গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আগস্ট মাসের পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম। প্রথম দিনে বেশিরভাগ এলাকায় সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনেছেন ফ্যামিলি কার্ডধারীরা। তবে কিছু কিছু এলাকার ডিলাররা বরাদ্দের পণ্য না পাওয়ায় খালি হাতেই ফিরেছেন অনেকে।
সরেজমিন বাড্ডা, রামপুরা, হাজিপাড়া, মালিবাগ ও সেগুনবাগিচা এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ সময় বাড্ডা ও সেগুনবাগিচা এলাকায় দুটি ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে মানুষকে লাইন দিয়ে পণ্য কিনতে দেখা গেছে। সেগুনবাগিচার ডিলার এম অ্যান্ড এন ট্রেডার্সের কর্ণধার সোলাইমান হোসেন বলেন, গত সোমবার এক হাজার ক্রেতার জন্য বরাদ্দ পেয়েছি।
আজ সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ২২০ জন পণ্য কিনেছেন। বিকেলের মধ্যে অর্ধেকের মতো বিক্রি হবে। কাল শেষ হবে বলে আশা করছি। সেগুনবাগিচায় এই দফায় কার্ডধারীরা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন।
প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬৫ টাকা ও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এখানে।
জামাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, এ কার্ড পেয়ে সুবিধা হয়েছে। আগে ট্রাকে মানুষের হুড়াহুড়িতে পণ্য নিতে পারতাম না। এখন সেটা অনায়াসে নিতে পারছি। একই অবস্থা সাতারকুল, বাড্ডা এলাকায়ও। সেখানে শতাধিক কার্ডধারী লাইন দিয়ে পণ্য কিনেছেন।
তবে ব্যতিক্রমও ছিল কিছু এলাকায়। হাজিপাড়া-বউবাজার এলাকার ডিলার বউবাজার জেনারেল স্টোরে দুপুরে কোনো ক্রেতা ছিল না। সেখানে সকাল থেকে মাত্র একজন কার্ডধারী পণ্য কিনেছেন। পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন ১৫ থেকে ২০ জন কার্ডধারী।
জানতে চাইলে সেখানে ডিলার প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন বলেন, গত ঈদে যে পণ্য বরাদ্দ পেয়েছি, সেটি বিক্রি শেষ করতে পারিনি। এখনও ১৫টি কার্ডের পণ্য অবশিষ্ট রয়েছে। সেজন্য বরাদ্দ পাইনি। তবে আজ-কালের মধ্যে নতুন বরাদ্দের পণ্য আসেতে পারে। তখন সবাই পণ্য পাবে।
এ ডিলার আরও জানান, যেসব কার্ডধারী এসেছে, তারা গত বরাদ্দের পণ্য নিয়েছে। নতুন বরাদ্দ শুরু হলেও পণ্য না পাওয়ার কারণে তাদের দেয়া যাচ্ছে না।
সেখানের কার্ডধারী ক্রেতা আজিজা বেগম বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে এসে পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি। গত বরাদ্দে পণ্য পেয়েছি। এখন ডিলার পণ্য না তোলার কারণে আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে। বরাদ্দের পণ্য পাননি এমন আরেক প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড মালিবাগ বাজারের জি কে ট্রেডার্স।সেখানে ৪৩০ নম্বর দোকান থেকে এর আগেও পণ্য কিনেছেন কার্ডধারীরা। কিন্তু বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে গতকাল দোকানটি বন্ধ ছিল।
সেখানের ডিলার মনির হোসেন মুঠোফোনে জানান, বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে দোকান বন্ধ রয়েছে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির বলেন, ঢাকা সিটিতে সোমবার ৬৪ জন ডিলারকে পণ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার নিয়েছেন ৬১ জন ডিলার। যারা বরাদ্দ পেয়েছে, তাদের দোকান বন্ধ থাকার কথা নয়।
বউবাজার জেনারেল স্টোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ডিলার আজ ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) নিয়েছে। পণ্য এখনো নিয়ে যায়নি।
জিকে ট্রেডার্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে। সেখানে তারা পণ্য বিক্রি করছে। মালিবাগে আরেকটি ডিলার তার বরাদ্দের পণ্য দিচ্ছেন। শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে সরকারি সংস্থা টিসিবি এবার মাসের শুরু থেকেই সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রির এ কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সোমবার থেকে সারা দেশের এক কোটি কার্ডধারী পরিবারের জন্য টিসিবির ভর্তুকি মূল্যের পণ্য ডিলারদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তবে আগের মতো এখন ট্রাকে নয়, ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের শুধু নির্দিষ্ট পরিবেশকের দোকান থেকেই শুধু ভোক্তারা এই পণ্য নিতে পারবেন। সারা দেশে এই পণ্য এক দিনেই বিক্রি শুরু হবে না। সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিবেশকদের তালিকা করে নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী পণ্য দিচ্ছে টিসিবি। সেজন্য আগে পণ্য বিতরণে যে বিশৃঙ্খলা হতো, এতে তা অনেকটা কমে এসেছে।
তবে কোন এলাকায় কখন কোন ডিলার পণ্য পাচ্ছে, সেটা জানতে সমস্যা হচ্ছে কার্ডধারীদের। সে কারণেও অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেক এলাকায় এখনো কার্ড হাতে পাননি আবেদনকারীরা। সেজন্য পণ্য নিতে পারছেন না তারা।
এর আগে, গত জুন মাসের ২২ তারিখ থেকে পণ্য বিক্রির সময়ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কার্ড বিতরণ শেষ করা যায়নি। অথচ ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের জন্য তখন প্রায় দুই মাস বিরতির পর টিসিবি ভর্তুকি মূল্যের পণ্য দেয়া শুরু করেছিল। মাঝে জুলাইয়ের একমাস বাদে আবার আগস্টে এ কার্যক্রম শুরু হলো।