কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে প্লট কিনে নিঃস্ব ১০ পরিবার

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২২, ০৯:৩৩ এএম
দখলকৃত জমি।

হাসান ইমাম রিপন। রাজধানীর চাঁদনী চক মার্কেটের কাপড়ের দোকানি। তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে অভাবের সংসার রিপনের। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। ঢাকায় স্থায়ীভাবে থাকার কোনো জায়গাও নেই। তবে স্বপ্ন আছে। 

সেই স্বপ্ন থেকেই ২০১০ সালে ২০ বছরের জমানো সঞ্চয় দিয়ে মোহাম্মদপুর কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের ৫ নম্বর রোডের ৭/এ ব্লকে চার কাঠার প্লট কেনেন রিপন। কয়েক কিস্তিতে ৯৬ লাখ টাকা পরিশোধ করে ২০১২ সালে জমির দলিলও সম্পন্ন হয়। তবে হাউজিং কোম্পানির প্রতারণার জালে আটকা পড়েছে রিপনের স্বপ্ন। 

রেজিস্ট্রির পরে দীর্ঘ ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও জায়গা বুঝে পাননি তিনি। জমি বুঝে নিতে বছরের পর বছর কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের মালিক মাইনুদ্দিন চৌধুরী রতনের পেছনে ঘুরছেন। 

তবে আজ কাল পরশু করে প্রায় এক যুগ শেষ হলেও মালিক রতনের অজুহাতের শেষ হয়নি। উল্টো গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। ফলে ঢাকায় জায়গা কেনার স্বপ্ন এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিকার পেতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি।

শুধু রিপনই নন, প্রতারিত হয়েছেন আরো অনেকে। ওই ব্লকের ২৫ কাঠা জমি বাবুল আক্তার, শেখ ওলিয়ার রহমান, শেখ ফজলুল হক খোকা, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ সাত্তার, আনিসুর রহমান, সিরাজুল ইসলামসহ ১০ জন লোকের কাছে বিক্রি করেছেন কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের কর্ণধার রতন চৌধুরী।

কিন্তু কাউকেই জমির মালিকানা বুঝিয়ে দেননি তিনি। ফলে জমানো সঞ্চয় হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন রিপনের মতো আরো ১০ পরিবার। শেষ সম্বল হারিয়ে কেউ কেউ চরম মানবেতর জীবন পার করছেন। যেন দেখার কেউ নেই। 

এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি,কাউন্সিলর এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছে ধরনা ধরেও প্রতিকার মেলেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধেই এতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে প্লট বুঝিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিলেও বর্তমানে দখল চাইলেই নানা ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। 

তারা বলেন, ওই জায়গায় গেলে লাশ হয়ে যাবেন। এই দায় আমি নিতে পারব না, এমন ভয় দেখান রতন। তাই প্রাণ বাঁচাতে দখলে যেতে সাহস পাচ্ছে না কেউই।

এদিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের ৭/এ প্লটের প্রায় ২৫ কাঠা জমির উপর বস্তি রয়েছে। সেখানে প্রায় ১০টি উদ্বাস্তু পরিবার বসবাস করে। ভেতরে রিকশর গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। যার দেকভাল করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহ জালাল লুলু। ওই গ্যারেজ থেকে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা ভাড়া ওঠে। এলাকাবসীর জানান, ওই জায়গা নিয়ে অনেকদিন ধরেই ত্রিমুখী বিরোধ চলছে। এক পক্ষ বস্তি বসিয়ে দিয়েছে, আরেকপক্ষ বস্তি সরিয়ে ফ্লাট নির্মাণ করতে চাচ্ছে। 

তারা বলছেন, শুনেছি ওই জায়গা ১০ বছর আগে বিক্রি হয়ে গেছে। যারা কিনেছে তারাও মাঝে মধ্যে আসেন। তবে দখল নিতে পারছেন না। জমির মালিক রতন চৌধুরী এ জায়গায় খুব বেশি আসেন না। কিন্তু তিনি বস্তির লোকজনকে এই জায়গায় বসবাস করতে বলেছেন। যারা জায়গাটি কিনেছে সেই ক্রেতারা প্রতি মাসে জমি দেখতে এলেও বস্তি উচ্ছেদ করার সাহস পাচ্ছে না। কারণ স্থানীয় এক নেতা ওই জমি দেখভাল করেন। তাকে এলাকার সবাই ভয় পান এমনটিই বলেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে, ভুক্তভোগী ক্রেতারা জায়গার দখল নিতে গেলে এতে বাঁধা দেন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহ জালাল লুলু। 

ওই জায়গা নিজের দাবি করে নিয়মিত নিজস্ব বাহিনী নিয়ে শোডাউন দেন। জমির মালিকানা দাবি করলেও কোনো কাগজপত্র নেই লুলুর কাছে। বৈধ কাগপত্র ছাড়াই বস্তি বসিয়ে প্রায় ২৫ কাঠার বিক্রিত প্লটটি দখল করে রেখেছেন তিনি। বসিয়েছেন রিকশার গ্যারেজ। এ নিয়ে ভয়ে মুখ খোলেন না কেউ। 

তবে এ বিষয়ে কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের মালিক রতন চৌধুরীর নিশ্চুপ থাকা সন্দেহজনক দেখছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, প্লট বুঝে না দিতেই রতন চৌধুরী স্থানীয় প্রভাবশালী লুলুকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এবং জায়গা দখল করে রেখেছেন। যাতে আমরা ওই জমির আশা ছেড়ে দেই। সাড়ে ২৫ কাঠা জায়গায় ক্রয়মূল্য ছিল আট কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারমূল্য বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা হওয়ায় অধিক টাকার লোভ সামলাতে পারছে না রতন চৌধুরী। তাই এমন বাহানা করছেন এবং লুলুকে দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
  
দখলের বিষয়ে শাহ জালাল লুলু বলেন, তিনি জায়গা দখল করেননি। এটা তার নিজস্ব জায়গা। এ নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। কোর্ট ওই জমির ওপর ইনজাংশন জারি করেছে। আমি ওই জায়গা ভাড়া দিয়েছি। 

হাউজিং তাদের কাছে কিভাবে প্লট বিক্রি করল জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সেটা তারা হাউজিংয়ের সাথে বুঝুক। হাউজিং তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেয় না কেন? 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের হাউজিংয়ের মালিকের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন লুলু। 

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে  মাইনুদ্দিন চৌধুরী রতনকে ফোন দেয়া হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জেনে কথা বলার অস্বীকৃতি জানিয়ে ফোন রেখে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি এ থানায় নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে আমার কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। যদি অভিযোগ আসে তাহলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।