আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হয় আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য। আমরা দেখি, রাসূলুল্লাহ নিজের মিলাদ তথা জন্মের শুকরিয়া আদায়স্বরূপ প্রতি সোমবার রোযা রাখতেন। আবু কাতাদাহ আনসারী রা. বলেছেন, “রাসূল-কে সোমবারের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, সোমবার দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনে আমার প্রতি (প্রথম) ওহী নাযিল হয়েছে।” (সংক্ষেপিত, সহীহ মুসলিম, ১১৬২)
ঈদে মিলাদুন্নবী যে পদ্ধতিতে উদযাপন করা হয়, শরীয়াতে কি এর কোনো দলিল আছে?
প্রথমত, আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করাকে শারঈ ইবাদাত মনে করি না। শারঈ ইবাদাত কেবল সেগুলোই, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সুস্পষ্টভাবে আমাদের জন্য আবশ্যক করেছেন এবং নিয়মকানুন শিখিয়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, যদি পদ্ধতির কথা বলতে হয়, তাহলে ঈদে মি লাদুন্নবী উদযাপন করার সুন্নাহ-সমর্থিত পদ্ধতি হচ্ছে রোযা রাখা, যেহেতু রাসূল এ দিনে রোযা রেখেছেন। এছাড়া কুরআন শরীফে নিয়ামতকে স্মরণ করা এবং খুশি প্রকাশ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, যা আমরা প্রথম প্রশ্নের জবাবে উলেখ করেছি। অতএব রোযা রাখা, রাসূলুল্লাহ এর জন্মবৃত্তান্ত জীবনাদর্শ ও মানাকিব আলোচনা করার মাধ্যমে নিয়ামতকে স্মরণ করা এবং হালাল পন্থায় খুশি প্রকাশ করার দলিল রয়েছে। এবার যদি কেউ খুশি প্রকাশ করতে গিয়ে হারাম পন্থা অবলম্বন করে, তাহলে সেটি অবশ্যই বর্জনীয়। তো এটি কেবল মিলাদুন্নবীর ক্ষেত্রে নয়। বরং যে কোনো নামে, যে কোনো অনুষ্ঠান বা উদযাপন করার ক্ষেত্রে এ মূলনীতি কার্যকর হয়। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াজ করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ জীবনভর সাহাবিদেরকে ওয়াজ করেছেন। এবার কেউ যদি ওয়াজের জন্য জনসমাগম ঘটায় এবং শামিয়ানা টানিয়ে মাহফিলের আয়োজন করে, তাহলে সেটি একটি পদ্ধতিগত ইজতিহাদ হবে। যদি পদ্ধতি হালাল পন্থায় হয়, তাহলে তা মুবাহ অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য। আর পদ্ধতির মধ্যে হারাম কিছু প্রবেশ করলে তা অবশ্যই বর্জনীয়। কেউ যদি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম এভাবে ঘটা করে মিলাদুন্নবী পালন করেননি, তাহলে সেটি ঠিক কথা। তবে সাহাবিরা ঘটা করে সীরাত কনফারেন্স, ওয়াজ মাহফিল কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানও পালন করেননি। অথচ আমাদের সময়ে প্রত্যেক দল ও গোষ্ঠী যার যার অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত আড়ম্বর সহকারে পালন করে। এটি একটি পদ্ধতিগত ইজতিহাদ ব্যতীত আর কিছুই নয়। চলবে....
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ, অধ্যয়ণরত- (মাস্টার্স) রিলিজিয়াস স্টাডিজের অধীনস্থ ইসলামিক স্টাডিজ, এয়ারফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানী