আজকের জুমার খুতবা: গুনাহমুক্ত জীবনই মুমিনের লক্ষ্য

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৩, ১২:২৭ পিএম

আজ শুক্রবার। বরকতময় শাওয়াল মাসের দ্বিতীয় জুমা আজ। ০৫ মে ২০২৩ ইংরেজি, ২২ বৈশাখ ১৪৩০ বাংলা, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৪ হিজরি। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- গুনাহমুক্ত জীবনই মুমিনের লক্ষ্য।

প্রিয় মুসল্লিগণ!

রমজান মাস অতিবাহিত হওয়ার পর দ্বিতীয় জুমা এটি। রমজান মাসে তওবার মাধ্যমে নিজেদের গুনাহমুক্ত করেছে মুমিন রোজাদার। গুনাহ থেকে ফিরে আসা মুমিনের এ পথচলা অব্যাহত থাকা জরুরি। এ জন্য রমজান পরবর্তী এ সময়েও তওবাহ-ইসতেগফারে নিয়োজিত থাকার বিকল্প নেই। কারণ গুনাহমুক্ত জীবনই মুমিনের লক্ষ্য। আর গুনাহ মুক্ত জীবনের জন্য তওবা-ইসতেগফার খুবই জরুরি আমল।

মানুষ গুনাহ ও ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত নয়। প্রত্যেক আদম সন্তান গুনাহ করে তবে সর্বোত্তম পাপী হলো, তওবাকারী। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাণীতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-


وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ يُمَتِّعۡكُم مَّتَٰعًا حَسَنًا إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمّٗى وَيُؤۡتِ كُلَّ ذِي فَضۡلٖ فَضۡلَهُۥۖ وَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٖ كَبِيرٍ

‘আরও যে, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাঁর দিকে ফিরে আস, তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট কালের এক উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং তিনি প্রত্যেক গুণীজনকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দান করবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উপর মহাদিনের শাস্তির আশংকা করি।’ (সুরা হুদ: আয়াত ৩)

আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা এভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন-

قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ فَٱسۡتَقِيمُوٓاْ إِلَيۡهِ وَٱسۡتَغۡفِرُوهُۗ

‘(হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, তবে আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মা‘বুদ একমাত্র মা‘বুদ। অতএব তাঁরই পথ দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ (সুরা হা-মীম-সিজদাহ: আয়াত ৬)

আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উদ্দেশ্যে তওবার করার নির্দেশ দিয়ে বলেন-

وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা আন-নুর: আয়াত ৩১)

মানুষ আল্লাহর কাছে কীভাবে ক্ষমা করবেন, কীভাবে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাআলা মানুষের পাপগুলো মুছে দেবেন সে বর্ণনা তুলে ধরে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা। আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।’ (সুরা আত-তাহরিম: আয়াত ৮)

তওবাকারীরা আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দের। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ২২২)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকের একাদিক বর্ণনা তওবাকারীর কথা এভাবে তুলে ধরেছেন-

১. হজরত আগাররা ইবন ইয়াসার আল-মুজানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللهِ، فَإِنِّي أَتُوبُ، فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ، مَرَّةٍ

‘হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর। কারণ, আমি প্রতিদিন একশত বার তওবা করি।’ (মুসলিম ২৭০২)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-

وَاللَّهِ إِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي اليَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً

‘আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও ৭০ বারেরও অধিক তওবা করি।’ (বুখারি ৬৩০৭)

৩. হজরত আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ، مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ، فَأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتَى شَجَرَةً، فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا، قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ، فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا، قَائِمَةً عِنْدَهُ، فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ: اللهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ، أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ

‘বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তওবা করে, তখন আল্লাহ ওই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশি হন, যে বিশাল বিস্তৃত মুরুভূমিতে সফর করছিল, হঠাৎ তার বাহন হারিয়ে গেল, যে বাহনে তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। কোনো উপায় না দেখে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় একটি গাছের ছায়ায় সে শুয়ে পড়লো। এমতাবস্থায় হঠাৎ বাহনটি তার পাশেই উপস্থিত হলো। সে লাগাম হাতে নিয়ে আনন্দের অতিশয্যে বলে ফেললো, আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার প্রভু। অতি আনন্দে ভুল বলে ফেলল।’ (মুসলিম ২৭৪৭)

