ঈদকে সামনে রেখে ট্রেন ও বাসটার্মিনালগুলোতে বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। প্রতিবারের মতো এবারো চরম টিকিট বাণিজ্য ও যাত্রী হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। টিকিট সংকটসহ নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরছেন যাত্রীরা। আসন্ন কোরবানির ঈদে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর একদিন আগে বৃহস্পতিবার থেকেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের চাপ বেড়েছে। তথ্যমতে, গত ঈদুল ফিতরে প্রায় এক কোটি মানুষ নাড়ির টানে ঢাকা ছেড়েছেন। এই ঈদেও দিন দিন যাত্রীদের চাপ বাড়ছে।
যাত্রী ভোগান্তি এড়াতে ঢাকার ছয়টি ও গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঈদের অগ্রিম ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। গত শুক্রবার ৫ জুলাইয়ের টিকিট, শনিবার ৬ জুলাইয়ের টিকিট, রবিবার ৭ জুলাইয়ের টিকিট দেয়া হয়েছে।
আজ সোমবার দেয়া হবে ৮ জুলাইয়ের টিকিট এবং মঙ্গলবার দেয়া হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট। অন্যদিকে, ঈদের ফেরত টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই। ঈদ শেষে ফিরতি ট্রেনের ক্ষেত্রে ১১ জুলাইয়ের টিকিট পাওয়া যাবে ৭ জুলাই, ১২ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট ৮ জুলাই, ১৩ জুলাইয়ের টিকিট ৯ জুলাই এবং ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকিট ১১ জুলাই পাওয়া যাবে।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে অগ্রিম টিকিট বিক্রি। এবার ঈদে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। রেল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, কমলাপুর শহরতলী প্লাটফরম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, এবার রাজধানী থেকে প্রতিদিনের জন্য ২৬ হাজার ৭১৩টি আসনের টিকিট বিক্রি করা হবে। রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, স্টেশনটির ১৬টি কাউন্টার থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কাউন্টার নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা রয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে অগ্রিম টিকিটের জন্য টিকিটপ্রত্যাশীরা লাইনে আছেন। টিকিটপ্রত্যাশীদের লাইন কাউন্টারের সামনে থেকে স্টেশনের বাইরে চলে গেছে। এসব টিকিটের ৫০ শতাংশ রেলস্টেশনের কাউন্টারে এবং ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করা হবে।
রেল সূত্র জানিয়েছে, এবার ঈদের টিকিটের ৫০ শতাংশ রেলস্টেশনের কাউন্টারে এবং ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করা হবে। রেলওয়ের এমন কথা থাকলেও বাস্তবে মিলছে ভিন্ন চিত্র। বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল আমার সংবাদকে জানান, রোববার আমি ৭ তারিখের টিকিট কেনার জন্য রেলওয়ে সার্ভারে প্রবেশ করি। তখন সকাল পৌনে ৮টা। তখনই দেখি কোনো সিট খালি নেই। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করলে সার্ভার ফেইল দেখায়।
তিনি আরও জানান, পরে বাসের টিকিটও শেষ হয়ে যাওয়ায় বিশেষ ব্যবস্থায় দ্বিগুণ দামে বগুড়াগামী এসআর পরিবহনের টিকিট সংগ্রহ করি। এ যেন টিকিট সিন্ডিকেটের মহোৎসব। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেশের সর্বত্র নৈরাজ্য চলছে।
রহমতুল্লাহর বরাত দিয়ে কাজল নামে এক ব্যক্তি আমার সংবাদকে জানান, ১ জুলাই টিকিটের জন্য কমলাপুর স্টেশনে যাই, কোনো টিকিট না পেয়ে পরের দিন অপেক্ষা করি কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। পরে রোববার লাইনে দাঁড়াতে পারি। তার সিরিয়াল ছিল ৩৬। তার সিরিয়াল আসার আগেই কাউন্টার থেকে বলা হলো টিকিট শেষ। সোহেল আর কাজলদের মতো শত শত মানুষ দিনের পর দিন সীমাহীন দুর্ভোগে পুড়ছেন। প্রতিদিন ২৭ হাজার টিকিট বিক্রি করার কথা থাকলেও যাত্রীরা পাচ্ছেন না টিকিট। প্রশ্ন থেকে যায়, কোথায় যায় এত টিকিট। সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছে পুরো টিকিট ব্যবস্থা। তাদের দৌরাত্ম্য এখনই টেনে ধরা উচিত।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানান, তবে ভোগান্তি এড়াতে অনেকে একদিন আগের টিকিটের জন্য এসেছেন। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ঘরমুখো মানুষের চাপ ততই বাড়ছে। অনেকে ভোগান্তি এড়াতে একদিন আগের টিকিট কাটতে এসেছে। ফলে সকাল থেকে ভিড় দেখা দিয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি দেখিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে হবে। কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে। প্রতিটি কেন্দ্রে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি করে কাউন্টার রয়েছে।
এছাড়া রেলসেবা মোবাইল অ্যাপ ও ইন্টারনেটে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। একজন যাত্রী একসাথে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবে। বিক্রি করা ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। স্পেশাল ট্রেনের কোনো টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না। শুধু স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হবে। এত নিয়ম থাকলেও একজন যাত্রী মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহের জন্য সকাল ৮টায় দেখেন বিভিন্ন শ্রেণির দুটি কোথাও তিনটি সিট ফাঁকা আছে। কিছুক্ষণ পর সার্ভারের সমস্যার কারণে আর টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি।
ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, কমলাপুর শহরতলী প্লাটফরম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও স্টেশনে পাওয়া যাবে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পাওয়া যাবে নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট, ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।
গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আমার সংবাদকে জানান, রেলওয়েতে সরকারের কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে না পারা সংশ্লিষ্টদের চরম ব্যর্থতা। তিনি টিকিট সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।