ঈদের নামাজ কীভাবে পড়তে হয়, তা অনেকেই জানি না। ঈদ উল ফিতরের নামাজ দুই রাকাত। ৬ তাকবিরে এ নামাজ শেষ করতে হয়।
যেভাবে ঈদ উল ফিতরের নামাজ আদায় করবেন:
ঈদের নামাজ দুই রাকাত। নিয়ত করে ইমামের সাথে তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজ শুরু করে সানা পড়বেন। সানা পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’‘আল্লাহু আকবার’‘আল্লাহু আকবার’ বলে আরও তিনটি তাকবির বলবেন।
প্রথম দুই তাকবির বলার সময় উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠিয়ে হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবেন। তৃতীয় তাকবির বলার সময় কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠিয়ে বেঁধে নেবেন। অতঃপর সুরা-কেরাত পড়ে রুকুতে যাবেন।
দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে সূরা-কেরাত পড়ে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে আগের নিয়মে তিনটি তাকবির বলবেন। তবে দ্বিতীয় রাকাতে তৃতীয় তাকবির বলার সময়ও হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবেন। অতঃপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকু করবেন। এরপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় যথারীতি নামাজ শেষ করবেন।
-কিতাবুল আসল : ১/৩১৯
ঈদের অতিরিক্ত তাকবিরে ভুল হলে:
ইমাম যদি প্রথম রাকাতে ভুলে অতিরিক্ত তাকবির না বলে কেরাত শুরু করে দেয় তাহলে কেরাত অবস্থায় তাকবিরের কথা স্মরণ হলে কেরাত ছেড়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলে নেবেন। অতঃপর পুনরায় কেরাত পড়ে নেবেন। কেরাত শেষ হওয়ার পর তাকবিরের কথা স্মরণ হলে তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন।
-শরহুল মুনইয়া : পৃ. ৫৭২
ইমাম ঈদের অতিরিক্ত তাকবির ভুলে রুকুতে চলে গেলে (চাই প্রথম রাকাতের তাকবির হোক বা দ্বিতীয় রাকাতের) তাকবির বলার জন্য আর রুকু থেকে ফিরে আসবে না। এবং বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী রুকুতেও তাকবির বলবে না। এক্ষেত্রে নামাজ শেষে সিজদায়ে সাহু করে নেবে। (যদি জামাত ছোট হয়)
-আল বাহরুর রায়েক : ২/১৬১
ঈদের অতিরিক্ত তাকবির ভুলে রুকুতে চলে যাওয়ার পর তাকবির আদায়ের জন্য রুকু থেকে ফিরে আসলে যদিও কোনো কোনো ফকিহ নামাজ ফাসেদ হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তবুও বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী কাজটি ভুল হলেও এ কারণে নামাজ নষ্ট হবে না।
-রদ্দুল মুহতার : ২/১৭৪
ঈদের নামাজে মাসবুক হলে করণীয়:
কেউ প্রথম রাকাতে ঈদের অতিরিক্ত তাকবির বলার পর ইমামের সঙ্গে শরিক হলে সে তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজে শরিক হওয়ার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলে নেবে; চাই এক্ষেত্রে ইমাম কেরাত পড়া অবস্থায় থাকুন না কেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে নামাজে শরিক হওয়ার পর দাঁড়ানো অবস্থায় (রুকুর আগে আগে) তাকবির আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি আদায় না করে তাহলে পরে আর রুকুতে তাকবির বলবে না।
-আল বাহরুর রায়েক : ২/১৬১
ইমামকে রুকুতে পেলে সেক্ষেত্রে যদি প্রবল ধারণা হয়, দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বললেও ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হতে পারবে তাহলে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলে ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হবে।
আর যদি প্রবল ধারণা হয়, দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবির বলতে গেলে ইমামকে রুকুতে পাওয়া যাবে না, তাহলে তাকবিরে তাহরিমা বলে রুকুতে চলে যাবে। রুকুতে গিয়ে ছুটে যাওয়া অতিরিক্ত তাকবিরগুলো হাত উঠানো ছাড়া বলে নেবে। এরপর যদি সময় থাকে তাহলে রুকুর তাসবিহ আদায় করবে।
-আল মুহিতুল বুরহানি : ২/৪৮৮
ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হওয়ার পর অতিরিক্ত তাকবির বলার মত সময় না পেলে আর তাকবির বলতে হবে না। ইমামের সঙ্গে রুকু পাওয়ার কারণে সে ওই রাকাত পেয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকবিরও পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৬১৮
কেউ দ্বিতীয় রাকাতে ইমামের সঙ্গে শরিক হলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে সূরা-কেরাত পড়ে তারপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবির বলবে। অর্থাৎ ছুটে যাওয়া রাকাতেও দ্বিতীয় রাকাতের ন্যায় রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবির বলবে। অবশ্য যদি কেউ এক্ষেত্রে সূরা-কেরাতের আগে অতিরিক্ত তাকবির বলে নেয় তাহলেও তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
-কিতাবুল আসল : ১/৩২২
দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পর এমনকি শেষ বৈঠকের তাশাহহুদের পরও কেউ জামাতে শরিক হলে সে ঈদের জামাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে ইমামের সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই উভয় রাকাত আদায় করবে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের পর দাঁড়িয়ে কেরাতের পূর্বে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর অতিরিক্ত তাকবির বলবে।
-কিতাবুল আসল : ১/৩২২
ঈদের নামাজে সাহু সিজদা:
অন্যান্য নামাজের ন্যায় ঈদের নামাজেও জামাত ছোট হলে এবং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা না থাকলে ওয়াজিব ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়। তবে যেহেতু ঈদের জামাতে সাধারণত অনেক বড় জমায়েত হয়ে থাকে, অনেক মানুষ সিজদায়ে সাহুর নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে না, তাই সিজদায়ে সাহু আদায় করতে গেলে অনেক সময় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এ জন্য কোনো কোনো ফকিহের মতে ঈদ, জুমা বা এরকম বড় কোনো জামাতের ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব সিজদায়ে সাহু করতে গেলে যদি মুসল্লিদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু মাফ হয়ে যাবে। ইমাম স্বাভাবিক নিয়মে নামাজ শেষ করবে।
-কিতাবুল আসল : ১/৩২৪
ঈদের নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক:
ঈদুল আজহার নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক বলা যেতে পারে। তবে ফরজ নামাজের মত ঈদের নামাযের পর তাকবির বলা ওয়াজিব নয়।
-আল বাহরুর রায়েক : ২/১৬৫
বিআরইউ