সাকরাইন যেন ডিজে পার্টি! যুবক-যুবতীর অবাধ নাচানাচি

আবু ছালেহ আতিফ প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৯:৪০ পিএম

সাকরাইন মানে সবার কাছে পুরান ঢাকার আকাশে ঘুড়ি উড়ানো,ঘরে ঘরে রংবেরঙের পিঠাপুলির আয়োজন আর তরুণ-তরুণীর নতুন পোশাকের রুচিশীল উৎসব। কিন্তু সেটা এখন শুধু ইতিহাস। এর সাথে যুক্ত হয়েছে উড়া ধুরা ডিজে পার্টি, অবাধ নাচানাচি, গভীর রাতে দেশি- বিদেশি মদ আর গাঁজার আসর। রাত নামলেই এখন পুরান ঢাকার আকাশে আতশবাজির আলোয় উজ্জীবিত হয়ে ওঠার পাশাপাশি এসব অসামাজিক, অনৈতিক সংস্কৃতিতে মেতে উঠতে দেখা যায় এসব সাকরাইন উৎসবে। এবং একপর্যায়ে সেখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি ও হচ্ছে।

শনিবার (১৪) ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যার পরে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের শিংটোলা ডাইলপট্টির কয়েকটা বাড়ির ছাঁদ ঘুরে এমন পরিস্থিতি  দেখা যাচ্ছে।

এদিকে এসব অতিরঞ্জন নিয়ে এলাকার সচেতন সমাজের অভিযোগ এবং অনীহার শেষ নেই।

শিংটোলার বাসিন্দা বাবু নারায়ণ চন্দ্র আমার সংবাদ কে বলেন ,এটা মূলত আমাদের সনাতন  ধর্মাবলম্বীদের থেকে শুরু হওয়া একটা উৎসব যা এখন অপকালচারে পরিণত হয়েছে। যে পরিমাণ শব্দদূষণ হচ্ছে তা একটা সভ্য সমাজের সাথে মানানসই না।

অভিযোগ করে নারায়ণ চন্দ্র বলেন,নিষেধ করলেও এখনকার ছেলে মেয়েরা এসব শুনবেনা। উল্টো হুমকি খেতে হয়।তিনি এ নিয়ে প্রশাসনের শক্ত পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া কবি নজরুল কলেজের  শিক্ষার্থী রোখসানা আক্তার আমার সংবাদ কে বলেন,যদিও আমি এ যুগের মেয়ে কিন্তু ; সাকরাইনের নামে এমন অসভ্যতা যা এখন চলছে সেটা বন্ধ হওয়া দরকার।এটা যদি এভাবে চলতে থাকে,তাহলে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে।

রোখসানা বলেন,উচ্চস্বরে এভাবে ডিজে পার্টি, সাউন্ড বক্স চলার কারনে রোগীদের সমস্যা হচ্ছে, পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছে। এমনকি যারা এসব করচে তাদের ঘরেও রোগী থাকতে পারে। কিন্তু তারা সেসব লক্ষ্য করছেনা।

মূলত; সাকরাইনের প্রধান আকর্ষণ ছিলো ঘুড়ি খেলা। তাই উৎসবের দিন বিকেল থেকে পুরান ঢাকার প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকে শত শত ঘুড়ি উড়তে থাকে। ঢাকার অন্য অঞ্চল থেকেও হাজারো মানুষ ভিড় জমান ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবটি উপভোগ করতে।  

শুধু ঘুড়ি ওড়ানোই নয়, ঘুড়ি কাটাকুটি খেলাও শুরু হয়ে যায়। রং-বেরঙের ঘুড়ি এক সঙ্গে উড়ে ঢাকার আকাশকে বর্ণিল করে তোলে। সন্ধ্যা নামলে খেলা শেষে শুরু হয় আতশবাজি, শত শত ফানুসে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ।  এটাই ছিলো মুলত পুরান ঢাকার আদি সাকরাইন উদযাপন।

সঙ্গে থাকেন বিভিন্ন শিল্পী। গান গেয়ে, খেলা দেখিয়ে তারা দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। ঘরে ঘরে তৈরি হয় বিভিন্ন পিঠাপুলিসহ নতুন খাবার। নানা রকম খাবারের পাশাপাশি ছাদে চলতে থাকে আড্ডা ও নাচ-গান।

উল্লেখ্য,  সংস্কৃত শব্দ ‍‍`সংক্রান্তি‍‍` ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষদিন সারা ভারতবর্ষে সংক্রান্তি হিসাবে উদযাপিত হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে। বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ। এক কথায় বলা যায় সাকরাইন হচ্ছে এক ধরনের ঘুড়ি উৎসব।(১) বাংলা বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস পৌষ মাসের শেষ দিনে আয়োজিত হয় যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিকার হিসেবে জানুয়ারি মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পড়ে।

এবি