যে সুন্নত নামাজের গুরুত্ব দিয়েছেন রাসূল সা.

ধর্ম ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৩, ০৮:০১ এএম

মুমিন মুসলমান ফরজের আগে-পরে সুন্নত নামাজ আদায় করেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিন-রাতে বিভিন্ন সময় সুন্নত নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের ফরজ নামাজের আগে সুন্নত নামাজ পড়ার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে।

ফজরের সুন্নত নামাজ

ফজরের সুন্নত নামাজ পড়ার ব্যাপারে হাদিসে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে বিশেষ ফজিলত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাজে এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, অন্য কোনো নফল (সুন্নত) নামাজে তা দেননি।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ফজরের এ সুন্নত নামাজ সম্পর্কে হাদিসে আরো যেসব বর্ণনা এসেছে, তাহলো-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা এ দুই রাকাত (সুন্নত) কখনো ত্যাগ করো না, যদিও শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করে।’ (আবু দাউদ)

২. হজরত আবু উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেন, হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু কখনো মসজিদে এসে দেখতেন, ফজরের জামাত চলছে। তিনি মসজিদের এক কোণায় (ফজরের) দুই রাকাত (সুন্নত) পড়ে নিতেন। তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করতেন। (শরহু মাআনিল আসার)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- তোমরা ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত)-এর ব্যাপারে পুরোপুরি যত্নবান হও। কারণ তা ফজিলতপূর্ণ বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত।’ (মুসনাদে আহমাদ)

এ কারণেই সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িগণ ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করেছেন।  এমনকি অনেক বুজুর্গানে দ্বীন ফজরের জামাত শুরু হওয়ার পরও আগে সুন্নত আদায় করেছেন তারপর ফজরের জামাতে অংশগ্রহণ করেছেন। হাদিসে এসেছে-

৪. হজরত যায়েদ ইবনে আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে এসে দেখেন, ফজরের জামাত চলছে। কিন্তু তাঁর ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়া হয়নি। তিনি হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার কামরায় তা পড়লেন। তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করলেন।

৫. হজরত আবু মিজলায রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি ফজরের জামাত চলা অবস্থায় হজরত ইবনে আব্বাস ও ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করলাম। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জামাতের কাতারে প্রবেশ করলেন। আর হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়লেন। তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করলেন।’

৬. হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, (কূফার গভর্নর) সায়িদ ইবনে আস তাঁকে এবং হুযায়ফা ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে ফজরের নামাজের আগে ডাকলেন। তাঁরা (কাজ শেষে) তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ইতোমধ্যে মসজিদে ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের একটি খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়লেন। তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করলেন। (শরহু মাআনিল আসার)

৭. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম)

ফজরের সুন্নত নামাজ আদায়ের গুরুত্ব মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে পাকে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত ফজর নামাজের আগেই সুন্নত যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তা আদায় করা। তবে ফরজ নামাজ আদায়ে মসজিদে যাওয়ার আগে নিজ ঘরে এ সুন্নত পড়াই উত্তম।  আবার জামাত শুরু হোক কিংবা না হোক সুন্নত নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মসজিদের বাহিরের অংশে পড়া কিংবা জামাতের কাতার থেকে দূরে পড়া উত্তম। তা হতে পারে বারান্দা কিংবা খুঁটির আড়ালে।

যদি কখনো এমন হয় যে-

ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে কিংবা জামাত শুরু হয়ে গেছে; সে ক্ষেত্রে ফজরের সুন্নত নামাজ ছাড়া অন্য সুন্নত হলে তা না পড়ে জামাতে শরিক হওয়া জরুরি। আর যদি ফজরের সুন্নত নামাজ হয় তখন দেখতে হবে, সুন্নত পড়ে জামাত পাওয়া যাবে কিনা। যদি মনে হয় যে সুন্নত পড়েও জামাত পাওয়া যাবে তবে ফজরে সুন্নত নামাজ পড়ে নেয়া উত্তম।

মনে রাখতে হবে

জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো এবং তাকবিরে উলা তথা প্রথম তাকবিরসহ জামাতে অংশগ্রহণের ফজিলতও অনেক বেশি। তাই ফজরের সুন্নত নামাজ ধীরস্থিরভাবে আদায়ের জন্য আগে আগে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। অথবা বাসা কিংবা ঘর থেকে সুন্নত পড়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়াই উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের সুন্নত নামাজ যথাযথভাবে নিয়মিত আদায় করার তাওফিক দান করুন। ফজরের সুন্নত আদায়ের পর তাকবিরা উলার সঙ্গে ফজরের জামাতে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।