বাংলাদেশের উইকেট বরাবরই একটু স্লো থাকে। যে কারণে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন স্পিনাররা। বাংলাদেশের স্পিনাররাও বেশ ভাল করেন। তবে সেই ইংলিশদের কাছেই ৭ বছর পর ঘরের মাঠে সিরিজ হেরে বসে টাইগাররা। অন্যদিকে ২০১৪ সালের পর ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশের বিব্রতকর পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে তামিম ইকবালের দল। এর বাইরেও অন্তত শেষ ম্যাচটা জিতলে নিজেদের সামর্থ্যের একটা জানান দেওয়া হয়। গুরুত্বহীন ম্যাচেরও তাই একদিক থেকে অধীক গুরুত্ব থাকা অনুমিত।
সোমবার চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ ও তৃতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামবে দু দল। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় শুরু হবে ম্যাচটি। প্রথম ওয়ানডেতে শুরুতে কিছুটা আলগা বল করছিলেন ইংল্যান্ডের পেসাররা। ভালই রান দিচ্ছিলেন তারা। তবে নিয়ন্ত্রণ পেতে সময় লাগেনি। মিরপুরের মন্থর উইকেটেও পরে মানিয়ে নিয়ে ভীষণ কার্যকর বল করেছেন ইংল্যান্ডের বোলাররা। ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড জানিয়েছেন, সেদিন পেস বোলিং কোচ ডেভিড সাকেরের বকুনি খেয়ে নিজেদের তেজ ফিরে পায় তাদের পেস ইউনিট।
প্রথম ম্যাচে শুরুর ৪ ওভারে ওভারপ্রতি সাতের কাছাকাছি রান দিয়ে ফেলেছিলেন জোফরা আর্চার, ক্রিস ওকস। দশ ওভার পরই অবশ্য রাশ টেনে ধরতে পারেন তারা। শুরুতে খরুচে হয়ে পড়া আর্চার পরে ১০ ওভারে কেবল ৩৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। উড ৩৪ রানে পান ২ উইকেট। ওকস কেবল ২৮ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে আর্চার, ওকসকে বসিয়ে স্যাম কারান আর সাকিব মাহমুদকে খেলায় ইংল্যান্ড। একাদশে এসেই বাঁহাতি পেসে বাংলাদেশের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন কারান। মাত্র ২৯ রান দিয়ে তিনি পান ৪ উইকেট।
মিরপুরের উইকেটে স্পিনাররা সাধারণত পান সুবিধা। পেসারদের জন্য থাকে শক্ত চ্যালেঞ্জ। সেখানেও ইংল্যান্ড পেসাররা এত ভালো করার পেছনে তেতে উঠার পেছনের গল্প জানালেন উড, `বোলিং ইউনিট হিসেবে আমরা সব সময় উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি চেষ্টা করেন আর অপেক্ষা করেন তবে খেলাটা বদলাতে পারে। পেস বোলিং ইউনিট হিসেবে, আমরা প্রথম ম্যাচে একটু ধীর গতিতে শুরু করেছিলাম। তখন আমাদের পেস বোলিং কোচ ডেভিড সাকের এসে ঝাড়ি দেন। তিনি আমাদের শুরুর বোলিং নিয়ে একদম খুশি ছিলেন না। চট্টগ্রামের উইকেটে সব সময় থাকে ভিন্নতা।
এখানে স্পিনারদের এত সুবিধা সাধারণত থাকে না। তবে পেসারদেরও তা সাহায্য করবে বলে মনে করেন না উড। পর্যবেক্ষণ করে তার মনে হয়েছে তাদের ব্যাটিং ইউনিটও থাকবে রোমাঞ্চিত। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে উইকেট কীভাবে আচরণ করে, সেভাবেই মানিয়ে নিতে হবে। তবে হেঁটে মনে হয়েছে বেশ শক্ত। মিরপুরের উইকেট একটু চেটচেটে, কিছুটা নরম। হয়ত এটা পেস বোলারদের জন্য একটু স্পোর্টিং হবে। যদি ঘূর্ণি উইকেটও হয়, আমরা মানিয়ে নিতে পারব। ভারতে গিয়েও হয়ত এরকম উইকেট পাব আমরা। আমরা সেখানে যাব এবং চাইব বিশ্বকাপ জিততে।
আমাদের ব্যাটিং ইউনিট নিশ্চয়ই রোমাঞ্চিত হবে। অন্যদিকে মিরপুরে যে কাজ হয়নি, সেটা চট্টগ্রামে হওয়ার আশা বেশ কঠিন। গতকাল রোববার ঐচ্ছিক অনুশীলন সেরে সংবাদ সম্মেলনে এসে তা অকপটে স্বীকারও করে ফেললেন রঙ্গনা হেরাথ। চট্টগ্রামে হওয়া সবশেষ ম্যাচটাতে চোখে সর্ষে ফুল দেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ঈশান কিশানের তান্ডবে সেদিন চারশো ছাড়িয়ে গিয়েছিল ভারত। মিরপুরের মন্থর উইকেটেই ৩২৬ রান করে আসা ইংল্যান্ড এমন উইকেট পেলে কি করবে? এই নিয়ে বাংলাদেশ দলে চাপা অস্বস্তি থাকলে ভুল বলা হয় না। স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথও জানিয়ে দিলেন, ভিন্ন রকম উইকেটের কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে চলেছেন তারা। এমনিতে মিরপুরেই বাংলাদেশ দুই ম্যাচ হেরে যাওয়ায় সিরিজ নিয়ে উত্তেজনা অনেকটাই হাওয়া হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে সাধারণত থাকে ব্যাটারদের সুবিধা। প্রচুর রান হওয়ার খ্যাতি আছে এখানে। কাজেই শুধু স্পিনার নয়, পেসারদেরও কঠিন চ্যালেঞ্জ দেখছেন তিনি। বলেছেন, স্পিনার ও পেসারদের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। উইকেট শুস্ক মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে পেস বোলাররাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। স্পিনারদের জন্যও ব্যাপারটা তাই। লঙ্কান স্পিন কোচ তাই এক্ষেত্রে ব্যাটারদের এগিয়ে আসার ভূমিকা দেখছেন বড় করে।