মহান আল্লাহ তায়ালা ভালোবেসে কুল মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। জিন ও ইনসান তৈরি করেছেন আল্লাহ তায়ালার পরিচিতির জন্য। মানুষকে খলিফা হিসেবে পৃথিবীতে পাঠালেন যাঁরা দায়িত্ব পালনে সফল হবেন, তাঁদের সম্মানিত করবেন বন্ধুত্বের মর্যাদায়। মানুষ সামাজিক জীব ও প্রকৃতির অংশ, সুষ্ঠুভাবে জীবনধারণের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন জরুরি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানোর শত–সহস্র বছর আগেই পৃথিবীকে সাজিয়েছেন প্রাকৃতিক সম্পদে। আগুন, পানি, বাতাস, মাটি—এ মূল চার উপাদানে সৃজন করলেন প্রকৃতি। পাহাড়, সাগর, নদী–নালা, খাল–বিল, গাছপালা, উদ্ভিদ ও তৃণলতা; ফলমূল, বৃক্ষ–তরু; পশু–পাখি, জীব, জড়, প্রাণী—এসব দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ করে সাজালেন এই জগৎ ও সংসার।
প্রথম মানুষ ও নবী আদি পিতা হযরত বাবা আদম (আ.) থেকে শুরু করে দ্বিতীয় আদম খ্যাত নবী ও রাসুল হযরত নূহ (আ.)–এর আগ পর্যন্ত বহু নবী–রাসুলকে আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছিলেন তাঁর সৃষ্ট প্রকৃতিকে সাজিয়ে মানুষের বসবাসযোগ্য সামাজিক পরিবেশ উন্নয়নের দায়িত্ব দিয়ে। তৎপরবর্তী সর্বশেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সব নবী–রাসুলই শহর, বন্দর ও নগর নির্মাণ করেছেন।
[279164]
সৃষ্টি ও সৃষ্ট জগতের শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা ও সামাজিক সাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। এ জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত প্রকৃতি ও সুশৃঙ্খল সামাজিক পরিবেশ। জলবায়ু ও আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন মানবসভ্যতার জন্য এক অশনি সংকেত। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া এবং ওজন স্তরের ফুটো বা ফাটল সভ্যতার ধ্বংসের কারণ হতে পারে। সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, জলে–স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল। (আল–কোরআন, সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)।
এমতাবস্থায় এমন আজাব ও গজব তথা সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসবে, যা থেকে কেউ রক্ষা পাবে না এবং সে প্রকৃতির রোষ থেকে নিরপরাধ লোকেরাও রেহাই পাবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা জালিম (অত্যাচারী-অপরাধী) কেবল তাদেরকেই ক্লিষ্ট করবে না এবং জেনে রাখো নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ২৫)।
সামাজিক ও জাতীয় দুর্যোগের কারণ হলো ‘আমর বিল মারুফ’ তথা ‘সৎকাজের আদেশ’ ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ ‘অসৎকাজের নিষেধ করা’ ছেড়ে দেওয়া। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো বিশ্বাস, সৎকর্ম, সদুপদেশ ও ধৈর্য। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে; তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিয়েছে।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)।
মানুষের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য অন্য যে গুণটি বিশেষ প্রয়োজন, তা হলো দায়িত্বশীল হওয়া। সৎকর্ম ও কর্তব্যপরায়ণতা ব্যতীত শুধু ঈমান মানুষকে অনিষ্ট, অকল্যাণ ও অমঙ্গল থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা করতে পারে না। অন্য যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি পারস্পরিক, যা সামগ্রিক ক্ষতি, অমঙ্গল ও অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য একান্ত জরুরি তা হচ্ছে সৎকর্ম, সদুপদেশ ও ধৈর্য তথা সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা।
সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে যেমন শুদ্ধাচার, সত্যপ্রীতি, সত্যনীতি ও ন্যায়নিষ্ঠার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও এই কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করার উপদেশ দেবে। এই জিনিসই সমাজকে পতন ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করার নিশ্চয়তা দেবে। যারা নিজেরা সৎ থাকবে, কিন্তু সমাজে অন্যায় দেখে নীরব থাকবে, তারাও একদিন সবার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কথাই বলা হয়েছে হযরত দাউদ (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)–এর ভাষায়, ‘বনি ইসরাইলদের লানত ও অভিশাপ দিয়ে। এই লানত ও অভিশাপের কারণ ছিল তাদের সমাজে পাপাচার, অন্যায় ও জুলুম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং লোকেরা পরস্পরকে খারাপ কাজে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থেকেছিল।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৭৮-৭৯)।
নগর সুরক্ষা ও নাগরিকদের জান–মালের নিরাপত্তার জন্য আমাদের সব নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা ও নবীজি (সা.)–এর সুন্নাহর নির্দেশনা উপেক্ষা করা এবং হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক বিনষ্ট করার দায়ে আল্লাহর আদালতে জালিম হিসেবে অভিযুক্ত হতে হবে। পরিশেষে, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ চলতি তাপদাহে পুড়ছে প্রিয় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তা থেকে রক্ষা করুন আদম সন্তান সহ অন্যান্য প্রাণীকুলকে। আমিন।।
লেখক: ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান -গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।
ইএইচ