অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই
—এ এইচ এম সফিকুজ্জামান মহাপরিচালক, ডিএনসিআরপি
এবারের ঈদ যাত্রায় দীর্ঘ যানজট ভোগান্তি লাঘব হলেও বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকানো যায়নি। ঈদের ছুটি ঘোষণার পর থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে বাস মালিক ও শ্রমিকরা। ফিরতি পথেও একই রকম হয়রানির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। বাড়তি ভাড়া বন্ধের দাবি করে এলেও কোথাও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ভোক্তা অধিকারের দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীরা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে বাস কাউন্টারের কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার বলছে, তারা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়। ইতোমধ্য বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান পরিচালনার কথাও জানায় সংস্থাটি।
ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া আদায় দীর্ঘদিনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাস মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে লাগাম টানা যাচ্ছে না। যদিও গত ১০ এপ্রিল পরিবহন মালিক সমিতি নেতারা ভোক্তা অধিকারের সাথে মতবিনিময় সভায় ঈদ উপলক্ষে ভাড়া না বাড়ানোর কথা বলেছিল। এ ব্যাপারে পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি বিদেশে আছেন। এ ব্যাপারে এখন কথা বলতে পারবেন না। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দিতে আমাদের বাড়তি বাস নামাতে হয়। ওই বাসগুলো আমাদের ভাড়া নিতে হয়। এ ছাড়া ফিরতি পথে বাস খালি হয়ে আসে ফলে আমাদের লোকসানে পড়তে হয়। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা প্রতিটি বাস বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। একইভাবে যাওয়ার সময় বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছিল। লালমনিরহাটের এসআর ট্রাভেলসের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, লালমনিরহাট-ঢাকা নন এসি সিট প্রতি এক হাজার ৫০০ টাকা করে ভাড়া চাচ্ছে। এসি সিটের জন্য চাচ্ছে দুই হাজার ৫০০ টাকা। একই সময়ে মানিক এক্সপ্রেস ও শাহ আলী পরিহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নন এসি এক হাজার ৪০০ টাকা করে চাচ্ছে। শাহ আলী পরিবহন কাউন্টারে বসে থাকা একজন বলেন, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই রেট থাকবে।
উত্তরাঞ্চলগামী মানিক এক্সপ্রেসের কাউন্টারে দায়িত্বরত একজনকে অতিরিক্ত ভাড়ার কথা জিজ্ঞেস করলে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দেখিয়ে বলেন, এই যে ভাড়া ঠিক করে দিছে। অন্য সময়ে তো আপনারা সে ভাড়ায় যেতে চান না। আবার এখন (ঈদের সময়) আমাদের বাস ভরে যায় ঢাকা। আসে খালি হয়ে। এক ট্রিপে খালি এলে ২৯ হাজার টাকা লস হয়। একইভাবে নোয়াখালীগামী বাসগুলোও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। ঈদের আগে নোয়াখালীগামী হিমালয় ও আল বারাকা এক্সপ্রেস অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে আদায় করেছে। ঈদের পরও ৫০০ টাকার ভাড়া ৭০০ টাকা আদায় করছে। এ ব্যাপারে আল বারাকা কাউন্টারে বসা এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ভাড়া বাড়াতে চাইনি। হিমালয়ও আমাদের সাথে ব্যবসা করে। আমরা ভাড়া না বাড়ালে তারা উপরে নালিশ করবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জরুরি সেবাতে কল দেয়ার পর ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ জানাতে বলা হয়। তাৎক্ষণিক ভোক্তা অধিকারের অভিযোগ জানালেও জরুরি প্রতিকার পান না সাধারণ মানুষ।
যাত্রীদের অভিযোগ, অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকদিন পর হয়তো ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে তারা লাখ লাখ টাকা আয় করে। বাড়তি আয় থেকে কিছু টাকা জরিমানা দেয়া হলে তাদের তো লস নেই। অন্য দিকে আমাদের তো ক্ষতিপূরণ তো আমরা পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। অনেক বাসকে আমরা জরিমানা করেছি। আমাদের ডিউটি তো নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। দৈনিক ২৪ ঘণ্টা সপ্তাহে সাত দিন তো আমাদের ডিউটি না। তাই যেকোনো মানুষ অভিযোগ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় রোধ কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তারা ধরেননি।