বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি মাওলানা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, দ্বীনের বিজয়ের জন্য ওলামায়ে কেরামদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। তাদেরকে জাতির মিনার হিসেবে দাঁড়াতে হবে। আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর নবী ও সাহাবায়ে কেরামদের পাগলপারা হয়ে কাজ করতে হবে। রাসুলের সাহাবিরা দ্বীন কায়েমের জন্য জান ও মালের ত্যাগ কুরবানিতে কোনো পরোয়া করেননি।
আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ৮টায় নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর ওলামা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর এদেশে আলেম ওলামাদের উপর চরম জুলুম নির্যাতন চালানো হয়েছে। দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার কারণে অতীতে অনেক নবীদের বিনা অপরাধে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ অসংখ্য আলেম ওলামাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করার অপরাধে হত্যা বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। দেশের শতকরা ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে আল্লাহর দ্বীন কায়েম হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা মমতাজুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় ওলামা কমিটির সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর, সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী ও ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম স্কলারস ফোরামের (কাতার) কার্যকরী কমিটির সদস্য, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও কেন্দ্রীয় ওলামা কমিটির সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।
আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম মহানগরী এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর শায়খুল হাদিস আল্লামা আলী উসমান, খুলশী সেগুনবাগান তালীমুল কোরআন কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান হাফেজ মুহাম্মদ তৈয়ব। সম্মেলনে দারসুল কুরআন পেশ করেন ইসলামী ব্যাংক শরিয়াহ কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় ওলামা কমিটির সদস্য মাওলানা আব্দুস সামাদ।
ওলামা-মাশায়েখদের উদ্দেশ্যে পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখেন, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের প্রফেসর ড. মাওলানা হাফেজ শাফি উদ্দিন আল মাদানী, প্রফেসর ড. বি এম মফিজুর রহমান আল আজহারী, প্রফেসর ড. মাওলানা শফিউল আলম ভুঁইয়া ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, বাইতুশ শরফ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু সালেহ মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ, পতেঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ড. মাওলানা আব্দুল মোতালেব, দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসা চট্টগ্রামের মুহাদ্দিস মাওলানা হাফেজ আহমদর রহমান, ওয়াজেদিয়া আলীয়া মাদ্রসা চট্টগ্রামের মুহাদ্দিস মাওলানা মাহবুবুর রহমান, জাকেরুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু হানিফা মো. নোমান।
সম্মেলন সঞ্চালনা করেন– অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, অধ্যক্ষ মাওলানা মিয়া মুহাম্মদ হোসাইন শরীফ, মাওলানা মুহসিন আল হোসাইনি, মাওলানা মহিউদ্দিন ও হাফেজ আব্দুল আজিজ শোয়াইব। নগর জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ নুর, ডা. এ কে এম ফজলুল হক, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আবু বকর ছিদ্দিক, আমির হোসাইন, ফখরে জাহান সিরাজী প্রমুখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ওলামা কমিটির সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আলেম-ওলামার মাঝে কোনো ভেদাভেদ থাকা যাবে না। কওমি আলিয়ার মাঝে যে প্রাচীর রয়েছে তা উঠিয়ে দিতে হবে। ইমাম-খতীব, আলেম-ওলামা, কওমি-আলিয়া সবাই মিলে সর্বসাধারণের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত, ঐক্যের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিজয়োত্তর আমাদের এই প্রিয় দেশকে সকল ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত করে দ্বীন কায়েমে সচেষ্ট হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এবার জামায়াতে ইসলামীকে বাংলার মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায়। নেতৃত্বের জন্য ওলামায়ে কেরামদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দাওয়াত সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ছোটখাটো বিষয়ে বিতর্কে জড়িত হওয়া যাবে না। কওমী আলিয়ার মাঝখানের দেয়াল ভেঙে দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীকে দেশ গড়ার সুযোগ দেয়া হলে তারা সন্ত্রাস, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ইসলাম এই জমিনে পরাজিত হওয়ার জন্য আসেনি। ইসলামী আন্দোলনকে কখনই পরাজিত করা যাবে না। কারণ আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। নানামুখি অপপ্রচার, জুলুম, নির্যাতনের পরও ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাবে। এ দেশের মাটি ও মানুষের সাথে ইসলাম মিশে আছে। যতই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হোক না কেন, কোন শক্তিই ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নগর জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, গত ১৭ বছর ইসলামের পক্ষে কথা বলার সুযোগ ছিল না। আলেম-ওলামারা কথা বলতে গেলেই কারাবরণ করতে হয়েছে। ব্রিটিশরাও ১৮৩ বছর ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, টিকে থাকতে পারেনি। ইসলামী শক্তিকে যতবেশি জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে ইসলাম ততটা শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে। নিষিদ্ধ করে জামায়াতে ইসলামীকে দমিয়ে রাখা যায়নি, কখনো দমিয়ে রাখা যাবে না। শেখ মুজিব চেষ্টা করে পারেনি তার মেয়ে হাসিনাও পারেনি। আমাদের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে ফাঁসি দিয়েছে। তারপরও জামায়াতে ইসলামীকে নিঃশেষ করতে পারেনি। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দেশ ছেড়ে পালাতে চাইলে তাঁকে বরণ করতে বিশ্বের বড় বড় দেশ গ্রহণ করতে রাজি ছিল তিনি পালাননি।
কেন্দ্রীয় ওলামা কমিটির সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে আলেম-ওলামারা জীবনবাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আলেম-ওলামারা মাঠে নেমেছিল। জালেম সরকার দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আলেম-ওলামারা কখনোই বাতিল শক্তির সাথে আপোশ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না, ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মমতাজুর রহমান বলেন, দ্বীন কায়েমের পথে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
বিআরইউ