বদলে যাচ্ছে কাশ্মীরি নারীদের জীবন

আমার সংবাদ ডেস্ক  প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২২, ০১:০৯ এএম

বদলে যাচ্ছে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের নারীদের জীবন। আত্মনির্ভরশীল হতে এবং উদ্যোক্তা হতে হাতে কলমে শিক্ষা নিচ্ছেন তারা। সেটির বাস্তবায়নেও কঠোর পরিশ্রম করছেন। এর ফলে কাশ্মীরের গ্রামীণ এলাকার নারীদের স্বপ্নের ডানা মেলছে। তাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে ভারত সরকার চালু করেছে দ্য সেলফ হেল্প গ্রুপস (এসএইচজি’স)। 

জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরের পর এমন কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এই বছরের শেষ নাগাদ ১১ হাজার নতুন এসএইচজি’স গঠনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে ৫৬ হাজারের বেশি এসএইচজি রয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অন্তত পাঁচ লাখ নারী। 

গত বছর জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেছিলেন যে, সুবিধাবঞ্চিত অংশগুলোর উন্নয়নমূলক চাহিদাগুলো মোকাবিলায় সমবায় আন্দোলনে নবজাগরণ প্রত্যক্ষ করছে কাশ্মীর। এর প্রধান সহায়তায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সহযোগিতা মন্ত্রী অমিত শাহ।

জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল হওয়ার পর এখানকার বাসিন্দারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে আরও বেশি পরিশ্রম করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি-বিপণন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ব্র্যান্ডিং, বীজ সরবরাহ এবং দুগ্ধ ও হস্তশিল্পে অন্যান্য উদ্ভাবনী কার্যকলাপে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাসিন্দারাও কঠোর শ্রম দিয়ে চলছেন। তাদের এই পরিশ্রমের আবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন নারীরাও। 

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, জম্মু কাশ্মীরের প্রায় ৫৫ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতের নারীদের এসএইচজির আওতায় আনা হয়েছে এবং তাদের আর্থিকভাবে স্বাধীন করার উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টা চলছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে সেখানে কাজ করা হচ্ছে বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে এসএইচজি ধারণাকে জনপ্রিয় করার জন্য ভারত সরকার অন্র্লপ্রদেশ, কেরালা এবং বিহারের এই প্রকল্পের নারীদের কাজে লাগাচ্ছে। তারা গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন এবং তাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগদানের সুবিধাগুলো ব্যাখ্যা করছেন। 

এই বছরের শেষ নাগাদ শতভাগ এলাকার নারীদের যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দেশটির সরকার। দূর-দূরান্তের গ্রামীণ এলাকায় নারীরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির চাকা সচল রাখছে। এটি ভারতে সমাজে বৈষম্য, বৈষম্য কমাতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে।

এতে সফল হওয়ার অনেক গল্পও রয়েছে। তাদেরই একজন উধমপুরের চেনানিন জেলার বালি গ্রামের কৌশলিয়া দেবী। বেকার স্বামীর সংসারে নানা টানাপড়েন লেগেই থাকত। শুরুতে এই সমবায়ে অল্পকিছু টাকা জমিয়ে আরও কিছু ঋণ নিয়ে দুধের ব্যবসা শুরু করেন। শুরুর আট বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন তিনি। 

তার মধ্যে রয়েছে সেলাই ও ব্যাগ তৈরির ব্যবসা। শুরুতে তার মাসিক আয় আট হাজার রুপি হলেও এখন সেটি ৫০ হাজারে ছুঁয়েছে। তার ছেলেমেয়েরা ভালো স্কুলে পড়ালেখা করছে এবং তাদের এখন সুখী পরিবার। তিনি বলেন, ‘আগে আমার গ্রামের লোকেরা বলত মহিলারা কিছু করতে পারে না। কিন্তু আমার সাফল্যের পর একই লোকেরা আমার উদাহরণ দিচ্ছে।’

উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার রামহাল এলাকার আতিকা ওয়ানি স্নাতকোত্তর শেষ করার পর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করেছিলেন এবং একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জীবনে বড় কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থেকে তিনি এসএইচজির সাথে যুক্ত হন। শুরুতে তাকে ১০ হাজার রুপি দেয়া হয়েছিল। সেটি পরে বেড়ে ২০ হাজার হয়। কাজের গতি ভালো হওয়ায় প্রায় দেড় লাখ টাকা ফান্ড পান তিনি। তিনি ২০১৯ সালে মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী নিয়ে ইনস্টিটিউট শুরু করেছিলেন। এখন সেখানে শত শত শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করছে। 

আতিকা শ্রীনগর-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা শুধু একটি শালীন জীবনযাপনই করছি না, আমরা চাকরিপ্রার্থীদের পরিবর্তে চাকরিদাতা হতে পেরে গর্বিত। আমাদের প্রতিষ্ঠানে এখনও পর্যন্ত পনের জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছি।’ উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার সিংপোরাইনের জান্না বেগমও এখন মাসে ২৫ হাজার রুপি আয় করেন। তিনি তার সংসার ও জীবনের পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে আবেগী হয়ে পড়েন।

কাশ্মীরের নারীরা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এতদিন বেশ পিছিয়ে ছিল। তবে তাদের ইচ্ছা ও চেষ্টায় এখন তার পরিবর্তন ঘটছে। পরিবারের ও নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে অবদান রাখছেন। ডানা মেলে ওড়ার স্বপ্ন বাস্তব হচ্ছে তাদের।