জানায় দলটি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বেলা ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ হবে। সেখানে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বিশেষ বর্ধিতসভা করেছে। সেখানে থানা, ওয়ার্ডের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিতে আজ বুধবার সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠক শেষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১২ জুলাইয়ের শান্তি সমাবেশ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে জনসমুদ্রে রূপ নেবে। এদিন দেড় লক্ষাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে গুলিস্তান-নবাবপুর, দৈনিক বাংলা মোড়, মুক্তাঙ্গন-জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ আশপাশের এলাকা শুধু আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে। 

অন্যদিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ নিয়ে গতকালও চলে রুদ্বদ্ধার বৈঠক। বিএনপি ও তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন শীর্ষ নেতারা। সমাবেশে উপস্থিতি বাড়াতেও দিয়েছেন ‘বিশেষ বার্তা’। কমপক্ষে পাঁচ লাখ নেতাকর্মী উপস্থিতির টার্গেট তাদের। সমাবেশ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাইকে প্রচারণাও  চালায় বিএনপি। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন এ কয়দিন। নয়াপল্টনে প্রস্তুতি সভা করেছেন ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ প্রায় সবগুলো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন জমজমাট ও সরগরম। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতারা দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভাও সম্পন্ন করেছেন। 

বিএনপি সূত্রগুলো বলছে,  আজ যুগপৎ আন্দোলনের একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। একই সঙ্গে পৃথকভাবে একই কর্মসূচি ঘোষণা করবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। ওই দিন যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি এক দফার যৌথ ঘোষণাও দেয়া হবে। মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে এক দফার আন্দোলন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে শুরুতেই হরতাল অবরোধের মতো বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। 

বিএনপির মিডিয়া উইং আমার সংবাদকে জানিয়েছে , যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের ‘এক দফা, যৌথ ঘোষণা’ শিরোনামে নয়াপল্টনে নয়াপল্টন পার্টি অফিসে বেলা ২টা থেকে সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাব কনফারেন্স হলে বেলা ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা দেবে। ১২ দলীয় জোট ডিআরইউ মিলনায়তনে বেলা ৩টায় কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংক সংলগ্ন আল-রাজি কমপ্লেক্স সামনে সমাবেশ করবে। এলডিপি দলীয় অফিস এফডিসি সংলগ্ন স্থানে বিকেল ৫টায় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মতিঝিল গণফোরাম অফিসের সামনে বিকেল ৪টায় দলটিও কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ৩টায় গণঅধিকার পরিষদ (নুর), গণঅধিকার পরিষদ (রেজা ) গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য একই সময়ে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। বাংলাদেশ লেবার পার্টি  নয়াপল্টন মসজিদ গলিতে বেলা ৩টায় সমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট জাতীয় প্রেস ক্লাব সামনে বিকেল কর্মসূচি ঘোষণা করবে। 

এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন বলেন, ‘আজকে আমরা একটি অসম যুদ্ধে আছি। এই যুদ্ধটি হচ্ছে আমাদের দেশ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার যুদ্ধ। এই লড়াইটি সত্যিকার অর্থেই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। এই লড়াইয়ের জন্য সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে।’ তবে আমরা দেখছি এ যুদ্ধেও সরকার  সংঘাতের চেষ্টা করছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন ডাক দেয়া হবে। এর মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে একসঙ্গে করে যুগপৎ আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নেয়া হবে। সে জন্য ১২ জুলাই যৌথ ঘোষণা আসবে। দলগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে এক ঘোষণা দেবে। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির সহিংসতার পথে হাঁটার প্রয়োজন নেই, জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে। সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেরাই সহিংসতার পথে হাঁটছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের কর্মসূচিতে বাধা হামলা উপেক্ষা করে গণতরঙ্গ সৃষ্টি হবে।