তারেক রহমান

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪, ১২:১৮ এএম

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনবে বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বলেন, আমরা জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে আবারও সংযুক্ত করতে চাই।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসাবে সোমবার খুলনা বিভাগের সভায় তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের মালিকানা এদেশের মানুষের আর স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন তার ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দল বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্ন করতে দলীয় সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করেছিল। কিন্তু ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মুছে দিয়ে তিন তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত রেখেছে। আমরা আবারও এটি সংযুক্ত করতে চাই।

তিনি বলেন, বিএনপি দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করে। মানুষের নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতা, শান্তিতে ব্যবসা বানিজ্য করার অধিকার, তরুণ ও যুবকের কর্ম সংস্থান, নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা, ধর্মবর্ণ গোত্র গোষ্ঠী সমতল পাহাড়ি নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান রাষ্ট্রেীয় অধিকার নিশ্চিত করা, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা, বিচার আইন ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, সকলের জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা, কৃষি পন্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি এবং সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করাই বিএনপি রাজনীতির অগ্রাধিকার।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে জোর করে বের দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, ‘যে বাড়িতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাস করেছেন, যে বাড়ির প্রতিটি ইঞ্চিতে তার ও তার ভাইয়ের শৈশব কৈশোরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে, যে বাড়ি তার মায়ের সংসারের সূচনা আর বৈধব্যের বেদনার স্বাক্ষী সেই বাড়ি থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কতটা অসম্মান জনক ও অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে সেটা দেশবাসী দেখেছে। বিনা চিকিৎসায় তার একমাত্র ভাইকে নিদারুণ অবহেলায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে দলের তৃণমূলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে মামলা হামলায় জর্জরিত হয়ে, পরিবার পরিজন বিসর্জন দিয়ে, ব্যবসা চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। হয় কারাগারে নয়তো আত্মগোপনে আর অগণিত নেতাকর্মী অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন দেশকে ভালোবেসে, গণতন্ত্রে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে।

তৃণমূলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা যেমন অতীতের মতো প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করেন না তেমনি তিনি এবং দলের প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও জানেন যে, দেশের মানুষও গত সতের বছর বাংলাদেশ নামের এক বৃহত্তর কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করেছেন। সুতরাং আজ হিংসা নয় বরং দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে অতীতের সব অন্যায়ের জবাব দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

‘বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগ বঞ্চনা সহ্য করে বিএনপি আজ জনগনের যে আস্থা আর ভালোবাসা অর্জন করেছে দলের কিছু বিপথগামীদের হঠকারিতায় মানুষের সেই আস্থা আর প্রত্যাশার জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেটা কোন ভাবেই সহ্য করা হবে না সেটা তিনি যেই হোন না কেন’—যোগ করেন তারেক।

তিনি সমবেতদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিত করুন, প্রতিরোধ করুন, দল তাদের শুধু বহিষ্কারের অঙ্গীকারই নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিচ্ছে।

তিনি দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অসংখ্য অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বৈরাচারের পতন শুধুমাত্র প্রাথমিক বিজয়, সামনে রয়েছে প্রকৃত পরীক্ষা ফলে আত্মতুষ্টি আর সকল শিথিলতা কাটিয়ে আগামীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের আপামর জনগনের দলের প্রতি সমর্থন আর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে হবে।
ইএইচ