আল্লাহ তাআলা বান্দার তওবাতে বেশি খুশি হওয়ার কারণ হচ্ছে- তিনি তওবা ও ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অনুরূপভাবে তিনি এটাও ভালোবাসেন যে বান্দা তার কাছ থেকে পলায়ন করার পর আবার তার কাছে ফিরে আসছে।

৪. হজরত আনাস এবং ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ وَادِيًا مِنْ ذَهَبٍ أَحَبَّ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَادِيَانِ، وَلَنْ يَمْلَأَ فَاهُ إِلَّا التُّرَابُ، وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ

‘বনি আদমের যদি স্বর্ণের একটি উপত্যকা থকে, তাহলে সে তখন দু’টি উপত্যকার কামনা করে। মাটিই একমাত্র তার মুখ ভরতে পারে। আর যে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।’ (বুখারি ৬৪৩৬,  মুসলিম ১০৪৯)

সুতরাং বোঝা গেলো তওবা হলো, আল্লাহর নাফরমানি ছেড়ে, তার আনুগত্যে ফিরে আসা। যখনই বান্দার মাঝে প্রভুর অবাধ্যতা প্রকাশ পাবে, তখন সেটা থেকে তওবা হচ্ছে, তার কাছে ভীত, সন্ত্রস্ত, লজ্জিত ও নত হয়ে ফিরে আসা ও তার দরজায় দাড়ানো।

গুনাহ বা অন্যায় হয়ে গেল তাৎক্ষণিকভাবে তওবা করা ওয়াজিব। অন্যায়ের পর তওবার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা বা গড়িমসি করা জায়েয নেই। কারণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে আদেশ করেছেন। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ তৎক্ষণাৎ পালনীয়। কারণ, বান্দার জানা নেই যে, বিলম্বে কী পরিণতি হবে। হতে পারে হঠাৎ তার মৃত্যু এসে যাবে, আর তওবার সুযোগ ঘটবে না।

তওবা কবুল হওয়ার শর্ত

প্রথম শর্ত: তওবা একান্তভাবে আল্লাহর কাছে করতে হবে

আল্লাহর ভালোবাসা, তাঁর প্রতি সম্মান, সওয়াবের আশায়, তার শাস্তির ভয় তাকে তওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে। এ তওবার মধ্যে মাখলুকের মহব্বত বা দুনিয়ার তুচ্ছ কোনো স্বার্থ থাকতে পারবে না। অন্যথায় তওবা কবুল হবে না। কারণ, সে আল্লাহর কাছে তওবা করেনি; বরং ওই উদ্দেশ্যের কাছে সে তওবা করেছে।

দ্বিতীয় শর্ত: কৃত অপরাধের জন্য লজ্জিত হতে হবে

অপরাধী তার অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হবে, এই গুনাহ যদি না হতো- এমন আশা করবে। ফলে এই লজ্জা ও পেরেশানীর কারণে সে আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে, তাঁর সমীপে নত হবে এবং যে নফস তাকে অন্যায় করতে প্ররোচিত করেছিল তার প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হবে; আর এভাবেই তার তওবা হবে বিশ্বাস ও সঠিক অনুধাবন থেকে উদ্ভূত।

তৃতীয় শর্ত: তৎক্ষণাৎ সে গুনাহ বর্জন করা

নাফরমানি যদি হারাম কাজ করার ফলে হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তা পরিত্যাগ করতে হবে। আর যদি নাফরমানি ওয়াজিব বর্জন করার কারণে হয়, তবে তা তখনই করতে হবে, যদি তার কাজা সম্ভব হয়, যেমন, যাকাত, হজ।

চতুর্থ শর্ত: ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা

কারণ তওবার ফলাফল এটাই, যা তওবাকারীর সত্যবাদিতার প্রমাণ। যদি বলে যে ‘সে তওবাকারী’ অথচ সে কোনো একদিন গুনাহ করার সংকল্পবদ্ধ বা দোদুল্যমান থাকে, তাহলে তার তওবা বিশুদ্ধ হবে না। কারণ, এটা সাময়িক তওবা, এ তওবাকারী উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় আছে যখন সে আবার এ গুনাহটি করবে। এর মাধ্যমে লোকটিকে ঘৃণাবশত গুনাহ থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বুঝায় না।

