হার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুরু বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল টাইগাররা। রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে শুরুতেই চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও তাওহিদ হৃদয়ের সেঞ্চুরিতে ২২৮ রান করে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছিল লাল-সবুজের দল। তবে এত অল্প সংগ্রহে ভারতের মত শক্তিশালি দলকে এত কম লক্ষ্য দিয়ে আটকাতে পারেনি নাজমুল শান্তর দল। শুবমান গিলের সেঞ্চুরিতে ৪৬.৩ ওভারেই ৬ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত।

২২৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার মিলে শুরুটা করেছিলেন দারুণ। শুবমান গিল ও রোহিত শর্মা মিলে শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ছিলেন। চার-ছয়ে দ্রুত স্কোরবোর্ডে রান তুলছিলেন এ দুজন।

দুজন মিলে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই স্কোরবোর্ডে তুলেছিলেন ৬৯ রান। মারমুখী রোহিত ছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতকের পথে। তবে ফিফটির দেখা পাননি তিনি। ৩৬ বলে ৪১ রান করার পর তাসকিন আহমেদের বলে রিশাদ হোসেনের মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি।

রোহিত ফেরার পর ক্রিজে গিলের সঙ্গী হন কোহলি। দুজন মিলে গড়েছিলেন ৪৩ রানের জুটি। তবে কোহলি নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩৮ বলে ২২ রান করে রিশাদের বলে সোউম্য সরকারের মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি।

কোহলির পর ক্রিজে গিলের সঙ্গী হন শ্রেয়াস আইয়্যার। তবে আইয়্যারও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তিনি ফিরেছেন মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ দিয়ে। ফেরার আগে তিনি করেছেন ১৫ রান।

আইয়্যার ফেরার পর মাঠে নামা অক্ষর প্যাটেলও গিলকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ১২ বলে ৮ রান করে আউট হন অক্ষর। তবে দ্রুত উইকেট হারালেও ভারতকে চাপে ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপর লোকেশ রাহুল ক্রিজে এসে গিলের সঙ্গে গড়েছিলেন বড় জুটি। এ জুটিতেই জয়ের দেখা পায় ভারত। দলকে জেতানোড় পথে সেঞ্চুরির দেখাও পান গিল। দুজন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৮৭ রানের জুটি গড়ে। গিল ও রাহুল অপরাজিত ছিলেন যথাক্রমে ১০১ ও ৪১ রানে।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ ওপেন করতে নামেন তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকার। ইনিংসের প্রথম বলটি খেলেছেন তামিম। সেই বলে দৌড়ে এক রান নিয়ে তামিম স্ট্রাইক দেন সৌম্যকে। মোহাম্মদ শামির করা পরের চার বলে আর কোনো রান নেননি সৌম্য। আর শেষ বলে উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন সৌম্য। আউট হওয়ার আগে রানের খাতা খুলতে পারেননি টাইগার এই ওপেনার।

এদিকে সৌম্য ফেরার পর ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বল খেলেন তামিম। দ্বিতীয় বলে দৌড়ে ১ রান নিয়ে তামিম স্ট্রাইক দেন শান্তকে। তৃতীয় বলে কোনো রান নেননি শান্ত। হার্ষিত রানার করা চতুর্থ বলে স্লিপে বিরাট কোহলির মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরের পর ধরেন টাইগার অধিনায়ক।

বাংলাদেশের প্রথম দুই ব্যাটারই আজ সাজঘরে ফিরেছেন কোনো রান না করেই। শুরুর ধাক্কা সামলিয়ে জুটি গড়েন তানজিদ হাসান তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এই জুটিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। তবে বেশিদূরে এগোনোর আগেই এই জুটি ভাঙেন শামি। আউট হওয়ার আগে করেন ১০ বলে ৫ রান করেন মিরাজ। তার বিদায়ে ২৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে টাইগাররা। মিরাজ ফেরার পর দ্রুত আরও দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে টাইগাররা।

ওপেনার তামিম আউট হন দলীয় ৩৫ রানে। ২৫ বলে ২৫ রান করে তিনি বিদায় নেন নবম ওভারে অক্ষর প্যাটেলের বলে। এরপর একই ওভারে সাজঘরে ফিরেন মুশফিকুর রহিম। গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফিরেন তিনি। মুশফিক ফেরার পর হ্যাটট্রিকের সুযোগ এসেছিল অক্ষরের সামনে। তবে স্লিপে সহজ ক্যাচ মিস করেন রোহিত শর্মা, তাতে জীবন পান জাকের আলী অনিক।

জীবন পাওয়ার পর হৃদয়ের সঙ্গে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বিশাল জুটি গড়েছিলেন জাকের। দুজনে মিলে স্কোরবোর্ডে তুলেছেন ১৫৪ রান। এ জুটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে দারুণ এক রেকর্ডও গড়েছেন। জাকের ৬৮ রানে আউট হলে তাদের ১৫৪ রানের জুটি ভাঙে। তাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। এর চেয়ে বেশি রানের জুটির রেকর্ড নেই আর কারও। আর তারা ভেঙেছেন ১৯ বছর আগের রেকর্ড।

এর আগে ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মোহালিতে ১৩১ রান করে রেকর্ডটি গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জাস্টিন কেম্প ও মার্ক বাউচার। টাইগার এই মিডেল অর্ডার ব্যাটার আরও একটি রেকর্ড গড়েছেন এদিন। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ষষ্ঠ উইকেটে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৩৩ রানের জুটি ছিল শ্রীলঙ্কার আতাপাত্তু ও আর্নল্ডের।

এদিকে জাকের ফেরার পর ক্রিজে হৃদয়ের সঙ্গী হন রিশাদ হোসেন। টাইগার এই লেগ স্পিনার ক্রিজে এসেই মারমুখী হয়েছিলেন। অক্ষর প্যাটেলের করা এক ওভারেই নিয়েছেন ২০ রান। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ১২ বলে ১৮ রান করে তিনি সাজঘরে ফিরেন। এদিকে রিশাদ ফেরার পর নিজের শতকের দেখা পান হৃদয়। টাইগার এই ব্যাটার ১১৪ বলে শতক পূর্ণ করেন। একদিনের ক্রিকেটে হৃদয়ের প্রথম শতকও এটি। তার ক্যারিয়ারের এই প্রথম সেঞ্চুরির সুবাদে ৪৯.৪ ওভারে অল আউট হওয়ার আগে ২২৮ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

ইএইচ