‘একটি অপরাধের মামলায় কোন মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি হতে পারেনা’

দেবীদ্বার(কুমিল্লা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম

বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, জাতির পিতাই হওয়া উচিত ছিল, আওয়ামী লীগের না। বাংলাদেশে বাস করবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করতে হবে? বাংলাদেশের নেতা যে, তাকে স্বীকার করবেনা, এমনটা মেনে নেয়ার নয়। যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে তারা আজ অবহেলিত, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল তারাই পদপদবীর মালিক বনে যাচ্ছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তি পেয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ শেষে সদ্য কারামুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহার বাড়িতে তাকে দেখতে গিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, কোন মুক্তিযোদ্ধার একটি  অপরাধের মামলায় ফাঁসি হতে পারেনা, এটা আইনে নাই। বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল নাহার উপর অবিচার করা হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ১৪ বছরের স্থলে তাকে ২৪ বছর কারা ভোগ করতে হয়েছে। এই দেশটাকে চেয়েছিলাম মানুষের দেশ হিসেবে, দানবের দেশ নয়। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সাধারণ মানুষের জন্য কিন্তু তা হয়নি।

এসময় উপস্থিত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দেবীদ্বারবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, আজকে স্বাধীনতার চেনাকে, স্বাধীনতার মর্মবণীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আপনারা সতর্ক থেকে সচেতনতার সঙ্গে সকল প্রকার অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলুন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীর প্রতীক, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ বিপ্লব বীর প্রতীক, সদস্য সারোয়ার হোসেন সজিব, সৈয়দ মাহববুর রহমান পারভেজ, যুব আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাবিবুন্নবী সোহেল, সদস্য মাহবুবুর রহমান রবিন, মো. সাকিল, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির, সদ্য কারামুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা প্রমুখ।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ‘বীর নিবাসের বরাদ্ধের চিঠি’ ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগদ দু’লক্ষ টাকা রাখাল চন্দ্র নাহার হাতে তুলে দেন।

এসময় সদ্য কারামুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহা বলেন, আমি এখন মুক্ত আকাশে নিচে আছি, শান্তিতে আছি, কারাগারে নাই, আমার মুক্তির জন্য দেশবাসী অনেক আন্দোলন করেছেন, আপনাদের কারণে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি, তাই সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।

উল্লেখ্য উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে নিখিল চন্দ্র। হত্যা মামলা দায়ের করার পর ওইদিনই সন্ধ্যায় দেবীদ্বার থানা পুলিশ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখাল চন্দ্র নাহাকে গ্রেপ্তার করে। নেপাল চন্দ্র নাহা পলাতক অবস্থায় মারা যান। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রাখাল চন্দ্র ও তার ভাই নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখাল চন্দ্র নাহার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ৩ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পায় পরিবার। পরের দিন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠন ও দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে দেবীদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ফাঁসির দণ্ড রহিত করার জন্য দাবি জানানো হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও। পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনকে এ বীর মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করার জন্য অনুরোধ করেন। ফাঁসি সম্পন্ন হওয়ার ৩ ঘণ্ট আগে অর্থাৎ রাত ৯টায় রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় ফাঁসির দণ্ড রহিত করেন। ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেন।
অবশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করে পাঁচ বছর ৭ মাস সাজা রেয়াত পাওয়ায় দীর্ঘ ২৪ বছরের কারা জীবনের অবসান ঘটে এবং গত ৩ জুলাই (রবিবার) দুপুরে কুমিল্লা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।

এআরএস