পঞ্চম শর্ত: তওবা কবুলের সময় অতিক্রান্ত না হওয়া

কোনোভাবেই তওবা কবুলের সময় অতিক্রম করা যাবে না। কেননা, সময় অতিক্রম করার পর তওবা করলে, তা গৃহীত হবে না। তওবা কবুলের শেষ সময় দু’ প্রকার-

১. সকলের জন্য সমানভাবে ও

২. প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বিশেষ।

মনে রাখতে হবে, গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তওবা কবুল হয় না। উদাহরণস্বরূপ-

কেউ সুদের লেনদেনে লিপ্ত থেকে বললো, হে আল্লাহ! আমি সুদ থেকে তওবা করছি। তাহলে তার তওবা বিশুদ্ধ হবে না; বরং এ হলো আল্লাহর সঙ্গে ঠাট্টার শামিল, যা বান্দাকে আল্লাহ থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয়। ঠিক অনুরূপভাবে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় না করার গুনাহ থেকে তওবা করলো অথচ এখনো জামাতে নামাজ আদায় বর্জন করেই চলে তবে তার সে তওবা বিশুদ্ধ হয়নি।

যতক্ষণ পর্যন্ত তওবা কবুল হয়

সকলের জন্য সাধারণভাবে সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়া। তখন আর তওবা কোনো উপকারে আসবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

يَوۡمَ يَأۡتِي بَعۡضُ ءَايَٰتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفۡسًا إِيمَٰنُهَا لَمۡ تَكُنۡ ءَامَنَتۡ مِن قَبۡلُ أَوۡ كَسَبَتۡ فِيٓ إِيمَٰنِهَا خَيۡرٗا

‘যে দিন আপনার পালনকর্তার কোনো নিদর্শন আসবে, সে দিন এমন কোনো ব্যক্তির ঈমান আনয়ন তার জন্য ফলপ্রসু হবে না যে আগে থেকে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা স্বীয় ঈমান অনুযায়ী কোনোরূপ সৎকর্ম করেনি।’ (সুরা আল-আনআম: আয়াত ১৮৫)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেনম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

ولا تزال التوبة تقبل حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، فَإِذَا طَلَعَتْ طُبِعَ عَلَى كُلِّ قَلْبٍ بِمَا فِيهِ وَكُفِيَ النَّاسُ الْعَمَلَ

‘তওবা সর্বদা কবুল হতে থাকে সূর্য পশ্চিম আকাশ হতে উদিত হওয়া পর্যন্ত। উদয় হলে প্রত্যেকের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়। মানুষের জন্য তার আমল যথেষ্ট হয়ে যায়।’ (আহমাদ ১/১৯২; ইবন কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া পৃ. ১৩৭)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، تَابَ اللهُ عَلَيْهِ

‘যে ব্যক্তি সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয়ের আগে তওবা করবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।’ (মুসলিম ২৭০৩)

যখন তওবা কবুল হবে না

প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বিশেষভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার সময় হলে গেলে তওবা কবুল হবে না। যখন কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে এবং মৃত্যু প্রত্যক্ষ করবে তখন তওবা তার কোনো উপকারে আসবে না এবং গৃহীতও হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلَيۡسَتِ ٱلتَّوۡبَةُ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ حَتَّىٰٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ إِنِّي تُبۡتُ ٱلۡـَٰٔنَ

‘আর এমন লোকদের তওবা কবুল হবে না যারা মন্দ কাজ করে। এমনকি যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।’ (সুরা আত-তওবা: আয়াত ১৮)

হজরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ العَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার তওবা গরগরার (রূহ ওষ্ঠাগত হবার) পূর্ব পর্যন্ত কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ২/১৩২, তিরমিজি ৩৫৩৮, ইবনে মাজাহ ৪২৫৩)

যখনই মুমিন বান্দা সব শর্ত পূরণের মাধ্যমে তওবা করবেন, তখন তার তওবা বিশুদ্ধ ও গৃহীত হবে। আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ

‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আয-যুমার: আয়াত ৫৩)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا

‘যে গুনাহ করে কিংবা নিজের ওপর জুলুম করে এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় পাবে।’ (সুরা আন-নিসা: আয়াত ১১০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে তওবা করার তাওফিক দান করুন। সবার তওবা কবুল করুন। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে তওবার শর্তগুলো মেনে গুনাহ থেকে ফিরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এইচআর