বাংলাদেশ ছাত্রলীগে চলছে পদোন্নতির ভেলকিবাজি। অনেকেই নিজেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বা সহ-সম্পাদক দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) পোস্ট দিচ্ছেন। পদ-পদবি দাবি করা অধিকাংশ নেতার কাছেই নেই পদায়নের জন্য ইস্যু করা চিঠি বা সঠিক তথ্য-প্রমাণ।
এরফলে বিষয়টি নিয়ে বইছে নিন্দার ঝড়। ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা। তাদের দাবি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের ইতিহাস ঐতিহ্য ম্লানের অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি তাদের।
সূত্রে জানা যায়, নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য পদে পদায়ন করার দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় নেত্রকোনা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে রুমিত আয়াত সাদিয়াকে গতকাল অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এর আগে তিনি তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য মনোনীত করায় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তার ওই পোস্ট দেয়ার পর থেকে পদায়ন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। অভিযোগ ওঠে, তাকে পদায়ন করেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করা এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় তাকে জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে পদায়নের চিঠি পেয়েছেন দাবি করে রুমিত আয়াত সাদিয়া আমার সংবাদকে বলেন, আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে মেম্বার করা হয়েছে। আমি চিঠি পেয়েছি। কিন্তু এখন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমি সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলব।
পদায়নের চিঠি আপনি পেয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি গ্রামের বাড়িতে আছি। আমার পদায়নের চিঠি আমার বান্ধবীর কাছে। রুমিত আয়াত সাদিয়া আরও বলেন, ফেসবুকে দেখেছি, আমাকে জেলা ছাত্রলীগ অব্যাহতি দিয়েছে। কিন্তু এখনও আমাকে বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগ থেকে জানানো হয়নি। ভুয়া চিঠি তৈরি করে নিজেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সম্পাদক হিসেবে দাবি করেছেন মো. নুুরনবী হুসেন নিলয়।
অথচ তাকে ছাত্রলীগ থেকে কোনো ধরনের পদায়ন করা হয়নি। কিন্তু তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে নিজেকে সহ-সম্পা
দক দাবি করছেন। তাতে কৃতজ্ঞতা জানান ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। জানতে চাইলে মো. নুুরনবী হুসেন নিলয় আমার সংবাদকে বলেন, আপনার (সাংবাদিক) কাছে অভিযোগ থাকতেই পারে। অভিযোগ থাকলে আপনি সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাথে কথা বলেন। পদোন্নতির চিঠি পেয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
সংগঠনের পক্ষে থেকে কোনো চিঠি না পেলেও নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দাবি করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন লাল গোস্বামী অর্জুন। অভিযোগ রয়েছে, তাকে যে প্যাডের মাধ্যমে সদস্য মনোনীত করা হয়েছে, সে প্যাড সুপার এডিড করা। তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সম্পাদক হিসেবে দাবি তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন কটিয়াদির মশায়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম। খোঁজখবর নিয়ে তার পদায়নের বিষয়টিরও সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আলিমুল হক আমার সংবাদকে বলেন, দীর্ঘদিন চেষ্টার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখার প্রার্থীদের এবং বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রলীগের পরীক্ষিতদের পদায়ন করা হয়েছে। যাদের পদায়ন করা হয়েছে, ইতোমধ্যে তাদের চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম, ছাত্রলীগের ভুয়া প্যাড তৈরি করে ইচ্ছেমতো পদ-পদবি বসিয়ে নিচ্ছে অনেকেই। আসলে তাদের পদায়ন করা হয়নি। তারা চিঠিও পাননি। কিন্তু পদের দাবি করছেন।
এরা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট ও বিতর্কিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করছেন। এদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে একজনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, যারা যোগ্য ও পরিশ্রমী, যারা কেন্দ্রীয় কমিটি ও হল শাখায় পদবঞ্চিত হয়েছেন, দীর্ঘদিন যাদের পদায়ন করা হয়নি, শুধুমাত্র তাদের পদায়ন করা হয়। কিন্তু এবার কিভাবে পদায়ন করা হয়েছে, কাদের পদায়ন করা হয়েছে, পদায়নকৃতদের যোগ্যতা কি, কতজনকে পদায়ন করা হয়েছে— এসব কোনো তথ্য কারো কাছে নেই। ভুয়া প্যাড হাস্যরস সৃষ্টি করেছে দাবি করে প্রদীপ চৌধুরী আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনভাবে সমালোচনা হচ্ছে, তা খুবই বিব্রতকর।
এমন কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সঠিক প্রক্রিয়ায় পদায়ন না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, এবার যেভাবে পদায়ন করা হয়েছে, তা সঠিকভাবে করা হয়নি। ইউনিয়ন ও উপজেলা কর্মীদের কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়েছে। জয়-বাংলা স্লোগান দেয়নি, তাদেরও পদায়ন করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ আমার সংবাদকে বলেন, বেদনার মাস আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর মাস আগস্ট। একদিকে কষ্টের আগস্ট, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিলামে তুলেছে শীর্ষ দুই নেতা। সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে ইচ্ছেমতো। তারা শোকের মাসও মানছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের একক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংগঠন মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও দাপটের সাথে কার্যক্রম করছেন তারা। জয়-লেখকের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে অনিয়ম, আর্থিক লেনদেন, ভিন্নপন্থিদের পদায়নসহ বেশকিছু অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় সমন্বয় করেন না কেন্দ্রীয় সংসদের কোনো নেতার সাথে।
এর মধ্যে হঠাৎ বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের তৎপরতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে বঞ্চিতদের পদায়ন বিষয়টি ফের সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আগস্ট মাসের প্রথম প্রহরেও তাদের কমিটি ঘোষণাগুলো ভালোভাবে নেয়নি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলা ও কলেজ শাখায় কমিটি ঘোষণা হওয়ায় শোকের মাসেও শুভেচ্ছা ছিল তিক্ত-বিরক্ত।
তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়নের বিষয়টি। অনেকে ভুয়া প্যাড তৈরি করে নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সহ-সম্পাদক দাবি করছে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) বইছে সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ প্রতিবাদ করে ফাঁকা প্যাড নিজ ফেসবুকে দিচ্ছে। অথচ বেদনার মাস আগস্ট চলছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর মাস এ আগস্ট। একদিকে কষ্টের আগস্ট।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিলামে তুলেছে শীর্ষ দুই নেতা জয়-লেখক। সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে ইচ্ছেমতো। তারা শোকের মাসও মানছে না। এটা খুবই দুঃখজনক বলে মনে করছেন খোদ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা।
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ আমার সংবাদকে বলেন, আগস্ট মাসেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কাণ্ড-জ্ঞানহীন কাজ করেছে। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগের আত্মমর্যাদা আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।