সেই মারুফা এবার জাতীয় দলে

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ০১:৪০ পিএম

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ঢেলাপীর এলাকার বর্গাচাষী মো. আইমুল্লাহ’র ছোট মেয়ে মারুফা আক্তার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ভালো ফুটবল খেললেও ষষ্ট শ্রেণীতে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে শুরু করেন ক্রিকেট। সেই থেকে ভালো লাগা, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিকেএসপিতে, খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে। এবার সেই মারুফাই সুযোগ পেলেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে।

২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় বাবা আলিমুল্লার সঙ্গে বর্গা নেয়া জমিতে হালচাষ করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মারুফা।

অভাব-অনটনের সংসারে দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাই যেখানে সংগ্রামের মতো, সেখানে ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল মারুফার। করোনাকালীন সময়ে পারিবারিক দূরবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কথাও ভাবলেও এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সেই ডাক পেলেন জাতীয় দলেও।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের জন্য রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১৫ সদস্যের এই দলে নতুন মুখ হিসেবে ডাক পেয়েছেন ১৯ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার মারুফা। সুখবরটা বড় ভাই আল-আমিনকে সবার আগে জানিয়েছেন মারুফা। এই খবরে মারুফার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুরে বইছে আনন্দের বন্যা।

মারুফা বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। বলে বোঝাতে পারব না। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি এটাই শেষ না। এখন আমার লক্ষ্য ১১ জনে থাকা এবং ভালো খেলা।

অভাব অনটনের কারনে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। তবে বিসিবির সহযোগিতায় আজ জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছি। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময় থমকে যেত স্বপ্ন। বিসিবিকে আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ।’

তিনি বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। করোনাকালে বাড়িতে অবস্থান করায় পুরা টা সময় বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সাথে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত অনুশীলন করি। ২০১৮ সালে আমি বিকেএসপিতে সুযোগ পাই। সেখানে দুই মাস ক্যাম্প করি। ক্যাম্প শেষে খুলনার ইমতিয়াজ হোসেন পিলু স্যার আমাকে ২০১৯ সালে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লীগে খেলার সুযোগ করে দেন। এরপর স্যার আমাকে খুলনা দলে নেন। অনূর্ধ্ব-১৮ দলে সুযোগ পাই।’

মারুফার বাবা আলিমুল্লাও দারুণ খুশি। তিনি বলেন, ‘নিজের জমি বিক্রি করে দিয়েছি। শ্বশুরের দেওয়া বাড়িতে থাকি। অন্যের জমি বর্গা চাষ ও মজুরী করি। কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। খেলার প্রতি মারুফার একনিষ্ঠ ভালোবাসা। সে জাতীয় দলে খেলবে অনেক বড় হবে এমনটাই স্বপ্ন দেখে আসছি। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়েটার জন্য, সে যেন অনেক বড় খেলোয়ার হতে পারে।’  

এআই