বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখাচ্ছেন সেটি অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছে। তাদের প্রমোশন দিয়েছে। এত কাজ বেগম খালেদা জিয়া করেছেন, এত প্রতিহিংসা দেখিয়েছেন। কিন্তু তার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানুভবতা দেখিয়ে যাচ্ছেন, সেটি কি তারা কখনো করতো? শুধু তাই নয়, তারা (বিএনপি) এফবিআই’র এজেন্ড লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় কে আমেরিকায় অপহরণ করার পরিকল্পনা করেছে। সেই চক্রান্ত ফাঁস হয়েছে, এফবিআই’র বিচার হচ্ছে। বেগম জিয়া টিউলিপের নাম দেখে চুক্তি পর্যন্ত বাতিল করেছে। কী রকম প্রতিহিংসা তার। সেই মানুষটির প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা দেখাচ্ছেন সেটি অনেক বেশি বলে আমি মনে করি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তারা চানও না নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি অন্য কেউ নেতা হোক। অন্য কাউকে নেতা না বানানোর জন্যই খালেদা জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে দেন না।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতো সরকার- এমন কোনো শর্ত রেখেছেন কি না জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, এসব আজগুবি কথা কোথা থেকে বলে আমি জানি না। কারণ বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, আসলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না কেন জানেন? বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। সুতরাং তারা চান না নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির অন্য কেউ নেতা হোক। তাদের কথা যদি ধরে নেই তারা খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছেন আর আমাদের জনপ্রিয়তা কমে গেছে, তাহলে তাদের তো ক্ষমতায় যাওয়ার কথা যেভাবেই নির্বাচন হোক না কেন। এরপরও কেন নির্বাচনে যেতে চান না। তারা যদি জেতেও, তাহলে তো তারেক বা খালেদা জিয়া নেতা হতে পারবে না। আর কাউকে নেতা না বানানোর জন্য খালেদা জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে দেন না।
বিএনপি জানিয়েছে তারা সরকার পতনের আন্দোলনে আছে এবং ঢাকা ঘেরাও করবে- এ বিষয়টি সরকার কীভাবে দেখছে? জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবো না। দেশে আবার ২০১৩, ১৪, ১৫ সাল তৈরি করবে। ঢাকা শহর দুই কোটি মানুষের শহর, ফলে ঢাকা ঘেরাও করতে কোটি মানুষ প্রয়োজন হবে। আর ঢাকা শহরে আমরাও থাকি। যারা তাদের পার্টি অফিসের সামনে থেকে পালিয়ে গরুর বাজারে আশ্রয় নেয়, যারা বোরকা পরে হাইকোর্টে হাজির হয়, তারা কী করতে পারবে, কতটুকু করতে পারবে সেটা আমাদের জানা আছে। তবে কাউকে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা চালাতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, রাজপথে আছি, থাকবো এবং কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করার অপচেষ্টা চালায় তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করবো।
বিএনপি বলছে, সরকার আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাচ্ছে না- এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার আইনের কোনো ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। যদি তারা মনে করে সরকার আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে তাহলে তারা তো আদালতে যেতে পারে। আদালতের কাছে প্রশ্ন করতে পারে। আর আদালত সেটি পরিষ্কার করবে। বেগম খালেদা জিয়া একজন শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি। মামলাগুলো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। সেক্ষেত্রে তারা তো আদালতে গিয়ে ব্যাখ্যা চাইতে পারে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতি যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, বেগম জিয়া কি সে মহানুভবতা দেখিয়েছিলেন যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন? ক্ষমতায় থাকাকালীন সিএমএইচ হাসপাতালে রোগী দেখতে সেনানিবাসে ঢুকতে দেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেঁটে যেতে হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া সেই মানুষ যে নিজের জন্মতারিখ পরিবর্তন করে ১৫ আগস্ট করেছেন। তার জন্মদিন ৪/৫টি কোনোটায় ১৫ আগস্ট ছিল না। তার বিয়ের রেজিস্ট্রারে একটি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটি, পাসপোর্টে একটি, পরীক্ষার ফরম ফিলাপে একটি এবং সর্বশেষ করোনা হওয়ার পর আরও একটি জন্ম তারিখ দেখা গেছে। কোনোটাতেই ১৫ আগস্ট ছিল না। তিনি তারিখটা বদলে যেদিন মানুষ শোক দিবস পালন করে সেদিন তিনি কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সেই মানুষ যার দুয়ারে দেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়ে ২০ মিনিটের বেশি সময় দাঁড়িয়েছিল দরজা খোলা হয়নি। কী পরিমাণ দম্ভ, আহমিকা দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য দরজা খোলেনি।
বেগম খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করেছিল। আমাদের সরকার তার বিরুদ্ধে তো একটি মামলাও করেনি। যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সেই মামলায় তিনি সাজা খাটছেন এবং সেই মামলার বিচার হচ্ছে। আমাদের সরকার তো তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। গত ১৫ বছরে তাদের কোনো মিটিংয়ে একটি পটকা ফুটেছে? তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেছে। তারপরও তার প্রতি শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন সেটি অন্য কেউ হলে পারতেন না। অথচ বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন যে প্রতিহিংসা দেখিয়েছেন সেটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। আজকে তারা নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছে, কথা বলছে। অবশ্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিবের পদ রক্ষা করার জন্য কথা বলতে হয়। তাদের চাকরি রক্ষা করার জন্য এগুলো বলতে হয়। এভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা সমীচীন নয়।
আরএস