কুড়িগ্রামে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পিছিয়ে নেই গ্রামীণ নারীরাও। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তারা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে নারীরা হাঁস পালন করে পরিবারে সচ্ছলতা আনছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, বাড়িতে হাঁস পালন করছেন সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের সুলতানা পারভীন। তার স্বামী আজিজ মিয়া ঢাকায় একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। পরিবারে স্বামীর একমাত্র উপার্জনে কোনোরকমে সংসার চলে। বৃদ্ধ শ্বশুর ও এক মেয়ের খরচ মেটাতে ৫০টি হাঁসের বাচ্চা ঘরে তোলেন সুলতানা। সেই বাচ্চাগুলোকে বড় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ডিম দেয়া হাঁসের খামারের সংখ্যা প্রায় ৫৩৮টি। আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারে প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা ২০ টাকা ও প্রতিটি ডিম সাড়ে সাত টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বাড়িতে হাঁস পালন করেন এমন নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা জেলা শহর থেকে ৩০ টাকা দরে কিনে নিয়ে আসেন। বাচ্চাগুলোর বাসস্থানের জন্য বাঁশের ঘর কিংবা ঘরের কোণে কুটির তৈরি করেন। বাচ্চাগুলো দ্রুত বেড়ে উঠতে বাড়ির চারদিকে খোলা মাঠ ও পুকুরে ছেড়ে দেন।
এভাবেই অল্প ব্যয়ে হাঁসগুলো পরিপক্ব করেন তারা। তাদের এসব হাঁস পরিপক্ব করতে বাড়তি খরচ করতে হয় না। তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পালন করে প্রতিটি হাঁস ৪৫০-৫০০ টাকা বিক্রি করেন তারা।
মিলপাড়া গ্রামের সাজিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, আমার স্বামী ব্যবসা করেন, পাশাপাশি আমাকে ১০০ হাঁসের বাচ্চা এনে দিয়েছেন। এই হাঁসগুলো বড় করতে তিন মাসের মতো সময় লাগে। আমার ১০০ হাঁস পালনে সব মিলিয়ে ১২-১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার হাঁস বিক্রি করেছি। আরও ১০টি হাঁস বাড়িতে আছে। হাঁস পালনে তুলনামূলকভাবে খরচ কম, লাভ ভালো। হাঁস পালন করলে কোনো পরিবারে অভাব থাকার কথা নয়।
হাঁস-মুরগি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এখান থেকে যেসব খামারি হাঁসের বাচ্চা নেন, তারা সিডিউল দিয়ে নেন। যে সময়টা চাহিদা বেশি, ঠিক সেই সময়ে মাসে সাত-আট হাজার বাচ্চা উৎপাদন হয় এখানে। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও পাঠানো হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, উন্মুক্ত নিচু জমি ও জলাশয়ে হাঁস পালন করলে বাড়তি খাবার লাগে না। এ কারণেই সহজেই হাঁস পালন করা যায়। হাঁসের বাচ্চা অল্প কিছু দিনের মধ্যে বড় হাঁসে পরিণত হয়। ফলে দামও ভালো পাওয়া যায়। আমরা খামারিদের সরকারিভাবে ভ্যাক্সিন প্রদান করি ও বিভিন্ন রোগের বিষয়ে পরামর্শ দেই। জেলায় ডিম দেয়া হাঁসের খামারের সংখ্যা প্রায় ৫৩৮টি। এই খামার ছাড়াও অনেকে বছরে দুই-তিনবার হাঁস পালন করেন এবং বিক্রিও করেন।