বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানিয়েছে আওয়ামী লীগ: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে মানুষের যেমন নিরাপত্তা নেই সীমান্তে কি বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা রয়েছে? এতোদিন দেখেছি, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ‘র হাতে সাধারণ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। আর এখন দেখছি, সীমান্তেও বিজিবির নিরাপত্তা নেই।

তিনি বলেন, গতকালও যশোর সীমান্তের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট—সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ‘র গুলিতে মোহাম্মদ রইসুদ্দীন নামে এক বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছেন। অন্য দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এটির সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত।

মঙ্গলার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

[273012]

রিজভী বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, শেখ হাসিনার ক্ষমতা লোভের ফলশ্রুতিতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ আজ তাবেদার রাষ্ট্র। অবৈধ সরকার আজ দেশবিরোধী ঘৃণ্যচক্রান্তের ক্রীড়নক। সীমান্তরক্ষিবাহিনী বিজিবি পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের আচরণ এখন আর ‍‍`বন্ধুপ্রতিম‍‍` নয় ‍‍`বন্দুক প্রতিম‍‍`। সীমান্তে বিজিবি সদস্য বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন। এর কী জবাব দিবেন শেখ হাসিনা? অথচ এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ভোটারবিহীন গণবিচ্ছিন্ন সরকার বাংলাদেশকে উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে। নিজেদের অমরত্ব লাভের জন্য ডামি সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশকে এক গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশকে ক্রমাগত স্বেচ্ছাতন্ত্রের বিষাক্ত আবর্তের মধ্যে নিপতিত করেছেন তিনি। প্রাণবন্ত গণতন্ত্রকে ধ্বংস ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্রমান্বয়ে খর্ব করে লুট, দাঙ্গা, হত্যা, ধ্বংস আর রক্তাক্ত উন্মাদনা সমার্থক অবৈধ আওয়ামী সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দেওলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে নেওয়া হয়েছে।

[273029]

তিনি বলেন, ভয়াবহ সংকটে দেশের অর্থনীতি। সবগুলো ব্যাংক বন্ধের দশা হয়েছে। দেশের ১০—১৫টি ব্যাংক যেকোনো সময় দেউলিয়া ঘোষণা হতে পারে। টাকা নেই সরকারের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাপিয়ে ছাপিয়ে টাকা দিচ্ছে। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এভাবে টাকা ছাপালে এই টাকা কাগজ হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি তলানিতে। দেশে ভয়াবহ ডলার সংকট চলছে। এই সংকটে বৈদেশিক মুদ্রা আসার অন্যতম উৎস বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বাড়েনি। ৯ মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২৪ শতাংশ! ইউরোপ—আমেরিকায় পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। ১১ মাসে আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমেছে। নজীরবিহীনভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।

রিজভী বলেন, রাজনীতিতে চলছে সর্বনাশা একনায়কতন্ত্র, শেখ হাসিনার একচ্ছত্র আধিপত্যে পর্যবসিত বাংলাদেশ। সামাজিক সংহতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নিজস্ব স্বার্থে বাংলাদেশকে করা হয়েছে কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর তাবেদার। এই শতকে সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট কতৃর্ত্ববাদী শাসন। 

দ্রব্যমূল্যের দামের চাপে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবী মানুষকে এখনো রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই ডামি সরকার ডাকাতদের সরকার। ওরা নিজেরাই ডাকাত, ভোট ডাকাতি করেছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের জেলে পুরে বাড়ী ছাড়া করে হামলা গায়েবি মামলা দিয়ে খুন গুম নিস্পেষন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মার্কা ভোট নাটক মঞ্চায়ন করে গতকাল ডামি ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ”৭ জানুয়ারির নির্বাচন নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু কিছু আঁতেল নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছে।” তার এই বক্তব্য বেতালমার্কা নির্লজ্জতা। তিনি যে ইতিহাস গড়েছেন তাহলো ভোট ডাকাতির এক নজীরবিহীন অভিনব দৃশ্য। এই আমি—ডামির পাতানো ভোটারবিহিন নির্বাচনকে শেখ হাসিনা বলছেন, ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। বাস্তবতা হলো জনগণের মতের প্রতিফলন নয়,—সেটা হলো এক ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন একটি অপরাধপ্রবণ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের ভোট নিয়ে তেলেসমাতি। আর যে কারণে জনগণ একযোগে ভোট বর্জন করেছেন। সন্ত্রাসীদের কায়দায় দখলদার অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা কথা চেঁচানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। প্রতিনিয়ত তারা লোক হাসানোর পাত্র হচ্ছেন। মিথ্যার বাড়াবাড়ি কোন বিজয় হতে পারে না।

[273016]

রিজভী বলেন, নিজেরা নিজেরা একদলীয় ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। এটা এখন আক্ষরিকভাবে বাকশালকে ২.০ ঘোষণার দিকেই ধাবিত করা হচ্ছে। যার প্রমাণ একদলীয় ডামি সংসদ হতে যাচ্ছে আরেক আজব রঙ্গমঞ্চ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঠিক করে দিচ্ছেন কে হবে বিরোধী দল। তিনি গতকাল বলেছেন, জাতীয় পার্টিই হচ্ছে নতুন সংসদের প্রধান বিরোধী দল। সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী বাছাই করেন বিরোধীদল কে হবে। গত নির্বাচনে এই পার্টি তাদের অস্তিত্ব আওয়ামী লীগে বিলীন করে দিয়েছিল। পোস্টারে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এই পার্টি এখন জাতীয় আওয়ামী পার্টিতে পরিণত হয়েছে।

এআরএস