২৩ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী ৩১ ই ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে চলতি বছরের এপ্রিলে সর্বশেষ আল্টিমেটাম দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। এই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি কার্যক্রম বা শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইউজিসি। তবে যে ক্যাম্পাসগুলো স্থানান্তর শুরু করে এখনো শেষ করতে পারেনি তাদের দু-তিন মাস সময় দেয়া হতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ বাস্তবায়নের পূর্বে দেশে ৫১ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। আইনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এক একর ও অন্য এলাকায় দুই একর জমি থাকতে হবে। সাত বছর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থায়ী ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন করে সময় বাড়াতে পারবে। সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় বাড়ানো যাবে। তবে ১২ বছরে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে গেলেও ২৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো পুরোপুরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বছর খানেক সময় বৃদ্ধির আবেদন জানালেও ইউজিসি সময় দিতে রাজি নয়। চিঠি পাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, আমাদের ক্যাম্পাস গুলো নির্মাণাধীন। হুট করে ক্যাম্পাস পরিবর্তন করলে শিক্ষার্থী সংকটে পড়তে পারি।
ইউজিসির সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, শিক্ষার্থীদের টাকায় ১৫-২০ বছর পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি? এতো টাকা গেল কোথায়? করোনার সমস্যাতো এখনকার। এর আগে কী করেছে? যে প্রতিষ্ঠানগুলো দেরি করছে আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই না। যাদের দুতিন মাস সময় প্রয়োজন, তাদের ব্যাপারটা বিবেচনা করা হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বলছে, করোনা পরিস্থিতি কারণে এমনিতেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ওই ক্ষতি না পোষাতে ই ক্যাম্পাস স্থানান্তর করা সহজ ব্যাপার না। নতুন স্থানে আমাদের ঠিক মতো শিক্ষার্থী পেতে সমস্যা হবে। তাই একটু একটু করে ক্যাম্পাস স্থানান্তরের কাজ করছি। ইউজিসির কাছে সময় বাড়ানোর জন্য আমরা আবেদন করবো।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির সভাপতি শেখ কবির আহমেদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নিয়ে ইউজিসির আলাদা আলাদা চিন্তা করা উচিত। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তো একরকম না। কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পেরেছে। করোনা সহ বিভিন্ন কারণে যে প্রতিষ্ঠান গুলোর সময় প্রয়োজন তাদের সাথে ইউজিসি কথা বলতে পারে। ঢালাওভাবে একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে হয়না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনজুরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকার বাহিরে গেলে শিক্ষার মান ও পরিবেশ ভালো করার প্রতিযোগিতা পড়তে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্মত শিক্ষক রাখা চেষ্টায় থাকবে। পড়ার মান উন্নত হবে। ঢাকার পরিবেশ টা আরো ভালো হবে। এখনকার মতো এলোমেলো পরিবেশ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা আসবে। এর ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বর্তমান অবস্থা:
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ রোড। অস্থায়ী ক্যাম্পাস ইকবাল রোডে। ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় হাউস বিল্ডিং এর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হওয়ার কথা জানিয়েছে।
২০০২ সালে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০২৫ সালের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে চায়। যদিও ইউজিসি তা মানেনি। কলাবাগানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম এখনো পরিচালিত হচ্ছে।
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি তেজগাঁও এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক কার্যক্রম চলছে। বনানীতে চারটি ভবনে বাকী কার্যক্রম চললেও ইউজিসি এতে সন্তুষ্ট নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবেন।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) মোহাম্মদপুরের স্থায়ী ক্যাম্পাসে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ধানমন্ডির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এখনো ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে তাদের ৬০% কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। আগামী বছরের পূর্বেই নতুন ক্যাম্পাসে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আশা ইউনিভার্সিটি ডিসেম্বরের মধ্য স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে প্রস্তুত নয়।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০১৭ সাল থেকে আশুলিয়ায় ৩ দশমিক ৩০ একর নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করেছে। তবে গুলশানে অবস্থিত নিজস্ব ভবনে প্রশাসনিকসহ সীমিত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাবে।
২০০২ এ অনুমোদন পাওয়া স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ২০২৪ সালের মধ্যে ডেমরায় গ্রিন মডেল টাউনে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর কথা জানালেও ইউজিসি সেটি মানেনি। রমনার বেড়িবাঁধ রোডের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এখনো তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া ঘোষণা দিয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং নিজস্ব ক্যাম্পাসের চিঠির ব্যাপারে কোন জবাব দেয়নি। ইউজিসি পরবর্তীতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে।
শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে পূর্ণ ক্যাম্পাস স্থানান্তর করবে।
দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি- রাজার বাগ পুলিশ লাইনের স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চলছে।
প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-গুলশান ও বনানীর অস্থায়ী ক্যাম্পাস চলছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ৩-৪ বছর লাগবে।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া- স্থায়ী ও অস্থায়ী ভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইউজিসির কঠোর হলে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবে।
ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ পান্থপথের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চলছে। ডিসেম্বরের মধ্য স্থায়ী ক্যাম্পাস কুমিল্লায় যাচ্ছে না।
বনানীর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম চলছে। এই আল্টিমেটাম স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব নয়।
রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা বর্তমানে বনানীর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কিছু কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ডিসেম্বরের মধ্য তেজগাঁও এর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম চলছে। আগামী বছরের মার্চে মধ্য স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারবেন।
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরুই করেননি।
পূর্বাচলে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বেগম রোকেয়া স্মারণিতে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কার্যক্রম চলছে।ডিসেম্বরের মধ্যে ক্যাম্পাস স্থানান্তরের ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যায়নি।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাড্ডার স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হচ্ছে।
এসএম