জুলাই বিপ্লবের পর নব্য চাঁদাবাজ, দখলদার, ঘুষ ও মামলা বাণিজ্যকারীদের বিরুদ্ধে আবারও যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর কোনো চাঁদাবাজ আছেন? দুর্নীতিবাজ আছেন? ঘুষ বাণিজ্য আছে? যদি থেকে থাকে তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ এসব ছেড়ে দেন। আল্লাহর ওয়াস্তে ছেড়ে দেন। আমাদের বিনীত অনুরোধ যদি কেউ না মানেন, তাহলে জেনে রাখুন, আমাদের যুদ্ধ কিন্তু শেষ হয়নি। ইনসাফ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে। এজন্য আমাদের ছেলেরা এখনো স্লোগান দিচ্ছে ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’।’
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, ‘এ দেশে অনেকে শাসন করেছেন। আমাদের সন্তানেরা এতো এতো রক্ত কেন দিল? কারণ, তারা চেয়েছে এই সমাজ থেকে সব ধরনের দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কবর রচিত হোক। আমরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফের মাধ্যমেই বাংলাদেশ গড়তে চাই।
এজন্য আমাদের লড়াই এখনও চালিয়ে যেতে হবে। আমরা ত্যাগ অনেক করেছি, আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবন খুব ছোট, কাজ অনেক বড়। বিশ্রামের কোনো সময় নেই।
সারা দেশে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা এসব করছেন, বিনয়ের সাথে বলি এগুলো বন্ধ করেন। তবে যদি আমাদের এই বিনয়ী অনুরোধ কেউ না মানে, তাহলে আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। সন্তানেরা শ্লোগান দিচ্ছে- আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। যুদ্ধ চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আল্লাহর শক্তিতে বলীয়ান একটি জাতি গঠন করতে চাই।
সে জাতি হবে সাহসী জাতি, বীরের জাতি। সে জাতি আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথানত করবে না। এটা করেনি বলেই বিগত ১৫টি বছর আলেম-ওলামাদের ওপর বিগত সরকার তাণ্ডব চালিয়েছে। জামায়াতের দুজন আমিরসহ ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করেছে তাদের গুম করেছে। অসংখ্য ভাইকে খুন করেছে। চাকরি কেড়ে নিয়েছে, ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়েছে। কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেয়নি। মানুষের কল্যাণে কাজ করার কারণে অনেকে জিন্দা শহিদ হয়ে আছে। হাত পা টুকরা-টুকরা। এই কষ্টের জীবন নিয়ে তারা বেঁচে আছেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা রক্ত দিয়ে আজকের এই পরিবেশ দিয়ে গিয়েছে, আমরা তাদের প্রতি ঋণী এবং কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজীবন শোধ করতে হবে। কতজন আদম সন্তানকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারবে না। আন্দোলনের শেষ দিনগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে, সবকিছু অন্ধকারে রেখে অনেক লাশ গুম করা হয়েছে। স্তূপে স্তূপে লাশ। ট্রাকের ওপর ছুড়ে মারা হয়েছে। তারপর পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে লাশগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারব না।’
এমন সাহসী সন্তান থাকলে বাংলাদেশকে নিয়ে আর ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, ‘সাংবাদিক বন্ধুরা প্রশ্ন করেছে- আপনাদের দলের কতজন শহিদ হয়েছে। আমরা বলেছি, যারা শহিদ হয়েছে আমরা তাদের দলের মানুষ। তাদেরকে কোনো দলীয় পরিচয়ে আমরা তাদের সংকীর্ণ স্থানে নামাতে চায় না। তারা জাতীয় সম্পদ। তাদের আমরা মাথার ওপরে তুলে রাখতে চাই। এক হাত চলে গেছে, আরেক হাত নিয়ে যুদ্ধ করতে চায়। এমন সাহসী মানুষ থাকলে এই জাতির ওপর কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না।’
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. মো. কেরামত আলী। আর সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগরের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল।
দীর্ঘ ১৫ বছর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে সকাল থেকেই মাদরাসা মাঠে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
বিআরইউ