‘ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ছাত্রশিবিরকে জ্ঞান ও নৈতিকতায় বলীয়ান হতে হবে’

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষিত ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলামী ছাত্রশিবির নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আদর্শ সমাজ গড়তে সৎ, দক্ষ ও দায়িত্বশীল কর্মী বাহিনী প্রয়োজন, যারা শুধু নিজেদের নয়, চারপাশের মানুষকেও ইতিবাচক পথে উদ্বুদ্ধ করবে। এজন্য ছাত্রশিবিরের কর্মীদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা ও আদর্শিক মান বজায় রেখে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে এবং জ্ঞান ও নৈতিকতায় বলীয়ান হতে হবে।’

বুধবার রাজধানীর মগবাজারস্থ আলা-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যকরী পরিষদের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অধিবেশনটি সকাল ৮টায় দারসুল কুরআনের মাধ্যমে শুরু হয়ে রাত ১২টা ১০ মিনিটে কেন্দ্রীয় সভাপতির সমাপনী বক্তব্য শেষে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয়।

অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান, মতিউর রহমান আকন্দ ও নুরুল ইসলাম বুলবুল।

অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ মিকদাদ হোসেন খান আকিবের পিতা নাটোর সিটি কলেজের অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন।

উদ্বোধন ঘোষণাকালে তিনি ছাত্রশিবিরের কাছে আগামী দিনে দেশ, জাতি এবং ছাত্রশিবিরের উন্নতির জন্য নানা আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একজন দায়িত্বশীলের জন্য অ্যাকাডেমিক দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার জ্ঞান ও মেধার এমন উৎকর্ষতা অর্জন করতে হবে, যাতে তিনি সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন। মেধাবিকাশের প্রতি মনোযোগ দিয়ে নিজেদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হবে। বাহ্যিক গুণাবলির পাশাপাশি নৈতিকতা ও মেধার উৎকর্ষের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্যকে উপস্থাপন করাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অন্যতম দায়িত্ব। কর্মীদের অ্যাকাডেমিক ও নৈতিক উৎকর্ষ অর্জনের মাধ্যমে ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্রদের হৃদয়ের স্পন্দনে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ।

নৈতিক উৎকর্ষতা অর্জনও সমানভাবে অপরিহার্য। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের নৈতিকতা ও আচরণ এমন হতে হবে, যা অন্যদের জন্য ইসলামের সৌন্দর্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কর্মীদের জীবনে সততা, বিনয় ও দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন থাকা উচিত। অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নৈতিক উন্নয়ন ছাড়া টেকসই সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের এই গুণাবলিই তাদের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা নিজেদের মাঝে গঠনমূলক সমালোচনার ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা অবলম্বন করবে। সমালোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে এটি ব্যক্তি ও সংগঠনের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে সমালোচনার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, আমরা যেটি বলছি, তা সঠিক কিনা। আমরা অনেক সময় যাচাই-বাছাই না করেই কোনো বিষয়ে মন্তব্য করে ফেলি। বিশেষ করে অনলাইন থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই না করে সমালোচনা করা এবং সমালোচনার ভাষা গঠনমূলক না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমাদের সমালোচনা বা প্রশংসা—সবকিছুই হওয়া উচিত সুন্নাহর আলোকে এবং ইসলামের নীতি মেনে।’

সমাপনী বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। ছাত্রশিবির তার কার্যক্রম সর্বদা জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং হিকমতের আলোকে পরিচালনা করে। তাই আমাদের গভীর অর্জনে অধ্যবসায় করতে হবে। জ্ঞানের নির্ভুল প্রথম উৎস হচ্ছে আল-কুরআন। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা বুঝার জন্য আমাদের আল-কুরআনের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, আল-কুরআন থেকে জ্ঞান অর্জন করলে আমাদের দ্বীন বুঝা, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়া সহজ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস হলো হাদিস। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের সঙ্গী নিজের মনগড়া কিছু বলেন না। এটা তো কেবল তাঁর প্রতি প্রেরিত অহী।’ (সূরা আন-নাজম: ৩-৪)। সুতরাং ইসলামের প্রকৃত মর্ম বুঝা, আমাদের আন্দোলনের দিকনির্দেশনা এবং সঠিক ব্যাখ্যা লাভের জন্য কুরআন ও হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে যাঁরা কুরআন-হাদিসের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যায় দক্ষ, তাঁদের দারস্থ হওয়া এবং তাঁদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাও অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘চব্বিশের অভ্যুত্থান আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের জ্ঞান, নৈতিকতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলিতে নিজেদের বলীয়ান করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া, যা সম্ভব নৈতিক শক্তি দিয়ে, পেশি শক্তি দিয়ে নয়।’

অধিবেশনের শেষ অংশে কেন্দ্রীয় সভাপতি পরিষদ সদস্যদের দেশ ও জাতির কল্যাণে নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান।

ইএইচ