নারীদের নিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্য করা নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। বিসিবির পক্ষ থেকে ভবিষ্যতের জন্য এই ক্রিকেটারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) মিরপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে তুমুল আলোচনায় তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। এশিয়া কাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন যুব বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটার। স্বাভাবিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছিলেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার।
তবে গত কয়েক দিনে তিনি আলোচনায় অন্য ইস্যুতে। পুরোনো কিছু ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন তরুণ এই ক্রিকেটার। নারী বিদ্বেষী মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তানজিম সাকিবকে দল থেকে বাদ দেওয়ারও দাবি তুলছেন কেউ কেউ। বিসিবির তরফে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
আজ জালাল ইউনুস বিসিবির পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিলেন। তিনি বলেন—‘ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্রিকেট অপারেশন্স থেকে তানজিম সাকিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। মিডিয়া কমিটি থেকেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে আমরা অবগত করেছিলাম, যেসব পোস্ট ফেসবুকে এসেছে...। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য হচ্ছে—কাউকে আঘাত করার উদ্দেশে এরকম পোস্ট দেওয়া নয়। সে যেসব পোস্ট দিয়েছে সেগুলো কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়। তারপরও কারও যদি আঘাত লেগে থাকে সেজন্য সে দুঃখিত।’
তানজিম সাকিব ভুল করেছেন, সত্যিকার অর্থে এ উপলব্ধি তার হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে জালাল ইউনুস বলেন— ভুল করেছে, সেটার জন্য সে বলেছে, ‘আমি দুঃখিত’। আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো পোস্ট না দেয় সেটা বলেছি। সে বলেছে এ ধরনের পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। সে একটা বড় কথা বলেছে— সে মোটেই নারী বিদ্বেষী নয়। সে বলেছে, আমার মা-ই তো একজন নারী। আমি কীভাবে নারী বিদ্বেষী হতে পারি!
তানজিম সাকিব কোন ধ্যানধারণার অনুসারী, সে প্রশ্নও উঠছে। বিসিবির কাছে এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কি না— এমন এক প্রশ্নের উত্তরে জালাল ইউনুস বলেন, ‘অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে আমাদের নজর আছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করব তাকে। অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করব।’
ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে জালাল ইউনুস বলেন, ‘তার পরিবারও এ ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত। এমন পরিস্থিতি তারা আশা করেনি। তারাও দুঃখিত। সামনে বিশ্বকাপ আছে, সে তরুণ ছেলে, বয়স কম। এজন্য তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও ওরকম কিছু যদি থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তানজিম সাকিব তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এই পোস্ট নিয়েই মূলত বিতর্কের সূত্রপাত। এশিয়া কাপে দুর্দান্ত অভিষেকের পর কেউ একজন পুরোনো ওই পোস্টটির স্ক্রিন শট ছড়িয়ে দেয়। সেই পোস্টে সাকিব শায়খ আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ) নামে এক ব্যক্তির কিছু বক্তব্য কপি-পেস্ট করে হুবহু তুলে ধরেছেন।
সেখানে লেখা ছিল— ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়’— ইত্যাদি নানা নেতিবাচক বক্তব্য।
এই পোস্ট নিয়ে নেটিজেনরা এখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত। অনেকে তরুণ এই ক্রিকেটারকে দল থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে অনেকে তার পক্ষেও মতামত দিয়েছেন।
আরএস