ভারতের দিল্লিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং তোপে প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিল স্বাগতিক ভারত। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার করা ২৬৩ রানের জবাবে ভারত অলআউট হয়েছিল ২৬২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে রবীন্দ্র জাদেজার বোলিং ম্যাজিকে অস্ট্রেলিয়াকে আটকে দেয় মাত্র রানে। জয়ের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ভারত। এর আগে নাগপুরে প্রথম টেস্টেও অজিদের তিনদিনে হারিয়েছিল ভারত। আর গতকাল রোববার দিল্লি টেস্টও শেষ হয়ে গেছে তিনদিনে।
অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে অনায়াসে হারিয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ধরে রাখা নিশ্চিত করে ফেলেছে রোহিত শর্মার দল। চার টেস্টের সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে। ৪২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বিধ্বস্ত করে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম ইনিংসে দুই দলই ছুটেছিল সমান তালে, জড়ো করেছিল কাছাকাছি পুঁজি। দ্বিতীয় দিন শেষে তাই দিল্লিতে জম্পেশ লড়াইয়ের আভাসই মিলছিল। কিন্তু তৃতীয় দিনে নেমে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ একপেশে করে দিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়া পরে আর লড়াইও করতে পারেনি। ম্যাচে ১১০ রানে ১০ উইকেট নেন জাদেজা। টেস্টে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
মাত্র ১১৫ রানের লক্ষ্য পেয়ে চা-বিরতির বেশ আগেই খেলা শেষ করে দেয় ভারত। ৭৪ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থেকে জেতার কাজ সারেন চেতশ্বর পূজারা। কিপার ব্যাটার শ্রিকর ভরত ২২ বলে করেন অপরাজিত ২৩ রান। আগের দিনের ১ উইকেটে ৬১ রান নিয়ে নেমে লিড বাড়ানোর বড় আশা ছিল অজিদের। অন্তত ২০০ রানের লিড হলে এই উইকেটে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে যেত তাদেরই। ৬২ রানের লিড থাকায় সেই লক্ষ্য দূরে ছিল না। কিন্তু জাদেজার তোপ তাদের করে দেয় লণ্ডভণ্ড। দিনের একদম প্রথম ওভারেই উইকেট আনেন অশ্বিন।
বিপদজনক ট্রেভিস হেড অশ্বিনের বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে ধরা দেন উইকেটের পেছনে। চারে নেমে প্রতিরোধের চেষ্টায় ছিলেন স্টিভেন স্মিথ। তাকে বেশিদূর আগাতে দেননি অশ্বিন। প্রবল চাপ জারি রাখায় হাঁসফাঁস করতে থাকা স্মিথ সুইপ করতে গিয়েছিলেন অশ্বিনের বলে। বল পায়ে লাগিয়ে কাটা পড়তে হয় তাকে। রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউর হাত থেকে রক্ষা পাননি ৯ রান করা সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। মারনাশ লাবুশানে এক প্রান্তে টিকে দলকে দিচ্ছিলেন ভরসা। জাদেজার দুর্দান্ত এক আর্মারে শেষ হয় তার লড়াই। কোন কিছু বুঝে উঠার আগে স্টাম্প খোয়ান তিনি। এরপর যেন তাসের ঘর অজি ইনিংস।
ডেভিড ওয়ার্নারের কনকাশন বদলি নামা ম্যাট রেনশোকে তুলে নেন অশ্বিন। জাদেজা একে একে নিয়ে নেন বাকি পাঁচ উইকেট। পিটার হ্যান্ডসকব তার বলে স্লিপে দেন ক্যাচ। আলেক্স কেয়ারি, প্যাট কামিন্স, ন্যাথান লায়নরা লাইন মিস করে হোন বোল্ড। ম্যাথু কুহেনমানকে বোল্ড করে সপ্তম উইকেট শিকারের সঙ্গে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারও হয়ে যায় টেস্টের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। প্রথম সেশনে ১৯.১ ওভার ব্যাট করে ৫২ রান তুলতেই বাকি ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। ১১৫ রানের সহজ লক্ষ্যে নেমে আবার ব্যর্থ লোকেশ রাহুল। স্পিনের বিপক্ষে নিজের দুর্বলতার ছবি ফের তুলে ধরে তিনি এবার বিদায় নেন ১ রান করে। লায়নের বলে অদ্ভুতভাবে কিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ভারতীয় ওপেনার।
লক্ষ্য অল্প হলেও বল টার্ন করতে থাকায় যেকোনো অসম্ভবও সম্ভব হতে পারত। অধিনায়ক রোহিত সেই সম্ভাবনা মারতে থাকেন আগ্রাসী মেজাজে। দ্রুত রান তোলায় মন দেন তিনি। ৩ চার ২ ছক্কায় তার ২০ বলে টি-টোয়েন্টি সুলভ ৩১ রানের ইনিংস থামে রানআউটে। এরপর বিরাট কোহলিকে নিয়ে সহজেই দলকে টানতে থাকেন পূজারা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৩০ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ হাজার রান স্পর্শ করার দিনে আবারও ইনিংস আগাতে পারেননি কোহলি। টড মারফির বলে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে যান তিনি। দ্রুত রান আনতে গিয়ে দ্রুতই ফেরেন শ্রেয়াস আইয়ারও। ঝটপট খেলা শেষ করে দিতে ৩ চার, ১ ছক্কা মারেন শ্রিকর ভরত। স্বাগতিকরা তেমন কোন সমস্যা ছাড়াই সেরে ফেলে আনুষ্ঠানিকতা।
এবি