পুরে ভাড়া নেয়া বাসায় জালটাকা বানানোর কারখানা গড়ে তোলেন মো. হুমায়ুন কবির। তিনি পুলিশের একজন চাকরিচ্যুত সদস্য। বাসায় তৈরি জালটাকা বিভিন্ন এলাকায় এজেন্টদের কাছে সাপ্লাই করতেন তিনি।
ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকেও জমা দেয়া হতো এসব টাকা। গ্রেপ্তার হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশকে এসব তথ্য জানান চক্রের মূলহোতা হুমায়ুন কবির। এর পরিপ্রেক্ষিতে যারা ব্যাংকে টাকা লেনদেন করেন তাদের মেশিনে যাচাই-বাছাই করে টাকা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছে ডিবি।
বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জালটাকা ও জালটাকা তৈরির সরঞ্জামসহ হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম। গ
ত বুধবার রাতে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ১৬ লাখ জালটাকা, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি লেমিনেশন মেশিন, একটি পেস্টিং গামের কৌটা, তিনটি টাকা তৈরির ডাইস, দুই বান্ডেল ফয়েল পেপার, দুই প্যাকেট টাকা তৈরির কাগজ ও দুটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, এই চক্রটি ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে। মূলত ঈদ ও অন্যান্য উৎসবের আগে ব্যাংকে যখন অতিরিক্ত ভিড় হতো সে সময় ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মূলত জাল টাকাগুলো ব্যাংকে জমা দিতেন।
ব্যাংকের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কতদিন ধরে এই চক্রটি জালটাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসছিল, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞেস করি, এই জাল টাকাগুলো কোথায় কোথায় দেন। তিনি জানান, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকায় চক্রের এজেন্টদের কাছে জাল টাকাগুলো সাপ্লাই করতেন। আবার ব্যাংকে যখন প্রচুর ভিড় হতো তখন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালটাকা ব্যাংকে জমা দিতেন।
তবে তারা কোন কোন ব্যাংকে জালটাকা দিয়েছেন তা জানাননি ডিবিপ্রধান। হুমায়ুন কবির এক সময় পুলিশে চাকরি করতেন।
এই অবৈধ কাজে তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন কি-না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, কোনো একসময় তিনি পুলিশের চাকরি করতেন। এখন তিনি জালটাকা তৈরি করছেন। তাই বলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ছাড় দিচ্ছে না।
আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। অবৈধভাবে কেউ বড়লোক হতে চাইলে তাকেও আমরা আইনের আওতায় আনব। তিনি আরও বলেন, তারা মূলত ঈদকে টার্গেট করে এই জালটাকা তৈরি করে থাকে।
তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি আসন্ন পূজাকে কেন্দ্র করে মাসে ৬০ লাখ টাকা রোলিং করার টার্গেটে এখন থেকেই তারা কাজ শুরু করেছিল। এই চক্রের অন্যান্য সহযোগীরা পলাতক রয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে চারটি জালটাকার মামলা রয়েছে।