বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘গুরুতর’ অসুস্থ, বন্দি অবস্থায় এখনো ‘মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন’।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা জানান।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রথম দিন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও বিএনপির মোট ২১ পরিবারের মাঝে উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এখনো বন্দি অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
গতকাল (২৭ মার্চ) রাতে তিনি এতো অসুস্থ হয়েছিলেন যে, চিকিৎসকরা সবাই বলছিল আর বোধ হয় বেশি সময় পাওয়া যাবে না। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া, তাকে তারা আপাতত চিকিৎসা দিয়ে সে অবস্থা থেকে ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায়সংগত আন্দোলন। সে আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো। বর্তমান সরকার একটা ফ্যাসিস্ট সরকার। দমনপীড়ন না করলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
১/১১ সময় প্রথম ভিকটিম তারেক রহমান দাবি করে ফখরুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আটক করে বিভিন্ন মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। এখনও তিনি নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
গুম, খুন ও নিপীড়ন নির্যাতনের স্বীকার হওয়া পরিবারের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ অবস্থা সারা দেশের। শুধু বিএনপির নয়। পুরো বাংলাদেশের মানুষের একই অবস্থা। পুরো দেশের মানুষ ভয়ে আতঙ্কে থাকে কখন কাকে কীভাবে তুলে নিয়ে যায়। কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটা একটা ভয়াবহ ব্যাপার। একটা জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপস্থিত শিশু-তরুণদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, তোমরা আশা হারাবে না। কখনো ভাববে না সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। কোনো ভীরুতা হতাশা যেন কাজ না করে। মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো।
বুধবার দুপুরে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হঠা অসুস্থ হয়েছিলেন। পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেন। সন্ধ্যার পরে তার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়।
এর আগে বিকালে খালেদার অবস্থার অবনতি হয়েছে জানিয়ে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত চিঠি দেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। পরে পরে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা গুলশানের বাসায় কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে হাসপাতালে নেওয়ার পরিকল্পনা বদলান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডারের অবস্থা আগের মতোই আছে। বাসায় মেডিকেল বোর্ডের ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন। সার্বক্ষণিক তার শারীরিক অবস্থা ‘ক্লোজড মনিটরিং’ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসনের আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া চান অধ্যাপক জাহিদ।
গত ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ভর্তি হয়ে একদিন পরই বাসায় ফেরেন।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড গত বছর অক্টোবরে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত ‘বিদেশে উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে’ তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সরকার তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ায় বিদেশ থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ঢাকায় এনে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভারে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করা হয়।
খালেদা জিয়ার সাজার স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।
বিআরইউ