সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের শুরুতে বঙ্গবাজারের কাজ শুরু হবে
—তৌহিদ সিরাজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ডিএসসিসি
আগুনের পুড়ে যাওয়া রাজধানীর বঙ্গবাজারের জায়গায় ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের প্ররিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। ভবনটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে মার্কেটের কাজ শুরু হতে পারে। তবে মার্কেটের নাম বঙ্গবাজার থাকছে না। এটির নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’ রাখা হবে। ১০ তলাবিশিষ্ট এই ভবনে প্রায় তিন হাজার ৪২টি দোকান থাকবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি। মার্কেটটিতে থাকবে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের জায়গায় নতুন বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতানে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের আগে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে যারা আগে ছিল তাদেরকে প্রথমে দেয়া হবে। তবে সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মার্কেটটিতে রাখা হবে অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্ঘনা এড়াতে সব সরঞ্জামের ব্যবস্থা থাকবে। বর্তমানে নকশা নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব দ্রুত এটির নির্মাণকাজ শুরু হবে। ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর (মার্কেট নির্মাণ সেল) সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত নতুন নামের বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতানটি ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হবে। ১০ তলাবিশিষ্ট এই মার্কেটের বেজমেন্ট, গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ আটটি ফ্লোর থাকবে। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত দোকান থাকবে তিন হাজার ৪২টি। এর মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি, সপ্তম তলায় ৩১৩টি। অষ্টম তলায় দোকান মালিক সমিতির অফিস, কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীদের আবাস ও অন্য কক্ষ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত নকশায় আরও থাকবে ২২টি খাবারের দোকানের জায়গা। এর বাইরেও ৮১টি দোকান বেশি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট। সম্পূর্ণ বিপণিবিতানটিতে মোট আটটি লিফট থাকবে। এর মধ্যে ক্রেতাদের জন্য চারটি ও মালামাল ষ ওঠানো-নামানোর জন্য কার্গো লিফট থাকবে চারটি। এর বাইরে ১১টি সিঁড়ি থাকবে। ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি থাকবে ছয়টি। এ ছাড়া প্রতিটি ফ্লোরে চারটি করে টয়লেট থাকবে। পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮৩টি গাড়ি পার্কিং ও ১১০টি মোটরসাইকেল পার্কিং করা যাবে। ছয় লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ বর্গফুট আয়তনের এ ভবনটি তৈরি করতে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এই উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তবে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলে আবারো ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার পর সেখানে চৌকি ও শামিয়ানা টাঙিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারা। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলে এ ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। তাই সিটি কর্পোরেশন নতুন ভবন নির্মাণ করার আগে তাদের জন্য অস্থায়ী ব্যবসায়ী জায়গা ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। নয় তো তাদের পরিবার নিয়ে চলতে রাস্তায় নামতে হবে বলে ব্যবসীরা মনে করছেন। কারণ নতুন ভবনের কাজ শেষ হতে প্রায় কয়েক বছর লেগে যাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, বঙ্গবাজারে অধিকাংশই জামা-কাপড়ের দোকান। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কেনাকাটা করতে আসছেন ক্রেতারা। তবে রোদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেক ক্রেতাকে নাজেহাল দেখা গেছে। তবে দোকানগুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ে ছোট টেবিল ফ্যান চালিয়ে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার পর সেখানে বালু ফেলে চৌকি বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে দোকান মালিক সমিতি ও সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু গরমে টিকতে না পেরে শামিয়ানা টাঙিয়ে নিয়েছেন দোকানিরা। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি এলে পানি পড়ে। ক্রেতারা ও বিক্রেতারা ভিজে যান। আগে বঙ্গবাজারে যত ক্রেতা আসতেন, এখন তার ৩ ভাগের ১ ভাগ আসছেন। বেচাকেনা আগের তুলনায় কম। এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে হয়তো আবার ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ডিএসসিসি বঙ্গবাজারে ১০ তলা মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান বঙ্গবাজারের বহুতল ভবনের নকশা তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে, তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। মার্কেটের নকশা কেমন হবে বা মার্কেটে কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকবে তার জন্য ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়েছেন। আশা করি মার্কেটটি নির্মাণ হলে আগুনে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা তারা পোষাতে পারবেন।
এই সম্পর্কে মার্কেট নির্মাণ সেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তৌহিদ সিরাজ আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকৌশলীদের নকশার কাজ শেষ হলেই কাজ শুরু করতে পারব। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের শুরুতে বঙ্গবাজারের কাজ শুরু করা যাবে। এটি আধুনি সব সুবিধার সমন্বয়ে করা হবে। জরুরি মুহূর্তেও যেন অসুবিধা না হয় সেই ব্যবস্থাও থাকবে। দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে আগে যাদের দোকান ছিল তাদেরকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে। তাদেরকে দোকান বারাদ্দ দেয়ার পর বাকিদের বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে। বঙ্গবাজার হবে ঢাকার মধ্যে অন্যতম একটি মার্কেট। বঙ্গবাজারের নাম থাকবে না। এটি পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’ রাখা হবে। ১০ তলাবিশিষ্ট এই ভবনে মার্কেটটিতে থাকবে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ নানান সুযোগ-সুবিধা। ডিএসসিসির বিদ্যমান যেসব মার্কেটে রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিকভাবে তৈরি করা হবে বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান।