ভেতরে ভেতরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনে ছোট-বড় দলের সাথে প্রাথমিক সংলাপ শেষ করেছে দলটি। তাদের টার্গেট সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা।
তবে আন্দোলনের নামে বিএনপি দেশের অভ্যন্তরে কি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে সে সব বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে আওয়ামী লীগ।
দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশে সহনশীল থাকবে ক্ষমতাসীনরা। তবে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ।
সূত্রে জানা যায়, আগামী বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ শেষ করেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যদিও বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল নতুন কমিশনের কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করেনি। তাদের দাবি, বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করার ক্ষেত্রে কমিশনের তেমন কিছু করার নেই। দলীয় সরকারের ইচ্ছামতোই হবে ভোট।
তাই তাদের কাছে এই মুহূর্তে ইসির কর্মকাণ্ড মুখ্য নয়। তাদের একমাত্র লক্ষ্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের না আসার ঘোষণা দিলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনে ছোট-বড় ২২টি দলের সাথে প্রাথমিক সংলাপ শেষ করেছে দলটি।
বিশেষ করে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, সংলাপ শেষে সে ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছে বিএনপির সংলাপে যোগ দেয়া ছোট দলগুলো। তাদের দাবি, অত্যন্ত চতুরতার সাথে এবং সচেতনভাবে বাংলাদেশের সব অর্জন, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সাম্য ও সামাজিক মূল্যবোধ, ন্যায় বিচারের অধিকার ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফলে এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যাবে না।
একদিকে যেমন সরকারবিরোধী ছোট বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করছে বিএনপি, অন্যদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরব হতে শুরু করেছে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে গত সপ্তাহে পুলিশের গুলিতে ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে বিএনপি। দলটির টার্গেট দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানো। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ধারাবাহিক রাজনৈতিক কার্যক্রম নজরে রাখছে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যেন সরকারবিরোধী বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে সে সব বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
তবে বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশ করে তাহলে তাদের কার্যক্রমে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা দেয়া হবে না। মূলত আওয়ামী লীগ চায়, অপরাজনীতি ও সরকারের সমালোচনা বাদ দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।
আ.লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এজন্য তাদের বিষয়ে সহনশীল হওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এরফলে বিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিংয়ে অনেকটাই সহনশীল থাকবে ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু আন্দোলনের নামে হামলা, নৈরাজ্য, মানুষের জানমালের ক্ষতি, লাশের রাজনীতি, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা তথা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারাই করবে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে দলটি। যদিও তারা মনে করেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ। নির্বাচনে ব্যর্থ। তাদের আন্দোলনের ডাক আষাঢ়ের তর্জন-গর্জন। যারা অফিসের বাইরে এসে কিছু করে না। দেখি না আন্দোলন করে কতদূর যায়।
যদিও বিএনপি আন্দোলনের নামে সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে কি-না সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীনরা। সূত্রে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংবিধানের একচুল বাইরে যাবে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে, সরকার সহায়তা করবে মাত্র।
এদিকে নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কোনো প্রভাব যেন না থাকে সে বিষয়েও কৌশলী হবে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে সংবিধানের মধ্যে থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে যত ধরনের সুবিধা দেয়া যায় বা তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার সুযোগ আছে তা মানা হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি মানবে না আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করুক, গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করুক, সভা-সমাবেশ করুক, মিছিল-মিটিং করুক তাতে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই বাধা দেবে না। সব রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার অধিকার আছে।
কিন্তু কেউ যদি আন্দোলনের নামে সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী ষড়যন্ত্র করে, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানুষের জানমালের শঙ্কা তৈরি করে— তাহলে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ।