আজ হারলেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বিদায় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যেত জামাল ভূঁইয়াদের। ব্যাঙ্গালোরের শ্রী কান্তেরাভা স্টেডিয়ামে মালদ্বীপের বিপক্ষে কার্যত বাঁচা-মরার ম্যাচে খেলতে নেমে প্রথমে পিছিয়ে পড়লেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
বাঁচামরার ম্যাচে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে লাল সবুজের দল। প্রথম ম্যাচে লেবাননের কাছে ০-২ গোলে হারের পর মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয় পেয়েছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।
এই জয়ে টুর্নামেন্টে সেমির আশা বাঁচিয়ে রেখেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এখন `বি` গ্রুপে লেবানন, বাংলাদেশ আর মালদ্বীপ তিন দলেরই ৩ পয়েন্ট করে। বাংলাদেশ আছে দুই নম্বরে।
স্বপ্নময় এক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপের বিপক্ষে ৫১ ভাগ বল দখলে রেখে মোট ২০টি শট নেয় তারা, যার ৯টিই ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ৭ শটের মাত্র ২টি লক্ষ্যে রেখেও একটি গোল আদায় করে নেয় মালদ্বীপ।
১-১ সমতায় প্রথমার্ধ শেষ করেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। মালদ্বীপের হয়ে ১৭ মিনিটে গোল করেন হামজা মোহাম্মদ। ৪২ মিনিটে গোল শোধ করেন বাংলাদেশের রাকিব হোসেন। ৬৭ মিনিটে তারিক কাজী ও ৯০ মিনিটে গোল করেন শেখ মোরসালিন।
বেঙ্গালুরুতে সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের এই ম্যাচটি ছিল বাঁচামরার। শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে খেলতে থাকে জামাল ভূঁইয়ার দল। প্রথমার্ধে ৫৬ ভাগ বল দখলে রেখে ১৩টি শট নেয় বাংলাদেশ, যার ৪টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ৩ শটের একটিতে গোল পেয়ে যায় মালদ্বীপ।
দশম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি-কিক পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু ফয়সালকে বক্সের ঠিক বাইরে মালদ্বীপের এক ফুটবলার ফেলে দিলেও বাঁশি বাজাননি রেফারি। বল বাইরে গেলে কর্নার পায় বাংলাদেশ।
বাঁ প্রান্ত থেকে জামাল ভূঁইয়ার কর্নারে হেড করেছিলেন সোহেল রানা। কিন্তু মালদ্বীপের গোলরক্ষক সেটা ধরে ফেলেন।
স্রোতের বিপরীতে খেলে ১৭ মিনিটে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। ডানদিক থেকে ফাসিরের পাস থেকে বক্সের বেশ বাইরে থেকে শট নিয়ে দারুণ এক গোল করেন হামজা মোহাম্মদ (১-০)।
এর কিছুক্ষণ পর বড় একটা ভুল করে বসেছিলেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। বক্সের অনেকটা বাইরে বেরিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু হেডে বল লাগাতে পারেননি ভালোভাবে। কপাল ভালো, বলটা মালদ্বীপের কারও কাছে গিয়ে পড়েনি।
৩২ মিনিটে বাংলাদেশের তপু বর্মন বক্সের মধ্যে হেডে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। দুই মিনিট পর ফয়সাল আহমেদ ফাহিম খালি জায়গা পেয়ে দুর্বল শটে সুযোগ নষ্ট করেন।
তবে বিরতির ঠিক আগে ভাগ্য ফেরে দাপুটে খেলা বাংলাদেশের। ৪২ মিনিটে সোহেল রানা উঁচু করে বল দেন বক্সের মধ্যে, তপু সেটা হেডেই পাস দেন রাকিবকে। রাকিবও দারুণ এক হেডে বল জালে জড়ান (১-১)। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধেও দাপট ধরে রাখে বাংলাদেশ। শুরুতেই আরেকটি ভালো সুযোগ পেয়েছিল। ৪৬ মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের হেড বক্সের একটু ওপর দিয়ে চলে যায়।
৫৬ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ফুটবলার। এবারও ভালো সুযোগ ছিল। কিন্তু সময়ক্ষেপনে মালদ্বীপের ডিফেন্ডাররা চলে আসেন, শেষ পর্যন্ত বল কেড়ে নেন তারা।
৬২ মিনিটে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে তুলে নেওয়াসহ তিনটি পরিবর্তন আনেন কোচ। এর পাঁচ মিনিট পরই (৬৭ মিনিটে) এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বক্সের মধ্যে হৃদয় প্রথম চেষ্টায়, তারপর এক পা হয়ে তৃতীয় চেষ্টায় জটলার মধ্য থেকে তারেক কাজী বল জালে জড়ান।
৬৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মোরসালিনের দুর্দান্ত শট গোলরক্ষক কোনোমতে বাইরে বের করে দিয়ে মালদ্বীপকে বাঁচান। ৮১ মিনিটে তারেক কাজী ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন। এর কিছুক্ষণ পর বল নিয়ে সময় নষ্ট করে হলুদ কার্ড দেখেন ইসা ফয়সাল।
৮৫ মিনিটে মালদ্বীপের সমতায় ফেরার সুযোগ এসেছিল। তবে বক্সের মধ্যে হামজার হেড ধরে ফেলেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক জিকো।
৯০ মিনিটে বিশ্বনাথের বানিয়ে দেওয়া বল বক্সের ডানপাশে পেয়ে একজনকে কাটিয়ে চোখ ধাঁধানো এক গোল করেন মোরসালিন। পরের মিনিটে হামজার জোরালো শট পোস্টে লেগে ফেরত আসলে ম্যাচে আর ফেরা হয়নি মালদ্বীপের। ৩-১ গোলের দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
আরএস